ইউপি নির্বাচনে আ. লীগের মনোনয়ন, দেড় শর বেশি প্রার্থী বদলের চাপ

ইউপি নির্বাচনে আ. লীগের মনোনয়ন, দেড় শর বেশি প্রার্থী বদলের চাপ

অনলাইন ডেস্ক

আসন্ন স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদের দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ছে। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে সাত বিভাগের অন্তত দেড় শতাধিক ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দল মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করা হয়েছে। বাকি একটি বিভাগে দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এমন আভাস দিয়েছে।

দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১১ নভেম্বর ৮৪৮ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হবে। গত সোমবার (১১ অক্টোবর) পর্যন্ত সাত বিভাগের ৬৮৩টি ইউনিয়নে প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল রাতে চট্টগ্রাম বিভাগের ১৬৫টি ইউনিয়নে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়।

এর মধ্য দিয়ে এই ধাপের সব ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থী চূড়ান্ত করল দলটি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০ অক্টোবর থেকে তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই করতে আবারও মনোনয়ন বোর্ডের সভা শুরু হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, ‘তৃতীয় ধাপে এক হাজারেরও বেশি প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হবে। ’

গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভা হয়। সভা সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে না থাকলেও আওয়ামী লীগের যেন বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকে সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে বলেছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ-বিক্ষোভ যাই থাকুক সবাইকে নৌকার পক্ষে কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।  

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় এবং আট বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছে আবেদন জমা পড়ছে। গতকাল পর্যন্ত দেড় শতাধিক ইউনিয়নে মনোনীতদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে তাঁদের পরিবর্তনের জন্য আবেদন করা হয়েছে।

মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয় গত ৮ অক্টোবর। এর আগে থেকেই দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দলের তৃণমূলে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় কেন্দ্রে অভিযোগ পড়তে শুরু করে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘বলতে পারেন পাইকারি হারে আওয়ামী লীগের দপ্তরে অভিযোগ আসছে। হয়তো এক ইউনিয়নে আটজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন; যে সাতজন মনোনয়ন পাননি, তাঁরা সবাই পৃথকভাবে দপ্তরে অভিযোগ নিয়ে আসছেন। এসব অভিযোগের মধ্যে বেশির ভাগেরই কোনো ভিত্তি নেই। প্রতিপক্ষকে নাজেহাল করতে অভিযোগ দায়ের হচ্ছে। কেউ কেউ স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া অভিযোগও দিচ্ছেন। ’

কেন্দ্রে অভিযোগ জমা দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছেন না তৃণমূল আওয়ামী লীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটেছে। দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন অনেকে।

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আলী আমজাদ তালুকদার এবার দলের মনোনয়ন পাননি। তিনি আবার প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। জানতে চাইলে আলী আমজাদ তালুকদার বলেন, ‘যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাঁর কোনো জনপ্রিয়তা নেই। স্থানীয় জনগণ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাঁর পক্ষে নেই। ’

জানা গেছে, আজমিরীগঞ্জের জলসুখা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ফয়েজ আহমেদ এবং সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্বাধীন মিয়াও এবার দলের মনোনয়ন পাননি। তাঁরা দুজনেই নির্বাচন করবেন।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন দলের ইউনিয়ন শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং একাধিকবার নির্বাচিত ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ মুকুল। এখানে আবার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যান রাশেদুল হাসানকে।

রউফ বলেন, ‘আমরা প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য কেন্দ্রে আবেদন করেছি। যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তাঁকে জনগণ মেনে নিচ্ছে না। তিনি এর আগে নৌকা নিয়ে নির্বাচিত হয়ে নেতাকর্মীদের দেওয়া কোনো প্রতিশ্রুতি পূরণ করেননি। তাই এবার মনোনয়ন পরিবর্তন না হলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে। ’

নেত্রকোনার হালুয়াঘাট উপজেলার গাজিরভিটা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন এবার আর মনোনয়ন পাননি। কিন্তু তিনি নির্বাচন করবেন। একই উপজেলার নড়াইল ইউনিয়নের দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন মানিক।

বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ : সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে আজ বুধবার বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। বিকেল ৩টায় স্থানীয় শালুয়াভিটা হাটে এ কর্মসূচি পালিত হবে। খোকশাবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন, সাবেক সভাপতি আব্দুল খালেক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ মুকুল প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য কেন্দ্রে আবেদন করেছেন।

গত রবিবার এক সংবাদ সম্মেলন থেকে নাটোর সদর উপজেলার বড় হরিশপুর ইউনিয়নে ওসমান গণি ভূঁইয়ার দলীয় মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানানো হয়। নাটোর শহরের একটি রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিম রেজা, সাধারণ সম্পাদক আছলামুর রহমান এবং ৯ ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে ১১ দফা দাবি জানান। প্রার্থী পরিবর্তন না হলে দল থেকে পদত্যাগেরও ঘোষণা দেন তাঁরা।

জেলার বড়াইগ্রামে চান্দাই ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি বর্তমান চেয়ারম্যান ও দলের ইউনিয়ন শাখার সভাপতি আনিছুর রহমান। মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে তাঁর নেতৃত্বে শনিবার দুপুরে স্থানীয় চান্দাই বাজারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়নে মনোনয়ন না পেয়ে গত রবিবার আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেছেন দলটির ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ।

জানা গেছে, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাথুলী ও মটমুড়া এবং মুজিবনগর উপজেলার মহাজপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা।

কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য : আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা জানান, এরই মধ্যে তিনটি ইউনিয়নে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। গতকাল আরো দু-একটি স্থানে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়।

আরও পড়ুন:


জামাইয়ের বঁটির কোপে শ্বশুরের মৃত্যু

নিজের গায়ে আগুন দেওয়া সেই শিক্ষার্থী মারা গেছেন

রাজধানীর যেসব এলাকায় মার্কেট বন্ধ থাকবে আজ

বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে রোনালদোর হ্যাটট্রিকে বড় জয় পেল পর্তুগাল


জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী এবং স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ’

মনোনয়ন বোর্ডের আরেক সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা হলো—দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দল কঠোর অবস্থানে থাকবে। ’

সূত্র: কালের কণ্ঠ 

news24bd.tv রিমু