অপরাধীরা থাকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে

অপরাধীরা থাকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে

Other
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মানব কঙ্কালসহ এক ব্যক্তি ধরা পরার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে আবার নতুন করে ভয় ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। অবশ্য আমাদের দেশে অবৈধভাবে মানব কঙ্কালের ব্যবসা হয় বলে অনেক আগে থেকেই অভিযোগ করা হচ্ছিল।
 
বলা হচ্ছিল অবৈধ মানব কঙ্কাল ব্যবসায়ীরা বিভিন্নভাবে মানুষের কঙ্কাল অর্থাৎ হাড়-গোড় যোগাড় করে তা বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে বিক্রি করে থাকে। এমনও অভিযোগ আছে মানব কঙ্কাল ব্যবসায়ীরা মানুষের কঙ্কাল যোগাড় করে তা দেশের বাহিরেও পাচার করে থাকে।
 
 
আমরা জানি আমাদের দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মানুষের কঙ্কালসহ কঙ্কাল ব্যবসায়ীদেরকে গ্রেফতার করে কোর্টের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়ে থাকে। তারপর ধৃত মানব কঙ্কাল ব্যবসায়ীরা জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনঃরায় কঙ্কাল ব্যবসায় লেগে যায়। বিভিন্ন সূত্র ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের বক্তব্য থেকে জানা যায়, মূলত কঙ্কাল ব্যবসায় বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী মেডিকেল কলেজের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা জড়িত হয়ে পড়ে এবং এক সময় আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীর হাতে কেউ কেউ ধরা পড়লেও, মূল অপরাধীরা থাকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে কিংবা পর্দার অন্তরালে।  
 
আবার এমন অভিযোগও করা হয়ে থাকে যে, এই কঙ্কাল ব্যবসায় অনেক সময় ডাক্তারি পড়তে আসা ছাত্ররাও জড়িত হয়ে পড়ে।
এক পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী অবৈধ কঙ্কাল ব্যবসায়ীরা গোপনে কবরস্থান থেকে মানব কঙ্কাল চুরি করে আনে। আবার এমন কথাও বলা হয় যে, হাসপাতালে বেওয়ারিশ হিসাবে পড়ে থাকা লাশগুলিকে কোন না কোন অবৈধ পন্থায় মানব কঙ্কাল ব্যবসায়ীরা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের অসাধু ব্যক্তিদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে থাকে।  
 
অবৈধ মানব কঙ্কাল ব্যবসায়ীরা রাসায়নিক দ্রব্যের মাধ্যমে হাড় থেকে মাংস ছাড়িয়ে হাড় আলাদা করে নেয়। তারপর সেই মানব কঙ্কাল অবৈধ ভাবে মোটা অংকের বিনিময়ে ডাক্তারি পড়তে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে বিক্রি করে থাকে।  
 
যেহেতু মানব কঙ্কাল সংগ্রহের অর্থাৎ কেনা-বেচার কোন সু-নির্দিষ্ট নীতিমালা নেই, তাই ডাক্তারী পড়তে আসা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বাধ্য হয়ে অবৈধ মানব কঙ্কাল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তাদের পড়াশুনার স্বার্থে মানব কঙ্কাল সংগ্রহ করতে হয়। আবার অনেক সময় এমনও হয় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নতুন পড়তে আসা মেডিকেলের ছাত্র-ছাত্রীরা মানব কঙ্কাল সংগ্রহ করে থাকে।  
 
ডাক্তারি পড়তে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা ও গবেষণার জন্য মানব কঙ্কালের অবশ্যই প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া কোন বিকল্প থাকে না। যদিও আজকাল কৃত্রিম কঙ্কালের কথা বলা হয়ে থাকে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিজ্ঞজনরা বলে থাকেন চিকিৎসা শাস্ত্রে জ্ঞান আহরণ করতে হলে মানুষের কঙ্কালই প্রয়োজন পড়ে। কৃত্রিম ভাবে তৈরী করা কঙ্কাল দ্বারা শিক্ষার বিষয়টি পরিপূর্ণ হয় না।  
 
যারা চিকিৎসা শাস্ত্রে স্নাতক করেন কিংবা ডাক্তারি পেশা শুরু করেন, তাদের কাছে মানুষের কঙ্কালই প্রয়োজন। এ বিষয়ে অ্যানাটমি বিভাগের এক শিক্ষকের ভাষ্য হচ্ছে আসল কঙ্কালের মত কৃত্রিম কঙ্কাল বানানো সম্ভব নয়। কৃত্রিম কঙ্কালে অনেক সময় ভুল থাকে। অ্যানাটমি বিভাগের শিক্ষকের মতে আসল কঙ্কালে হয়তো একটা গর্ত আছে, একটা নার্ভ চলে গেছে, একটা গ্রুপ আছে। কিন্তু কৃত্রিম কঙ্কালে হয়তো এটা আসে নাই।  
 
তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক বিজ্ঞজনরা বলে থাকেন, অ্যানাটমি আর্টিফিশিয়াল বা মডেল কঙ্কাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে নার্সিং কিংবা হোমিওপ্যাথির মত বিষয় গুলোতে। বলা হয়ে থাকে আজকাল কৃত্রিম কঙ্কালও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসব আমরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকেই জেনে থাকি। সবকিছুতেই যেমন বির্তক আছে তেমনি করে কৃত্রিম কঙ্কাল ব্যবহার করা নিয়েও বির্তক আছে। ফরেনসিক বিভাগের অনেক জ্ঞানী ও বিজ্ঞজনদের মতে পৃথিবীর অনেক জায়গায়ই আজকাল কৃত্রিম কঙ্কাল ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। এসব কঙ্কাল ফরেনসিক বিভাগের অনেক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ভালো মানেরও হয়ে থাকে।
 
আমাদের মধ্যে অনেক কিছুর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় অপরাধীরা অপরাধের পথ খুঁজে বেড়ায়। দেখা যায় অনেক সময় আইনের দুর্বলতার জন্য অপরাধীরা অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়। সেখানে যথাযথ কর্তৃপক্ষেরও কিছু করার থাকে না।  
 
অনেকেই বলে থাকেন আমাদের এখানে কঙ্কাল বেচাকেনার কোন নীতিমালা নেই। অথচ আমরা যদি আমাদের সন্তানদের ডাক্তার বানাতে চাই, তাহলে তার অর্থাৎ আমাদের সন্তানদের মানব কঙ্কাল প্রয়োজন পড়বেই। আরো সহজভাবে পরিষ্কার করে বলতে গেলে বলতে হবে ডাক্তারি পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীদেরকে বৈধ কিংবা অবৈধ ভাবে যেকোন ভাবেই হোক তাদের পড়াশুনার স্বার্থে মানুষের কঙ্কাল সংগ্রহ করতে হবেই।  
 
ছাত্রছাত্রীরা বৈধভাবে না অবৈধভাবে মানব কঙ্কাল সংগ্রহ করছে তা তারা অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থী বুঝে উঠতে পারছে না। দেশের আইন বিশেষজ্ঞের মতে কবরস্থান থেকে কঙ্কাল সংগ্রহ করে বিক্রি করা চরম অনৈতিক কাজ হলেও আমাদের দেশের আইনের মাঝে এ অপরাধের সুস্পষ্ট কোন বিচার বা শাস্তির নির্দেশনা নেই। যার ফলে অপরাধীরা আইন শৃংঙ্খলা বাহীনির হাতে ধরা পরলেও অপরাধীদের কিছু হয়না।  
 
অপরাধীরা আইনের মারপ্যাচে মুক্তি পেয়ে পুনঃরায় মানব কঙ্কালের অবৈধ ব্যবসায় লেগে যায়। দেশের বিজ্ঞজনরা মনে করেন কঙ্কাল কেনাবেচা, এর সংরক্ষণ, সেই সঙ্গে দেহদান সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট নীতিমালার প্রয়োজন। যদি সরকার কঙ্কাল কেনা বেচা, এর সংরক্ষণ ও দেহদানের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করতে পারে, তাহলেই সম্ভব হতে পারে অবৈধ কঙ্কাল ব্যবসা বন্ধ করা।
 
ডাক্তারি পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীদের মতে অ্যানাটমি বিষয়ে পড়াশুনা করতে গিয়ে কঙ্কালের ব্যবহার হয়ে থাকে। এক ছাত্রীর মতে যতই আপনাকে পড়ানো হোক না কেন হাতে ধরে দেখানোর আগ পর্যন্ত বুঝা সম্ভব না।  
 
আমরা সকলেই এটা জানি যে, দেহদান ছাড়া বৈধ ভাবে কঙ্কাল সংগ্রহের তেমন সুযোগ নেই। এ কথাতো সবাই বলবেন যেখানে বৈধতার সুযোগ থাকে না, সেখানে বৈধ প্রয়োজনের তাগিদে মানুষকে বাধ্য হতে হয় বাঁকা পথ ধরতে। আর এই সুযোগটাই নেয় অপরাধী চক্রের লোকজন।
 
আগেই বলা হয়েছে আমাদের দেশে ডাক্তারী পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা ও গবেষনার জন্য মানব কঙ্কালের প্রয়োজন হলেও, এ ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। তাই যারা মেডিক্যালের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে থাকেন, তারা এ বিষয়ে স্বচ্ছতা নিয়ে আসতে দুটি প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছেন। এরমধ্যে একটি প্রস্তাব হল মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যলয়গুলোতে কঙ্কালের ব্যবহার এবং সরবরাহের পদ্ধতি নিয়ে নীতিমালা তৈরি বিষয়ক আর অন্যটি হল মেডিকেল কলেজগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের জন্য সিমুলেশন ল্যাব তৈরি করা।  
 
তবে বিজ্ঞজনরা বলে থাকেন এ ধরনের সিমুলেশন ল্যাব সহজ ব্যাপার নয়। তা অনেক সময়ের ব্যাপার। এতো তাড়াতাড়ি তৈরী করা যাবেনা। আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মকর্তার ভাষ্যমতে এ ধরণের সিমুলেশন ল্যাব প্রতিষ্ঠা করতে পাঁচ বছরের মত সময় লেগে যেতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের সিমুলেশন ল্যাব ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের দেশে এখনো এটা প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। বাংলাদেশের কুমিল্লার একটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজে ছোট্ট আকারে একটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন:

মুসা বিন শমসেরের কিছুই নেই, তিনি ভুয়া মানুষ: পুলিশ

‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে বিকেলে নেপালের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

মার্কিন দূতাবাসে রহস্যজনক হাভানা সিনড্রোমের হানা

৪৩ যাত্রী নিয়ে পাহাড়ি রাস্তা থেকে ছিটকে গেল বাস


এখন প্রশ্ন হলো মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারী পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও পড়াশুনার জন্য যেহেতু মানব কঙ্কালের প্রয়োজন, সেই ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত হবে কিংবা তাদের দায়িত্বও বলা যায় ডাক্তারী পড়তে আসা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সহজ এবং বৈধ ভাবে মানব কঙ্কালের ব্যবহার সুনিশ্চিত করা। অপরাধীরা হয়তো বিভিন্ন ভাবে মানব কঙ্কাল সংগ্রহ করে তাদের অপরাধমূলক কর্মকান্ড চলিয়ে যায়।  
 
কিন্তু কোমলমতি মেডিক্যালের ছাত্র-ছাত্রীদের অনেক সময় আইনের মারপ্যাচে পরে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এখানে একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন, যথাযথ কর্তৃপক্ষ যদি ডাক্তারি পড়তে আসা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বৈধ ভাবে মানব কঙ্কাল পাবার ব্যবস্থা করে দেন এবং ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও আইনের ব্যাপারে সচেতন করে তুলেন, তাহলে দেখা যাবে অপরাধীরা অর্থাৎ মানব কঙ্কাল পাচারকারী কিংবা ব্যবসায়ীরা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ভুল বুঝিয়ে অবৈধভাবে সংগ্রহ করা মানব কঙ্কাল ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে তুলে দিতে পারবেনা এবং ছাত্র-ছাত্রীরাও সচেতন ভাবে কোন অপরাধীর নিকট থেকে মানব কঙ্কাল গ্রহণ করবে না। তখন দেখা যাবে অপরাধীরাও ডাক্তারী পড়তে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের আশেপাশে আসতে পারছে না।
 
তাই বলছিলাম, মেডিক্যালে পড়তে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের মানব কঙ্কাল সংগ্রহের ব্যাপারে একটি বৈধ সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিশেষ দায়িত্ব হয়ে পড়েছে। দেশবাসী বিশ্বাস করে মেডিক্যালে ডাক্তারি পড়তে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে যথাযথ কর্তৃপক্ষ অবশ্যই সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন।
 
news24bd.tv/ নকিব