করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৫০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৫০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

অনলাইন ডেস্ক

করোনার এই সময়ে সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের ৫০ জন শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যাঁরা এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছেন তাঁদের মধ্যে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আছেন ছয়জন শিক্ষার্থী। একই সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।

বেসরকারি সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন গত ৪ জুন পর্যন্ত করোনার ১৫ মাসে আত্মহত্যার যে হিসাব দিয়েছে, তাতে ৪২ জন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী।

কালের কণ্ঠ ৪ জুন থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত আত্মহত্যার খবর পর্যালোচনা করেছে। তাতে আরো আটজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর আত্মহননের তথ্য পাওয়া গেছে।

আঁচলের হিসাবে গত ৪ জুন পর্যন্ত সারা দেশে অন্তত ১৫১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ৭৩ জন স্কুল শিক্ষার্থী, ২৭ জন কলেজ শিক্ষার্থী ও ২৯ জন মাদরাসার শিক্ষার্থী রয়েছেন।

গত বছর ১৮ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পর থেকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এই তথ্যের সূত্র বলে আঁচল জানিয়েছে।

ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নানা রকম ব্যক্তিগত হতাশা, পারিবারিক চাপ, সম্পর্কে টানাপড়েন, মাদকাসক্তির কারণে মানসিক সমস্যা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা এই চরম সিদ্ধান্তের পেছনে কাজ করেছে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলালউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল জায়গাটা হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য। মানুষ চলে তার মানসিক শক্তি দিয়ে। আত্মহত্যার মতো ঘটনার রাস টানতে হলে মানসিক স্বাস্থ্যের পরিচর্যা জরুরি। তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থীর মধ্যে যখন ভবিষ্যৎ, চাকরি, পরিবারসহ বিভিন্ন  বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, তখন তাঁর মনে নানা চিন্তা আসতে পারে। এঁদের মধ্যে কেউ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হন। ’

গত বছরের ১৭ আগস্ট বরিশালের উজিরপুরে নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইমাম হোসাইন। তিনি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। প্রেমসংক্রান্ত জটিলতায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা যায়। আত্মহননের আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ আল মাহদী অপু আত্মহত্যা করেন। রাজধানীর চানখাঁরপুলের একটি মেস থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁর মৃত্যু নাড়া দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

তীব্র বিষণ্নতা ও মানসিক চাপ থেকে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শুভজ্যোতি মণ্ডল। গত বছরের ১৪ অক্টোবর বিকেলে আদাবর মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটির ৪ নম্বর রোডের ১৪১ নম্বর বাড়ি থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের শিক্ষার্থী। শুভজ্যোতির পরিবার বলেছে, বিষণ্নতার জন্য তিনি চিকিৎসা নিয়েছিলেন।

বেসরকারি সংগঠন আঁচলের জরিপ বলছে, সার্বিকভাবে আত্মহননের প্রবণতা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। যাঁরা আত্মহত্যা করেছেন, তাঁদের প্রায় অর্ধেকেরই বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছর।

চলতি বছর মে মাসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে ডাব বিক্রেতার ভ্যান থেকে দা নিয়ে নিজের গলা কেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের আত্মহত্যার ঘটনা বহুল আলোচিত। তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার বিজ্ঞান ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র হাফিজুর রহমান একজন মূকাভিনেতা ছিলেন। এ ঘটনা তদন্ত করে পুলিশ জানতে পারে, মাদক গ্রহণের পর তিনি ওই ঘটনা ঘটান।

চলতি বছর প্রকাশিত আঁচলের প্রতিবেদনে বলা হয়, পারিবারিক জটিলতা, সম্পর্কের অবনতি, পড়াশোনা নিয়ে হতাশা, আর্থিক সংকট এসবই আত্মহত্যার মূল কারণ। আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে একা না রাখা, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর নিয়োগ করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেছে তারা। সংগঠনটি বলছে, আত্মহত্যা করা ব্যক্তিদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের ভয়াবহ প্রবণতা কমে আসে।

আরও পড়ুন:


স্বামী-স্ত্রীসহ তিন জনকে কুপিয়ে হত্যা, ছেলে আটক

মাথার টুপিতে ৭৩৫টি ডিম নিয়ে গিনেস রেকর্ড! (ভিডিও)

দেশে প্রথমবারের মতো শিশুদের পরীক্ষামূলক টিকাদান শুরু আজ

তিন সন্তানের মাকে গলা কেটে হত্যা!


আত্মহত্যা নিয়ে কাজ করা হেল্পলাইন ‘কান পেতে রই’ জানায়, ২০১৫ থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত সাত বছরে আত্মহত্যাপ্রবণতার কথা জানিয়ে ১৭ হাজার ৪৪৮ জন শিক্ষার্থী ফোন করেছেন। চলতি বছরের সর্বশেষ হিসাবে দেখা যায়, আগস্টে ৩১৪ জন আর সেপ্টেম্বরে ৩৮১ জন ফোন করে আত্মহত্যাপ্রবণতার কথা জানান।

করোনাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কিছু সমস্যা থাকতে পারে, কিন্তু আত্মহননের পথ বেছে নেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। কিন্তু ঘটনা ঘটার আগে এ বিষয়গুলো জানা সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে পরিবার, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনরা বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। কারণ আত্মহত্যার ঝোঁক থাকলে তার লক্ষণ দেখা দেয়। সেটা কাছের মানুষই জানতে পারেন আগে। তাঁরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পরিবারের সঙ্গে মিলে সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখা যায়। ’

সূত্র: কালের কণ্ঠ 

 

এই রকম আরও টপিক