জালিয়াতি থেকে রক্ষা পেল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ৩৫৫ কোটি টাকা

জালিয়াতি থেকে রক্ষা পেল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ৩৫৫ কোটি টাকা

অনলাইন ডেস্ক

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সতর্কতায় এই জালিয়াতির ঘটনা ঠেকানো সম্ভব হওয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ৩৫৫ কোটি টাকা রক্ষা পেয়েছে।  গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলার পিএডি (এলসি) সেকশনে এ ঘটনা ঘটে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সই জাল করার কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ব্যক্তি মো. আবদুল্লাহ মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি।   এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাধ্যমে অভিযুক্তকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তবে এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণায়ের একটি এলসির পেমেন্টের অনুরোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পিএডি সেকশনে ভাউচার জমা দেন আবদুল্লাহ মণ্ডল। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালকের (অতিরিক্ত সচিব) সইয়ে এই ভাউচার জমা দেওয়া হয়। ভাউচারের সইয়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালকের প্রকৃত সইয়ের মিল খুঁজে না পাওয়ায় ওই ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা ধরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে হস্তান্তর করেন।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কেনাকাটার বিপরীতে যেসব এলসি হয়, এর বেশির ভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে করা হয়। এসব এলসির পেমেন্ট করা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পিএডি (এলসি) সেকশনের মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় সেই পিএডি (এলসি) শাখা।

জানা যায়, কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের গত ২৮ সেপ্টেম্বর সই করা ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪০০ ডলারের একটি এলসির বাকি ৩০ শতাংশ বাবদ চার লাখ ১৭ হাজার ৮৮১ ডলার বা ৩৫৫ কোটি টাকা পরিশোধ করার অনুমতির জন্য অনুরোধ করা হয়। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে আবদুল্লাহ মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পিএডি (এলসি) সেকশনে এই বিলের ভাউচার জমা দেন। ওই সেকশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান এই পেমেন্টের অনুরোধ নিষ্পত্তির সময় দেখতে পান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালকের আগের সইয়ের সঙ্গে এই সইয়ের মিল নেই। এতে তাঁর সন্দেহ হলে বিষয়টি মতিঝিল শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন খানকে জানানো হয়। বিল নিষ্পত্তিতে দেরি হওয়ায় আবদুল্লাহ মণ্ডল সেকশনের কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন। তিনি অর্থ মন্ত্রণালয় ও গভর্নরের কাছের লোক বলেও দম্ভোক্তি করেন।

পরে ওই ব্যক্তিকে কৌশলে মতিঝিল শাখার ইডির রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক লে. কর্নেল শামীমুর রহমানকে ডেকে এনে অভিযুক্তকে তাঁর জিম্মায় রাখা হয়। এর আগে ঘটনা শুনেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মতিঝিল থানা ও র‌্যাব-৩-কে জানান। কিছুক্ষণের মধ্যেই মতিঝিল থানা ও র‌্যাব-৩-এর কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে এসে হাজির হন। পরে ইডির রুমে ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সই জাল করার কথা স্বীকার করে ক্ষমা চান। এরপর অভিযুক্তকে আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব-৩-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল শাখার ইডি মোশাররফ হোসেন খান বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত ছিলাম সইটি পরিচালকের নয়, এটা জাল করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পিএডি সেকশনের কাজই হলো সরকারের পক্ষে পেমেন্ট করা। স্বাস্থ্য খাতের এই পেমেন্ট হলে সরকারি হিসাব ডেবিট করে দেওয়া হতো। আমাদের কর্মকর্তাদের সতর্কতার কারণে এই জালিয়াতি ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। ’

আরও পড়ুন:


স্বামী-স্ত্রীসহ তিন জনকে কুপিয়ে হত্যা, ছেলে আটক

মাথার টুপিতে ৭৩৫টি ডিম নিয়ে গিনেস রেকর্ড! (ভিডিও)

দেশে প্রথমবারের মতো শিশুদের পরীক্ষামূলক টিকাদান শুরু আজ

তিন সন্তানের মাকে গলা কেটে হত্যা!


যোগাযোগ করা হলে র‌্যাব-৩-এর তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজর ইমাদউদ্দিন লস্কর বলেন, ‘আবদুল্লাহ মণ্ডলকে আমাদের হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা জানতে পেরেছি, ঔষধ প্রশাসন থেকে ওই বিলের চিঠি ঠিকই ইস্যু হয়েছে। কিন্তু আবদুল্লাহ দাবি করছেন, কাগজটি তারা হারিয়ে ফেলেছে। পরবর্তী সময়ে তিনি টেম্পারিং করে কাগজ তৈরি করে গত ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সন্দেহ হলে গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন। আজ শুক্রবার তাঁর বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা। ’ 

এ ব্যাপারে মতিঝিল থানার ওসি মো. ইয়াছির আরাফাত গতকাল রাতে বলেন, ‘এ ঘটনার পর আমাদের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়েছিলেন। তবে অভিযুক্তকে র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ’ সূত্র: কালের কণ্ঠ 

news24bd.tv রিমু