পাউবোর জায়গা দখল করে রমরমা ব্যবসা

পাউবোর জায়গা দখল করে রমরমা ব্যবসা

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

গোপালগঞ্জ সদরের গান্দিয়াসুর বাজারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রকাশ্যেই নির্মাণ করা হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান। অথচ পাউবো কর্তৃপক্ষ নাকি নাকি কিছুই জানেন না!

গান্দিয়াসুর বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে মধুমতি নদী। এই নদী থেকে ছোট খাল পূর্ব দিকে প্রবেশ করেছে।

ওই খালের ওপর গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়কের গান্দিয়াসুর স্ট্যান্ডের পাশেই রয়েছে একটি স্লুইচগেইট। আর ওই স্লুইচগেট ঘেঁষে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন এলাকার কিছু অসাধু ব্যক্তি।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দোকানের বর্তমান মালিক হলেন- হরিপদ মৃধা, স্বপন রায়, রমা বিশ্বাস, ছোট বালাসহ আরো অনেকে। তাদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য আবেদন করেছে স্থানীয় লোকজন।

কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি।

হোটেল ব্যবসায়ী হরিপদ মৃধা বলেন, ‘আমি অনেকদিন আগে এই জায়গা কিনে নিয়েছি। তাহলে এখানে ব্যবসা করলে ক্ষতি কী?’ কার থেকে জমি কিনেছেন জানতে চাইলে হরিপদ মৃধা বলেন, ‘আমি সন্তোষ বিশ্বাস নামের এক লোকের কাছ থেকে কিনেছি। ’

স্থানীয়রা জানান, সন্তোষ বিশ্বাস এই দোকানের স্থান বাবু কির্ত্তনীয়ার কাছ থেকে নিয়েছিলেন। কোনো দলিল দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে হরিপদ মৃধা বলেন, ‘না, কোনো দলিল দেয়নি, মৌখিকভাবে কয়েকজন লোকের সামনে কিনেছি। ’ কেন দলিল দেয়নি- এর জবাবে তিনি বলেন, ‘এই জায়গা তো সরকারের। তাই দলিল হবে না। কিন্তু আমার মতো অনেকেই তো আছে .....। ’

হরিপদ মৃধার মত আরও বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে এই বাজারে। তারই পাশের দোকান ছোট বালার। তিনি এখানে ব্যবসা-বাসস্থান দুটোই করছেন। তার কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘আপনারা জেনে কি করবেন? এই জায়গা আগে বাবু কির্ত্তনীয়ার ছিল। বেশ কয়েকবার বিক্রি হওয়ার পর সবশেষ আমরা কিনেছি। এর বাইরে আর কিছু বলতে চাইনা। ’

একই স্থানে রাস্তার বিপরীত পাশে রয়েছে দুটি দোকান। একটির মালিক স্বপন রায়, অপরটির রমা বিশ্বাস। স্বপন রায় এই দোকান থেকে ভাড়া তুলেন। তিনি বলেন, আমি এখানে মাটি কেটে ঘর তুলেছি এবং মাছের ব্যবসা করার জন্য ভাড়া দিয়েছি। আমি কারো কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে করিনি এবং আমাকে কেউ বাঁধাও দেয়নি।

এ ব্যাপারে বাবু কির্ত্তনীয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আগে রাস্তা ছিলো ছোট। কিন্তু যখন টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ সড়কটি বড় (উঁচু ও প্রশস্থ) হয়, তখন আমি রাস্তার একেকটা জায়গার পজিশন নিই। ওই স্থানে আমাদের জমি রয়েছে। তবে আধিকাংশ জমি রাস্তায় চলে গেছে। এখান থেকে একটি দোকানের জায়গা ৬ বছর আগে আমার মামাতো ভাই সন্তোষকে দিই। ও পরে কী করেছে জানিনা। এর বাইরে আর কোনো পজিশন আমি বিক্রি করিনি।

গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো: শফি উদ্দিন জানান, ‘পাউবোর জায়গা বেদখল করে অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে, এমন স্থাপনা গোপালগঞ্জে বহু রয়েছে। তবে গান্দিয়াসুর স্লুইচগেটের পাশের সরকারি জমি দখল হয়েছে, এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।

‌‘কিন্তু এসব স্থাপনাগুলো এক দিনে গড়ে ওঠেনি। এখানে সংশ্লিষ্ট  কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি নেই। এই সুযোগে কিছু স্বার্থান্বেষী সুবিধাভোগী জায়গা দখল করেছেন। ’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, এই সরকারি জায়গায় ইমারত করার জন্য রমা বিশ্বাস এবং আরো কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও চেয়ারম্যানকে টাকা দিয়েছেন। আমরা জানতে পেরে তাদের বাঁধা দিই। কিন্তু তার জমি দখল কাজ বন্ধ করেনি।

‘আমরা গত ২৬ এপ্রিল থানায় অভিযোগ করেছি। কিন্তু এখন পযর্ন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে গোপালগঞ্জ পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসককে চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি অবহিত করেছি। ’

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর