কানাডার ক্যালগেরিতে আলবার্টার প্রথম বাংলা অনলাইন পোর্টাল ‘প্রবাস বাংলা ভয়েস’র আয়োজনে প্রধান সম্পাদক আহসান রাজীব বুলবুলের সঞ্চালনায় ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি: চ্যালেঞ্জ কোথায়?’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উক্ত ভার্চুয়াল আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন প্রবাসী সাংবাদিক ও কানাডার নতুনদেশ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, এবিএম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ড: মোহাম্মদ বাতেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মো. মাহমুদ হাসান।
এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন প্রকৌশলী আবদুল্লাহ রফিক, প্রকৌশলী মোহাম্মদ কাদির, সিলেট এসোসিয়েশন অব কেলগেরীর সভাপতি রুপক দত্ত এবং বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী কিরন বনিক শংকর।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর কাঙ্খিত সোনার বাংলাদেশ বিনির্মানের পথে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদ ও ধর্মান্ধতা। আর এটি মোকাবিলায় সকল প্রগতিশীল শক্তিকেই স্ব স্ব অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হতে হবে। কুমিল্লায় সংঘটিত অপ্রত্যাশিত ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালি জাতির হাজার বছরের আবহমান ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধরে রাখতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রবাসী সাংবাদিক ও কানাডার নতুনদেশ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীকে কোনভাবেই বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। রাষ্ট্র ও সরকারকে আগে স্বীকার করে নিতে হবে, দেশে সাম্প্রদায়িকতা আছে, হিন্দু ফোবিয়া আছে। সমস্যাকে স্বীকার করেই সমাধানের পথ অনুসন্ধান করতে হবে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ কে স্বাধীনভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পথ বের করতে হবে। অপরাধ করলে শাস্তি অনিবার্য -এ ধারণা জনগনের মনে তৈরি করতে পারলে পুলিশ প্রহরায় উৎসব, পূজা-পার্বণ আয়োজনের প্রয়োজন নেই।
কলামিস্ট উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মোঃ মাহমুদ হাসান বলেন, ধর্মান্ধ শক্তিকে ব্যবহার করে উগ্রবাদকে উস্কে দিয়ে অরাজকতার মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টাকে রুখতে, রাষ্ট্রকে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবেশ নিশ্চিত করে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির উর্বর পথকে রুদ্ধ করতে হবে। সংবিধানে সংখ্যাগুরুর অবস্থান কে সংহত করে সংখ্যালঘুর অধিকার কে নিশ্চিত করা যাবে না। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই বাঙালি, বাংলাদেশ সবার দেশ এ ভাবনাটিকে সংহত করতে হলে কুমিল্লা সহ বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া ন্যাক্কারজনক সাম্প্রদায়িক ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
বিশেষ অতিথি এবিএম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ডঃ মোহাম্মদ বাতেন বলেন- খুবই দুঃখজনক, ধিক্কার জানাই। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর এ ধরনের হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এক শ্রেণীর অপশক্তি প্রতিনিয়তই এধরনের ঘটনা ঘটিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে যাতে করে ভবিষ্যতে এধরনের ঘটনা আর না ঘটে। কুরআন হাদিসের রেফারেন্স টেনে তিনি বলেন, সকল ধর্মের মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে, ইসলামের মূলনীতি বিঘ্নিত হয়।
প্রকৌশলী আবদুল্লাহ রফিক বলেন- স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার হলেও ৭১ এর পরাজিত শক্তিরা এখনও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টায় লিপ্ত। সুখী, সমৃদ্ধ অর্থনীতির অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর মতোই সুদৃঢ় লক্ষ্য ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাতে কোনো অপশক্তি বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। অপশক্তি রোধে প্রয়োজন শুধু সমন্বয়ের।
সিলেট এসোসিয়েশন অব কেলগেরীর সভাপতি রুপক দত্ত বলেন - আমরা বিস্মিত, হতবাক। এই কি সেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা? কোথায় আমরা? এই অপশক্তির উৎস কোথায়? তিনি আরো বলেন-চট্টগ্রাম, নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জের চৌমুহনী ও হাতিয়ার বুড়িরচরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির, বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অপরাধী যেই হোক, বাংলার মাটিতে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখতে চাই।
আরও পড়ুন
ছড়াচ্ছিল দুর্গন্ধ, উৎস খুঁজতে গিয়ে মিলল চিকিৎসকের মরদেহ
৭ বছর পর হলে আসছে অনন্ত জলিলের ‘অ্যাকশন সিনেমা’
কিশোরী প্রেমিকাকে কাশবনে ডেকে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে দুই বন্ধু
মোস্তাফিজকে রুখে দেয়ার ইচ্ছে স্কটল্যান্ডের!
প্রকৌশলী মোহাম্মদ কাদির বলেন, এ লজ্জা আমাদের সবার। এখনই যদি কঠোরভাবে এই অপশক্তির দমন না করি, তাহলে ভবিষ্যতে এরা আরো বেশি করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। শুধু প্রশাসন নয়, সর্বস্তরের সবাই কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন- আসুন এখনই ওদের নির্মূলে সোচ্চার হই। জনসচেতনতা গড়ে তুলি।
বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী কিরন বনিক শংকর বলেন- বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যখন তাদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উদযাপন করছে, তখন চিহ্নিত সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিগোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পূজামণ্ডপ, মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যে হামলা চালিয়েছে তাঁর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ, অসাম্প্রদায়িকতার দেশ- প্রবাসে থেকে আপনজনদের উপর এই হামলা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে আবেগ আপ্লুত হ্রদয়ে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বারবার এমন ঘটনায় আমরা হতাশ ও দিকভ্রান্ত। তিনি বলেন, আর দাবি নয়, দেখতে চাই শেখ হাসিনার সরকার এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সর্বোচ্চ কঠোরতা প্রদর্শন করেছে।
news24bd.tv এসএম