হাইকোর্টে ১৮ অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ

হাইকোর্টে ১৮ অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ

হাইকোর্টে ১৮ অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

অবশেষে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ১৮ জনকে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।

বুধবার বিকালে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন ও বিচার বিভাগ সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে দুই বছরের জন্য ১৮ অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ দেয়া হলো। শপথের দিন থেকে তাদের নিয়োগ কার্যকর হবে।

এদিকে নবাগত বিচারকদের শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। সুপ্রিমকোর্টের একটি সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় সুপ্রিমকোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে নবাগত বিচারকদের শপথ পড়াবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

বুধবার নিয়োগ পাওয়া ১৮ বিচারপতি হলেন- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে দায়িত্বপালন করে আসা মো. আবু আহমেদ জমাদার, আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, নরসিংদীর জেলা ও দায়রা জজ ফাতেমা নজীব, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. কামরুল হোসেন মোল্লা, ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান, ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ মো. আতোয়ার রহমান, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এস এম আব্দুল মবিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খিজির হায়াত, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শশাংক শেখর সরকার, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মহি উদ্দিন শামীম, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মো. রিয়াজ উদ্দিন খান, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মো. খায়রুল আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আহমদ সোহেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীর, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খোন্দকার দিলীরুজ্জামান ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ড. কে এম হাফিজুল আলম।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে ১০ জন বিচারপতি নিয়োগ করা হয়।

তখন উচ্চ আদালতে বিচারপতির সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৫ জনে। এরপর গত তিন বছরে কোনো নিয়োগ না হওয়ায় বর্তমানে বিচারপতির সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৮৪ জনে- আপিল বিভাগে ৪ জন এবং হাইকোর্টে ৮০ জন।

সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে বিচারক নিয়োগ বিষয়ে বলা আছে। ৯৫(১) অনুচ্ছেদ বলছে, প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করবেন। ৯৫(২) অনুসারে কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক না হলে এবং (ক) সুপ্রিমকোর্টে অন্যূন ১০ বছরকাল অ্যাডভোকেট না হয়ে থাকলে; বা বাংলাদেশের (খ) রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে অন্যূন ১০ বছর কোনো বিচার বিভাগীয় পদে অধিষ্ঠান না করে থাকলে; অথবা (গ) সুপ্রিমকোর্টের বিচারক পদে নিয়োগলাভের জন্য আইনের দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকলে; তিনি বিচারক পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না।

উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগে সুস্পষ্ট আইন করার জন্য সাংবিধানিক নির্দেশনা থাকলেও গত ৪০ বছরেও তা করা হয়নি। ১৯৭৮ সালে প্রথম আইন করার বিষয়টি সংবিধানে যুক্ত করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে উচ্চ আদালতের পাশাপাশি সংসদ ও আইন কমিশন থেকে এ বিষয়ে তাগাদা দেয়া হয়। এরই জেরে ২০১৪ সালে প্রথম আইন তৈরির উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে চার বছরেও আইনটির খসড়া চূড়ান্ত হয়নি। এ অবস্থায় আইন ছাড়াই ফের উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করলো আইন মন্ত্রণালয়।

সাবেক বিচারপতি ও আইনজ্ঞরা বলছেন, যোগ্য ব্যক্তিকে বাছাই করার স্বার্থে বিচারক নিয়োগে আইন করা জরুরি হলেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে স্বাধীনতার পর থেকে সব সরকারই তা উপেক্ষা করেছে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনও তাকে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিচারপতি নিয়োগে আইন প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

অবশ্য এ নিয়ে এখনও কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এ বছরের শেষনাগাদ আইন পাওয়া যাবে। পরিস্থিতির কারণেই এখন উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ করা হচ্ছে। শিগগিরই এ নিয়োগ সম্পন্ন হবে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের পর উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হয়।


(নিউজ টোয়েন্টিফোর/কেআই)

 

সম্পর্কিত খবর