নাটোরে কলেজ এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষক এখন দোকান কর্মচারী

নাটোরে কলেজ এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষক এখন দোকান কর্মচারী

Other

নাটোরের ১৫টি কলেজ প্রতিষ্ঠার ২০বছরেও এমপিওভুক্ত হয়নি। পেটের দায়ে এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকেই শিক্ষকতা ছেড়ে অন্য পেশা গ্রহণ করেছেন। কেউ দিয়েছেন মুদি দোকান। কেউ করছেন দোকানে মালামাল সরবরাহ, আর কেউ করছেন অন্যের জমিতে কৃষি কাজ।

নতুন নীতিমালার বেড়াজালে আটকে তাদের জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে।

কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শুধুমাত্র এমপিও ভুক্তির আশায় নাটোরের বাগাতিপাড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজ নাম পরিবর্তন করে হয়েছে দয়ারামপুর কলেজ। এমন পরিবর্তন আনা হলেও গত ২০ বছরে মিলেনি এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার/ মাসিক বেতন)।

শিক্ষার্থী শিক্ষক অবকাঠামো সব আছে, নেই শুধু শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতা। বিনা বেতনে চাকরি করে ইতোমধ্যে এই কলেজ ছেড়ে গেছেন আটজন শিক্ষক। একই অবস্থা বড়াইগ্রাম উপজেলার বড়াইগ্রাম মহিলা কলেজ ও জোনাইল মহিলা কলেজ, নলডাঙ্গা উপজেলার মোমিনপুর মহাবিদ্যালয় ও মির্জাপুরদিঘা আইডিয়াল মহাবিদ্যালয়, সদরের এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু মহাবিদ্যালয়, পীরগঞ্জ আদর্শ মহাবিদ্যালয়, ইয়াছিনপুর মহাবিদ্যালয়, বাগাতিপাড়া উপজেলার চাঁদপুর টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের সাধারণ শাখা, তমালতলা মহিলা কলেজ,  তমালতলা টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউট, তমালতলা পৌর টেকনিক্যাল মহিলা কলেজ, চিথলিয়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ ও লালপুর উপজেলার কলসনগর কলেজের।

১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বেশ আড়ম্বরপূর্ণ ভাবেই এসব কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। গড়ে তোলা হয় অবকাঠামো। শুরু থেকেই প্রয়োজনের চাইতে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। সকল বিষয়ে দেয়া হয় শিক্ষক নিয়োগ। এমপিও হবে, বেতন ভাতা পাওয়া যাবে, আশায় দিন গুনতে থাকে কর্মরতরা। কিন্তু কিছুই হয়নি। দিনে দিনে কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীও। আগে রাজনীতির মারপ্যাচে এমপিও না হলেও এখন কলেজগুলো নিয়মের ফাঁদে আটকে গেছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে গেলে বড়াইগ্রাম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুব-উল-হক বাচ্চু বলেন, ১৯৯৮ সালে চারটি বিভাগ ও ২০টি বিষয় নিয়ে সুবিশাল সেমি পাকা ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয় তার কলেজ। শুরু থেকে পর্যাপ্ত ছাত্রী ভর্তি হয়। ৮৯ শতাংশ পর্যন্ত ছাত্রী পাসও করেছে। ২০০৫ থেকে ২০১৫সাল পর্যন্ত ছিল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র। ২৩ বছরেও এমপিও না হওয়ায় পেটের দায়ে এখন কলেজের ইসলাম শিক্ষার প্রভাষক শফিকুল ইসলাম হয়েছেন মুদি দোকানী আর ইসলামের ইতিহাসের প্রভাষক অসীম কুমার দেব দিয়েছেন ভূষি মালের দোকান। এনজিওসহ নানা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে শিক্ষকরা জীবনধারণের চেষ্টা করছেন। একজন কর্মচারী ইতোমধ্যে মারা গেছে। জীবিত ২৮ জনের প্রত্যেকের ৫ থেকে ৯ বছরের মধ্যে অবসরে যাওয়ার বয়স হবে, অথচ এখনো বেতনই হয়নি।

সদরের এম. রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ কাজী রিয়াজুল হক মোমিন জানান, কলেজের হিসাববিজ্ঞানের প্রভাষক বেলাল হোসেন গত ১৯ বছর টিউশনি করে তিন ছেলে মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে কোন রকমে সংসার চালাচ্ছিলেন। করোনায় বন্ধ হয়ে যায় টিউশনি। থেমে যায় সংসারের চাকা। অনেক চেষ্টা করেও করোনাকালে কোন চাকুরী জুটেনি। বাধ্য হয়ে একটি কোম্পানীর সেলসম্যান হিসেবে দোকানে দোকানে মালামাল সরবরাহের কাজ নিয়েছেন।

বেলাল হোসেন বলেন, স্ত্রী সন্তানের মুখে দুবেলা এক মুঠো ভাত তুলে দিতে এছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিল না। সদরের খালেদা জিয়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ইব্রাহিম হোসেন বলেন, দ্বিতল ভবন, ছাত্র শিক্ষক-কর্মচারী আমাদের সবই ছিল। র্দীঘদিন এমপিও না হওয়ায় প্রথমে বিজ্ঞানের শিক্ষকেরা চলে যায়। অনেকে পেশা না ছাড়লেও বিকল্প আয়ের পথ খুজতে গিয়ে শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে। কমতে থাকে শিক্ষার্থী। এখন কাম্য শিক্ষার্থী আর পাশের হার পূরণ করতে না পারায় হচ্ছে না এমপিও ভুক্তি।

আরও পড়ুন


সামাজিক দ্বন্দ্বে শৈলকুপায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ভেঙ্গে দিল প্রতিপক্ষরা

ভারতের ঢলে বন্যার কবলে তিস্তাপাড়ের মানুষ, আতঙ্কে ঘর ছাড়ছে সবাই

উঠতি নায়িকার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যে আলাপ হতো আরিয়ানের

বিএনপি নিজেরাই রাজনৈতিকভাবে সাম্প্রদায়িক: ওবায়দুল কাদের


বাগাতিপাড়ার দয়ারামপুর কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মুর্শেদ মিন্টু বলেন, তার কলেজে শিক্ষার্থী সংকট নেই। সকল বছরই গড়ে ৯০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। সর্বশেষ এমপিও ভুক্তির সময় পাসের হার এক শতাংশ কম থাকায় তার কলেজ বাদ পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষরা এই প্রতিবেদককে বলেছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অবকাঠামো সব থাকলেও তারা নিয়মের বেড়াজালে পড়ে গেছেন। অনলাইনের যুগে কোন ভাল শিক্ষার্থী ইচ্ছে করে তাদের ননএমপিও প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয় না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নানান সুবিধা দিয়ে শিক্ষার্থী এনে ভর্তি করানো হয়। সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে ভাল ফলাফলও করান তারা। তারপরও ২/১ভাগ পাশের হার কম হলে এমপিও অযোগ্য বিবেচিত হন।

বাংলাদেশ নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন নবী বলেছেন, সরকারের নীতিমালা মেনেই এসব প্রতিষ্ঠান তৈরী ও শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যেকোন নীতিমালা হয় ভবিষ্যতের জন্য কিন্তুু দুঃখজনক ভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন নীতিমালার দোহাই দিয়ে ২৩ বছর আগের প্রতিষ্ঠানকেও এমপিও ভুক্ত করা হচ্ছে না। আমরা সমাজে আর মুখ দেখাতে পারছি না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) মুঃ ফজলুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেছেন, সরকারের নীতিমালার বাহিরে কারো কোন কিছু করার সুযোগ নেই। নতুন নীতিমালা প্রনয়নের দিন থেকে আর আগের নিয়ম কার্যকর নয়। ঘোষিত সর্বশেষ নীতিমালা অনুসারেই সরকার ঘোষিত গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্ত করা হবে।

news24bd.tv এসএম