অসুস্থ দেশে এটাই ঘটে, সবকিছুর জন্য রাজধানীতে ছুটতে হয়

অসুস্থ দেশে এটাই ঘটে, সবকিছুর জন্য রাজধানীতে ছুটতে হয়

Other

কবি-স্বীকৃতির জন্য জীবনানন্দকেও কলকাতা যেতে হয়েছিল। অসুস্থ দেশে এটাই ঘটে। সবকিছুর জন্য রাজধানীতে ছুটতে হয়। কলকাতা তখন ভারতবর্ষের রাজধানী নয়, তবে বাংলার রাজধানী।

শিল্প-সাহিত্য সবকিছুরই। মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনকেও সওগাত পত্রিকা বের করতে কলকাতায় যেতে হয়েছিল। নজরুলও পুরুলিয়ায় ফেরেননি। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ কলকাতায় গেছেন।
অদ্বৈত মল্ল বর্মনকেও যেতে হয়েছিল।

জীবনানন্দ কলকাতার জীবনে সুখি হতে পারেননি। মিসফিট ছিলেন। বুদ্ধদেব বসু লেখায় স্বাগত জানিয়েছেন। সঞ্জয় ভট্টাচার্যও অনেক লিখেছেন জীবন বাবুকে নিয়ে। ছেপেছেন কবিতা অকাতরে। আর্থিক সহযোগিতাও করেছেন সাধ্যমতো।

কিন্তু জীবনানন্দ পারেননি। বুদ্ধদেব বসুর মতো প্রতিকূলতা পেরিয়ে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হতে। আসলে সেই স্কিল তাঁর ছিল না। স্ত্রী-সন্তানকে ভাত-কাপড় দিতে না পারলে তারা ছেড়ে কথা কইবে কেন? যে কবিতা তাঁকে খ্যাতি, অর্থ, পদ কিছুই দিতে পারেনি সেই কবিতার জন্য পরিবার কতদিন কষ্ট সইবে?

তবু জীবনানন্দকে আমি ভাগ্যবানই বলব। কারণ তিনি সবকিছু সয়েও কবিতা লিখতে পেরেছেন। এখন তো তিনি কবিতার রাজমুকুটধারী। ভাবুন আরো কত শত কবিযশোপ্রার্থীর কথা! তারাও কবি বা লেখক হবার জন্য কলকাতায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। কিন্তু না পেরেছেন কবি হতে, না পেরেছেন কলকাতার জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে।

ঢাকার দিকে তাকাই। কত ইনোসেন্ট ছেলে-মেয়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় কবি-শিল্পী হতে। এরা যতদিন মফস্বলে ছিল, ততদিন ছিল সাহিত্যঅন্তঃপ্রাণ। ঢাকাতে এসে মেস বা আত্মীয়বাড়িতে সাময়িক আশ্রয়। তারপর চাকুরি খোঁজা। চাকুরি পেলেও শুরুর কয়েক বছর বেতনের পরিমাণ এত নগণ্য যে তা দিয়ে বাসাভাড়া, খাওয়া, যাতায়াত চালানো মুশকিল। তাছাড়া কর্মস্থলে যেতে-আসতে চার ঘণ্টা জ্যামে কাটানো। তখন না হয় লেখা, না হয় পড়া। বেশিরভাগই ব্যক্তিত্ব হারিয়ে ফেলে। পরিচিত কাউকে দেখলেই ধারের নামে হাত পাতে। যদিও দাতা এবং গ্রহিতা দুজনেই জানে এই ধার পরিশোধ হবে না।

আরও পড়ুন


বিশ্বকাপের মূল পর্বের লড়াই শুরু, প্রথম দিনের দুটিই হাইভোল্টেজ ম্যাচ

ফাঁদে ফেলে ৪০ নারীর আপত্তিকর ভিডিও ধারণ ভণ্ড কবিরাজের, অতঃপর...

ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষা আজ, প্রতি আসনে লড়বেন ৭৪ জন

ঠাকুরগাঁওয়ে ‘রাজাকারপুত্র’ ও আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পেলেন নৌকার টিকিট


অল্প দুই-একজন সাহিত্যের বাজারে এটা-সেটা করে জাঁকিয়ে বসার চেষ্টা চালিয়ে যায়। ঘুরে ঘুরে একে-তাকে ধরে বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করে পত্রিকা বের করে। কিছু টাকা অন্তত পকেটে আসে। কেউ কেউ প্রকাশক হয়। টাকা নিয়ে মানহীন বই ছাপায়। তিনশো কপির খরচ নিয়ে ছাপে একশো কপি। পরে আর ফোন ধরে না সেই লেখক বা কবির। কী দুর্ভাগ্য! কবি হতে এসে চিটার হয়ে যায়।

প্রিয় ভাই-বোন, তোমরা মফস্বলেই থেকে যাও। যে কোনো পেশাতে যোগ দাও। মায়ের বা স্ত্রীর হাতের রান্না খাও। বই পড়তে পারবে মনোযোগ দিয়ে। সাধনায় নিমগ্ন থাকো। লিখতে পারবে নিজের মনের মতো। কবি হওয়ার নামে রাজধানীতে এসে অন্তত ঠগ হতে হবে না।

news24bd.tv এসএম