নামাজরত অবস্থায় মসজিদে ঢুকে হাফেজ-ইমামসহ ৪ জনকে হত্যা : গ্রেফতার ৮

নামাজরত অবস্থায় মসজিদে ঢুকে হাফেজ-ইমামসহ ৪ জনকে হত্যা : গ্রেফতার ৮

অনলাইন ডেস্ক

রাত ৩টার সময়ে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতর দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলামা আল-ইসলামিয়াহ মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা সবে জেগে উঠতে শুরু করেছেন। প্রতিদিনের মত কেউ কেউ তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করছিলেন। কিন্তু সে সময়ে তিন শতাধিক সন্ত্রাসী দা, কিরিচ ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মাদরাসায় ঢুকে শিক্ষক ও ছাত্রদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলামা আল-ইসলামিয়াহর শিক্ষক হাফেজ মোহাম্মদ ইদ্রিস (৪০), মসজিদের ইমাম হাফেজ নুর হুালিম (৪৫), শিক্ষক হামিদ উল্লাহ (৫০), মাদরাসাছাত্র ইব্রাহিম হোসেন (২০), স্থানীয় রোহিঙ্গা আজিজুল হক (১৮) ও মোহাম্মদ আমিন (৬৩)।

এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ১০ জন।

এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত আট জনকে আটকের কথা জানিয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন(এপিবিএন)।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সশস্ত্র হামলাকারী রোহিঙ্গারা মাদরাসার ভেতর তাহাজ্জুদের নামাজ ও জিকিরে থাকা দুই শিক্ষককে প্রথমে গুলি এবং পরে রামদা দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। এরপর আরো দুজনকে একই কায়দায় হত্যা করা হয়।

হামলায় আহত হয়ে দুজন হাসপাতালে মারা গেছেন।  

গতকাল শুক্রবার ভোরে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে দিনের বেলায় প্রকাশ পায় আসল ঘটনা।  

এদিকে, মাদরাসার পরিচালক দিল মোহাম্মদসহ আরো অন্তত ১০ আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চারজনকে উখিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে স্থানীয় রোহিঙ্গারা হামলায় নিহত ও আহত হন।  

এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর উখিয়া কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট ১ নম্বর ব্লকে রোহিঙ্গাদের নেতা ও আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মহিব উল্লাহকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় অর্ধশত সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এই গ্রেপ্তারের সঙ্গে গতকালের হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র আছে বলেও দাবি করেছেন মাদরাসার শিক্ষকরা।

আরও পড়ুন : পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলার 'হোতা' সৈকত ছাত্রলীগ নেতা : র‌্যাব

গতকাল সকাল ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, অতিরিক্ত শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছু দৌজা চৌধুরী, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিকারুজ্জামান চৌধুরী, ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অধিনায়ক নাঈমুল হক, ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অধিনায়ক শিহাব কায়সার খান।

জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য ক্যাম্প প্রশাসন আরো কঠোর অবস্থানে থাকবে।  

এপিবিএন-৮ অধিনায়ক পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার বলেন, হামলাকারীদের একজনকে একটি দেশীয় লোডেড ওয়ান শ্যুটারগান, ছয় রাউন্ড গুলি, একটি ছুরিসহ হাতেনাতে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

news24bd.tv/আলী