হারিয়ে যাওয়া এক উপত্যকা: 'তে ওতুকাপুরাঙ্গি'

হারিয়ে যাওয়া এক উপত্যকা: 'তে ওতুকাপুরাঙ্গি'

অনলাইন ডেস্ক

ওশেনিয়াতে অস্ট্রেলিয়ার ১ হাজার ৬শ' কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি দ্বীপ দেশ নিউজিল্যান্ড। ভূপ্রাকৃতিক বিস্ময় এই দেশটি পানির নীচে লুকিয়ে থাকা পৃথিবীর অষ্টম মহাদেশ 'জিল্যান্ডিয়া' হিসেবেও পরিচিত।  

নিউজিল্যান্ডে রয়েছে বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য হিসেবে পরিচিত এক ভূতাপীয় অঞ্চল যা দেশটির রোটোরুয়া অঞ্চলে পাহাড়ের পাশে নেমে আসা গোলাপী এবং সাদা রঙের সোপান। যা একসময়ে একটি দর্শনীয় স্থান বলে পরিচিত ছিল।

প্রায় দেড়শ' বছর আগে অগ্নুৎপাতে যা নষ্ট হয়ে যায়।

পৃথিবীর মূল থেকে প্রবাহিত ভূ-তাপীয় পানির দ্বারা সৃষ্ট এই সোপানগুলো শত শত বছর ধরে জমে স্ফটিক আকৃতি নিয়েছে। যা স্থানীয় রোটোমহানা হ্রদে ৩০ মিটার নেমে এসেছে। এই অঞ্চলটি ৭ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত।

১৯ শতকের শেষের দিকে অগ্নুৎপাতে ধ্বংসের আগে এই প্রাকৃতিক বিস্ময়গুলো ছিল নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যটনের আকর্ষণ কেন্দ্র। বিশ্বজুড়ে ধনী পর্যটকেরা 'তে ওতুকাপুরাঙ্গি' ( স্থানীয় ভাষায় গোলাপী) এই সোপানগুলোর গোলাপী পানিতে স্নান করতে আসতো। মনে করা হতো এই পানির আশ্চর্যজনকভাবে যে কোন রোগ সারিয়ে তোলার ক্ষমতা ছিল।

উপতক্যার ছবি

তবে সেখানে পৌঁছানো এতোটা সহজ ছিলো না। ব্রিটেন থেকে নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছাতে ৭৫ দিনের পথ পাড়ি দিতে হতো। এরপর অকল্যান্ড থেকে তউরাঙ্গা পর্যন্ত ভ্রমণ ছিলো প্রায় ২০০ কিলোমিটারের, এই পথ পাড়ি দিতে হতো বাষ্পীয় ট্রেনে। তারপর রোটোমহনা হয়ে রোটোরুয়া লেক পাড়ি দিতে হতো ঘোড়ায় টানা গাড়িতে চড়ে।

কিন্তু দীর্ঘ এই পথ পাড়ি দেয়ার পর অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় পর্যটকদের জন্য অপেক্ষা করত বিশাল দৃষ্টিনন্দন সিলিকা সোপানগুলো। বেসিনের স্তর এবং ফুটন্ত গিজারগুলির দিকে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকতেন পর্যটকেরা। তারা ছবি তুলে বা অনেকসময় ছবি এঁকে এই অসাধারণ দৃশ্যকে স্মৃতিবন্দি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন।

রোটোরুয়াতে তাদেরকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষায় থাকতো তে আরাওয়া মাওরির তুহৌরাঙ্গি উপজাতির নারীরা। ১৩২৫ সাল থেকে তারা এই আগ্নেয় উপত্যকা অঞ্চলের স্থায়ী অধিবাসী ছিলো। তারাই পর্যটকদের ওয়াকা (স্থানীয় বিশেষ ধরণের নৌকা) দিয়ে সোপানের পথ দেখিয়ে নিয়ে যেত।  

উপত্যকায় আগ্নেয়গিরি

এটি ছিল নিউজিল্যান্ডে আন্তর্জাতিক পর্যটনের জন্মস্থান, এবং এই মাওরিরা নিউজিল্যান্ডের প্রথম ট্যুর গাইড ছিল। এই নারী পর্যটন গাইডেরা তাদের সৌন্দর্য, বুদ্ধিমত্তা এবং উষ্ণ আতিথেয়তা দিয়ে পর্যটকদের মন জয় করে নিয়েছিল।  

সোফিয়া হিনারঙ্গি-গ্রে, যিনি গাইড সোফিয়া নামেও পরিচিত, তিনি রোটোরুয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত নারী হয়ে ওঠেন এবং শুধুমাত্র গোলাপী এবং সাদা টেরেসের প্রধান গাইড হিসেবেই নয়, হাজার হাজার মানুষের কাছে একজন শিক্ষিত দার্শনিক এবং বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন।

তিনি তার সম্প্রদায়ের একজন রোল মডেল ছিলেন এবং স্থানীয় নারীদেরকে তাদের গাইড হিসাবে কাজের মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতেও উত্সাহিত করেছিলেন।

উপত্যকায় হৃদ

তবে সোপানগুলো অগ্নুৎপাতে ধ্বংস হয়ে গেলেও আধুনিক পর্যটকেরা এখনও ভূতাত্ত্বিকভাবে আকর্ষণীয় এই অসাধারণ জায়গাটি ঘুরে আসতে পারেন। সেই একই পরিবারের বংশধরেরা এখনও তাদের উষ্ণ আতিথেয়তার মাধ্যমে তাদের সংস্কৃতির পর্যটকদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে চলেছেন।

রোটোরুয়া এবং ওয়াইমাঙ্গু আগ্নেয় উপত্যকার মধ্যবর্তী অর্ধেক পথ 'তে ওয়াইরোয়া' এখন সমাহিত গ্রাম নামে পরিচিত। এর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলির মূল স্তরে খনন করা হয়েছে। পর্যটকেরা সেখানে গেলে স্থানীয় মাওরি গাইডদের কাছ থেকে তাদের পূর্বপুরুষদের নিয়ে এখনো নানা রোমাঞ্চে পরিপূর্ণ গল্প শুনতে পাবেন।

আরও পড়ুন:

সুপারসনিক পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালালো ভারত


news24bd.tv/ নকিব