যেভাবে ১০০ ফুট ঢেউয়ের সাথে লড়ছে পর্তুগালের এক মৎস্যজীবী গ্রাম

যেভাবে ১০০ ফুট ঢেউয়ের সাথে লড়ছে পর্তুগালের এক মৎস্যজীবী গ্রাম

অনলাইন ডেস্ক

পর্তুগালের একটি বিখ্যাত সমুদ্রসৈকত নাজারে। এই স্থানটি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর সার্ফিংয়ের জন্য পরিচিত। সাধারণত প্রতিবছর অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত সার্ফিং করতে ও দেখতে লাখ লাখ পর্যটক এখানে এসে থাকে। আর সার্ফারদের জন্য এই জায়গাটি রোমাঞ্চের সর্বোচ্চ স্তর বলে পরিচিত।

এই সৈকতে এতো উঁচু ঢেউ ওঠে যে তা প্রায়ই ১০০ ফুট ছাড়িয়ে যায়। তবে খুব বেশিদিন আগে থেকে এখানে সার্ফিংয়ের প্রচলন শুরু হয়নি। স্থানীয়রা জানতো এখানে অনেক বড় বড় ঢেউ ওঠে। এমনকি শীতকালে তা তাদের লাইটহাউসকেও প্রায় ছাড়িয়ে যায়।

এসময় পর্বতসমান উঁচু ঢেউগুলো পুরো অঞ্চলকে কাঁপিয়ে তোলে। কিন্তু স্থানীয়রা খুব বেশিদিন আগেও ভাবেনি যে এই ভয়ংকর ঢেউয়ে সার্ফিং করা যেতে পারে।

সাফ্রিংয়ে বড় ঢেউ

শুধু স্থানীয়রাই নয়, প্রফেশনাল সার্ফাররাও বিশ্বাস করতো এখানে সার্ফিং করা সম্ভব নয়। ২০০৪ সালে, সার্ফিংয়ের জন্য বড় ঢেউ খুঁজে বেড়ানো একজন রোমাঞ্চপিপাসু সার্ফার এই সৈকতটি পর্যবেক্ষণ করতে আসে। মাত্র ৯০ মিনিট সার্ফিং করে তারা ফিরে যায়। এতো বড় ঢেউ সামলানোর জন্য জেট স্কি ছিলো না তাদের। তবে থাকলেও এটা দিয়ে সার্ফিং সম্ভব নয় বলে মনে করে তারা। কারণ এখানে বিভিন্ন দিক থেকে ঢেউ আসে, যা সার্ফিংয়ের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক।

২০০৮ সালে স্থানীয় সরকার এই সৈকতে সার্ফিংয়ের সম্ভাবনা দেখতে পায় এবং এখানে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা পর্তুগীজ হাইডোগ্রাফিক ইনস্টিউটের সঙ্গে এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করে। এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬০ সাল থেকে এই অঞ্চলের বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করছে।

সার্ফিং দেখছে দর্শক

সার্ফিং শিক্ষক ও লাইফগার্ড পাওলো সালভাদর বলেন, এটা কখনোই সার্ফারদের কাছে অনুকূল ছিলো না। সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল গ্রীষ্মের বাইরে পর্যটকদের এখানে নিয়ে আসা।

দুই বছর পর, অর্থাৎ ২০১০ সালে ফান্ডিং পাওয়ার পর ম্যাকনামারা প্রমাণ করেন সঠিক সরঞ্জাম থাকলে নাজারের এই পর্বতপ্রমাণ ঢেউয়ের উপর সার্ফিং করা সম্ভব। বছরখানেক পরে ম্যাকনামারা এখানেই ৭৮ফুট উঁচু ঢেউয়ে সার্ফিংয়ের বিশ্বরেকর্ড গড়েন।  

এখানে সার্ফিংয়ের মূল প্রশ্নটি ছিল- এমন কেউ কি আছে যে এটা চেষ্টা করার জন্য যথেস্ট সাহসী ও পাগল! এমনকি প্রফেশনালদের জন্য নাজারে সৈকতের এই ঢেউগুলো ছিল প্রাণঘাতী।

সাফিংয়ের উৎসব

পর্তুগীজ সার্ফার নিক ভন রাপ বলেন, হাওয়াইয়ের ঢেউগুলো সার্ফারদের কাছে আকর্ষণীয় কারণ সেগুলো পারফেক্ট এবং ঝুঁকিও কম। নিক ২০০৪ সালে যে দলটি পর্যবেক্ষণে এসেছিল তার অংশ ছিল। যদিও তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর।

নিক বলেন, এখানের ঢেউগুলো দানবীয়, দৈত্যাকার। এটা বহুতল ভবন বা এক পর্বতের দিকে তাকিয়ে থাকার মত। শুধু পার্থক্য হল এটা কোন দিক থেকে আসছে আপনি বুঝতে পারবেন না এবং এটা আপনাকে কাঁচা খেয়ে ফেলতে আসছে।

তবে এতো ঝুঁকি থাকলেও এখানে এখনও সার্ফিংয়ের সময় দুর্ঘটনায় কোন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। ২০১০ সালের আগে, শীতকালে এখানে প্রতিবছর ১৫ হাজার পর্যটক বেড়াতে আসতো। কিন্তু ২০১৪ সালে ঢেউ সম্পর্কিত জাদুঘর স্থাপনের পর থেকে এখন পর্যন্ত এখানে প্রায় ১০ লক্ষ পর্যটক বেড়াতে এসেছে। শুধুমাত্র ২০১৯ সালেই পর্যটক ছিলো প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ।

আরও পড়ুন:

আফগানিস্তানের জন্য আজ 'সবকিছু' করতে রাজি ভারতীয়রা


news24bd.tv/ নকিব