প্রাণহানি থামছেই না; এ পর্যন্ত নিহত ২৭

প্রাণহানি থামছেই না; এ পর্যন্ত নিহত ২৭

অনলাইন ডেস্ক

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত হামলা ও সংঘর্ষে ২৭ জন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে চার শতাধিকেরও বেশি। সর্বশেষ গতকাল সোমবার মেহেরপুর জেলার গাংনীতে দুজন নিহত হয়েছেন।

প্রথম ধাপে ৩৬৪টি ইউনিয়নে নির্বাচন হয়েছে।

দুই পর্বে ২১ জুন ও ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে সাতজন নিহত হয়েছেন। প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছে ২০০-এর বেশি লোক। ভোটগ্রহণের দিনও গুলিবর্ষণ ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশকেও গুলি ছুড়তে হয়।

দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১১ নভেম্বর আরো ৮৪৬টি ইউপিতে ভোট হতে যাচ্ছে। এ  ধাপের নির্বাচনে গত ২৭ এপ্রিল থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হয়েছে। তৃতীয় ধাপে নির্বাচন হবে এক হাজার তিনটি ইউপিতে। ভোটের দিন ধার্য আছে ২৮ নভেম্বর। ১২ নভেম্বর থেকে এসব ইউপিতে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হবে।

প্রথম ধাপের পর গতকাল পর্যন্ত নির্বাচনী সহিংসতায় ২০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে দুই শতাধিক। এর মধ্যে নরসিংদীতে দুইবারে ছয়জন, মাগুরায় চারজন, মেহেরপুরে দুজন, রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে দুই দফায় দুজন এবং কক্সবাজার, সিলেট, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, মৌলভীবাজার, পটুয়াখালী ও  ফরিদপুরে একজন করে নিহত হন।

২৭ অক্টোবর কুমিল্লার দাউদকান্দিতে গুলিবিদ্ধ হন ছাত্রলীগের স্থানীয় একজন নেতা।

একই দিনে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কার্যালয়ে হামলা এবং নেত্রকোনার সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশিউড়া ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়। ওই দিন এ ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে আরো অনেক এলাকায়।

২৫ অক্টোবর নরসিংদীর রায়পুরে গুলিবিদ্ধ হন ২০ জন। হামলা, ভাঙচুর—এসব ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে।  

৩১ অক্টোবর সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে দুই পক্ষের হামলায় আহত হয় কমপক্ষে ৩২ জন। ১ নভেম্বর কুমিল্লা, বগুড়াসহ দেশের সাতটি স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ২ নভেম্বর দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১২টি মোটরসাইকেলে আগুন ও সাত স্থানে হামলা হয়। ৩ নভেম্বর  ধামরাইয়ে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলা ও সংঘর্ষে আহত হয় অন্তত ৬০ জন। ৭ নভেম্বর কক্সাজারসহ বিভিন্ন স্থানে হামলায় আহত হয় কমপক্ষে ৪৬ জন।

এখন পর্যন্ত রাজধানীর পাশের নরসিংদীতে সবচেয়ে বেশি ছয়জন নিহত হয়েছেন।

দেশে এবার দ্বিতীয়বারের মতো ইউপির চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। বিএনপি এ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেয়নি। জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি দলের অংশগ্রহণও অনেকটা নামমাত্র। মাঠে বড় দল হিসেবে আওয়ামী লীগ একাই। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবং এ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যেই মূলত সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

গত ৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে অনলাইন সভায় আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কার কথা জানান মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। সহিংসতা এড়াতে নির্বাচনের আগে বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়া এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থিতা বাতিলের মতো কঠোর শাস্তির প্রস্তাব করেন তাঁরা। সভায় ঢাকা, খুলনা এবং সিলেট বিভাগের সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করে আরো বেশি পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের প্রস্তাব রাখেন কয়েকজন বিভাগীয় কমিশনার এবং পুলিশের ডিআইজি পদের কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাড়তি পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিলেই সহিংসতা কমে আসবে, তা বলা যায় না। ’ তার মতে , গণমাধ্যমে সংহিসতার খবর যত দ্রুত আসে তাঁদের কাছে তা আসে না। তাই ঘটনা জানার পর তাঁরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেন।

 আরও পড়ুন:

তারেক বিলাসী জীবনের টাকা কোথায় পায়, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর


এদিকে সাবেক নির্বাচন কমিশনার আব্দুল মোবারক বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারলে নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষা সম্ভব। কিন্তু তারা তা পারছে না। এর জন্য রাজনৈতিক প্রভাবও দায়ী। দলীয় পরিচয়ের কারণে একজন মেম্বার পদপ্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও দ্বিধায় থাকে পুলিশ। ভয় থাকে হঠাৎ  বদলি হওয়া বা অন্য কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সম্মুখীন হওয়ার।  

news24bd.tv রিমু 

এই রকম আরও টপিক