ধর্ষণ ঠেকাতে হাঁটু চেপে রাখা তত্ত্ব ও রেইনট্রির ধর্ষণ মামলার রায়

ধর্ষণ ঠেকাতে হাঁটু চেপে রাখা তত্ত্ব ও রেইনট্রির ধর্ষণ মামলার রায়

Other

‘"sex and pain sometimes go together, that — that's not necessarily a bad thing."- সাধারণ আড্ডায় কথাটাকে নির্দোষ মনেই হতে পারে। কিন্তু ধর্ষণের শিকার হওয়া কোনো নারীকে যদি কেউ এই কথা বলে! কিংবা যদি বলে,’ এই মেয়ে, তুমি তোমার দুই হাঁটু একসাথে চেপে রাখতে পারলে না? কিংবা তোমার বিশেষ অঙ্গটিকে এমনভাবে সংকোচিত করে রাখতে পারলে না যাতে পুরুষটির বিশেষ অঙ্গ ঢুকতেই না পারে!’

বন্ধুদের সঙ্গে পার্টিতে গিয়ে আরেক বন্ধু কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হওয়া ১৯ বছরের এক তরুণী যখন বিচার চাইতে আদালতের স্মরণাপন্ন হয়, তখন খোদ বিচারক রবিন ক্যাম্প এই কথাগুলো বলেছিলেন ধর্ষণের শিকার মেয়েটির উদ্দেশ্যে। আর তিনি সেগুলো বলেছিলেন বিচার কার্য পরিচালনার সময় প্রিসাইডিং জাজ হিসেবে দায়িত্বপালনরত অবস্থায়। রায়ে রবিন ক্যাম্প অভিযুক্তকে খালাস দেন।

ঘটনাটা ২০১৪ সালের, কানাডার আলবার্টার প্রভিন্সিয়াল আদালতের। পরে অবশ্য আপিলে তার এই রায় বাতিল হয়ে যায় এবং নতুন করে বিচারের নির্দেশ হয়। নতুন বিচারেও অভিযুক্ত খালাস পায় এবং আদালত অভিযোগকারীকে ‘ইনকনসিস্টেন্ট এবং নট ক্রেডিবল’ বলে মন্তব্য করে। কিন্তু রবিন ক্যাম্পের ‘ধর্ষণ ঠেকাতে হাঁটু চেপে রাখার’ তত্ত্বের কারণে তার (তিনি এখনো "knees together judge" হিসেবে পরিচিত) বিচারক জীবনের ইতি ঘটে।

সেই কাহিনীই বলি।

২০১৬ সালে ফেডারেল আদালতের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের জন্য রবিন ক্যাম্পের নাম আসে। সেই সময় ক্যালগেরির কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ২০১৪ সালে ক্যাম্পের দেয়া সেই মামলার রায়ের ট্রান্সক্রিপ্ট যুক্ত করে এটর্নী জেনালের অফিসে (আইন মন্ত্রণালয়কে কানাডায় এটর্নী জেনারেল অফিস বলা হয়) তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। সঙ্গে সঙ্গে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে কানাডীয়ান জুডিশিয়াল কাউন্সিল সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফেডারেল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে কানাডার সবকটি প্রভিন্সের প্রধান বিচারপতিদের সমন্বয়ে গঠিত কানাডীয়ান জুডিশিয়াল কাউন্সিল দীর্ঘ শুনানী শেষে তাকে অপসারনের সুপারিশ করে তা কার্যকর করতে সরকারের কাছে পাঠায়। সংসদে তার অপসারণের সিদ্ধান্ত উঠার আগেই তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে দেন।

বিচারপতি রবিন ক্যাম্পের কাহিনীটা খুবই চমকপ্রদ অবশ্যই। সেদিকে না গিয়ে তাকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে কানাডীয়ান জুডিশিয়াল কাউন্সিল যে যুক্তিটি দিয়েছিলো, সেটি উল্লেখ করি-  কানাডীয়ান আদালত স্বাধীন এবং নিরপেক্ষভাবে মর্যাদার সাথে কাজ করে বলে সাধারণ মানুষের মনে যে বিশ্বাস রয়েছে, রবিন ক্যাম্পের বক্তব্য সেই বিশ্বাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মানুষের বিশ্বাসের মূল্য দেয়ার জন্যই তাকে বিচার বিভাগ থেকে অপসারণের কোনো বিকল্প নাই।

রেইনট্রি কোর্টে ধর্ষণ মামলায় রায় প্রদানকারী বিচারকের সঙ্গে রবিন ক্যাম্পের ঘটনার সামঞ্জস্য আছে বলে আমার মনে হয়েছে। ‘আদালত  স্বাধীন এবং নিরপেক্ষভাবে মর্যাদার সাথে কাজ করে বলে সাধারণ মানুষের মনে যে বিশ্বাস রয়েছে’ সেই বিশ্বাসকে মর্যাদা দিতে রবিন ক্যাম্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একই কারণে এই  বিচারকের ব্যাপারে একটি পর্যালোচনা বা তদন্ত হওয়া জরুরী।

আরও পড়ুন


দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে ২ বছরে ২০০ পিকআপ চুরি করে রাজু

news24bd.tv এসএম