তার নাম শুনলে বাঘা বাঘা গবেষক নড়েচড়ে বসে!

তার নাম শুনলে বাঘা বাঘা গবেষক নড়েচড়ে বসে!

Other

প্রফেসর ব‍্যাকভাল ছিলেন ডিপার্টমেন্টের রিসার্চ হেড। এই লোকের খ‍্যাতি অনেক। তার নাম শুনলে দুনিয়ার বহু বাঘা বাঘা গবেষক নড়েচড়ে বসে। মেপে মেপে কথা বলে।

প্রফেসর ব‍্যাকভাল ২০১০ সালে কেমেস্ট্রি নোবেল প্রাইজ কমিটির মেম্বার ছিলেন। তার ওজন বুঝাতে, এর বেশি পরিচয় সম্ভবত দেয়ার দরকার নেই।  

তিনি আমাদের একটা পিএইচডি কোর্স পড়াতেন। কোর্সের নাম ফিজিক‍্যাল অর্গানিক কেমেস্ট্রি।

এই কোর্স করে শুধু পিএইচডি স্টুডেন্টরা। কোর্স পরীক্ষার আগে এক সপ্তাহ ধরে স্টুডেন্টদের নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। অন‍্যান‍্য কাজ ফ্রোজেন হয়ে থাকে।  

এই কোর্স পরীক্ষার আগে প্রতিদিন তিনবার করে গোসল করতাম। দুই ঘণ্টা পড়ার পর মাথা দিয়ে ধোঁয়া উড়তো। মনে হতো চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। রবীন্দ্রনাথের “এখনি অন্ধ বন্ধ করো না পাখা” জপলেও, কোন শান্তি পেতাম না। বাথরুমে গিয়ে বিশ মিনিট ঝর্নার পানি ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। শরীর যখন ঠান্ডায় চাঁদপুরের ইলিশের মতো হিম হয়ে আসতো তখন বের হয়ে আবার পড়তে শুরু করতাম।  

আরও পড়ুন


ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৫ জনকে কোপাল দুর্বৃত্তরা


কোর্সের এক স্টুডেন্ট ছিল ইতালিয়ান। তার নাম লুকা। এই ছেলেটার চেহারায় একটা রেঁনেসা যুগের ছাপ। দাঁড়ি, গোঁফে একেবারে রেঁনেসা যুগের বিজ্ঞানীদের মতো। তার ইংরেজি ছিল খুবই দুর্বল। এ কারণে সে পারত পক্ষে অন‍্যদের সাথে কথা বলতো না। কিন্তু সে যখন নিজের ভাষায় কারো সাথে কথা বলতো, মনে হতো করিডোরে কেউ বক্তৃতা দিচ্ছে। শব্দের প্রকম্পনে গ্লাসগুলো ফেঁটে পড়বে।  

কোর্স পরীক্ষার দিন লুকা পরীক্ষা দিতে আসলো না। স্টুডেন্ট হলো মাত্র আঠারো জন। সুতরাং কেউ না আসলে চোখে পড়ে। প্রফেসর ব‍্যাকভাল দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। কেন আসলো না সেটা নিয়ে ফিসফাস শুরু হলো। আমাদেরকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন। অস্থির হয়ে গেলেন।  

তাকে দেখে মনে হলো তিনি এখনই ফিট হয়ে পড়ে যাবেন। আর আমরা পরীক্ষা দেয়া বাদ দিয়ে তার সুস্থতার জন‍্য প্রার্থনা করতে থাকবো। হয়তো দেখা যাবে লুকা কোন কারণ ছাড়াই পরীক্ষা দিতে আসেনি। কিন্তু সে দেশে ছাত্রের চেয়ে শিক্ষকের টেনশন বেশি। —আহারে! 

কোর্স পরীক্ষা হওয়ার পর একটা ইমেইল পেলাম। সে ইমেইলে একটা লিংক দেয়া ছিল। লিংকে গিয়ে কোর্স ও শিক্ষকের মূল‍্যায়ন করতে হবে। কোর্সের বিষয়বস্তু কেমন ছিল, টিচার কেমন পড়িয়েছেন ইত‍্যাদি অনেকগুলো প্রশ্নের রেটিং করতে হয়।  

আগেও কোর্স শেষে এধরণের ইভ‍্যালুয়েশন করেছি। কিন্তু ব‍্যাকভালের ব‍্যাপারেও মূল‍্যায়ন করতে হবে—এটা ভাবিনি। মনে করেছিলাম, এই লোক হলো রিসার্চ হেড, হয়তো তার ম‍ূল‍্যায়ন করতে হবে না। কিন্তু আমার ধারণা ছিল ভুল।  

আমি বুঝলাম, যে জাতি ম‍ূল‍্যায়নের ব‍্যাপারে, জবাবদিহিতার ব‍্যাপারে কাউকে ছাড় দেয় না, সে জাতি শত বছর সগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকবে।  

লেখাটি রাউফুল আলমের ফেসবুক থেকে নেওয়া (সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

news24bd.tv/ কামরুল