দুনিয়াতে সফলতা অর্জনের গোপন রহস্য

দুনিয়াতে সফলতা অর্জনের গোপন রহস্য

অনলাইন ডেস্ক

আত্মীয়ই মানুষের ভালোবাসার আশ্রয়, যা কোনো দূর দেশে না গেলে মানুষ কখনো অনুভব করতে পারে না। যারা প্রবাসে থাকে, তাদের কাছে নিজ শিকড়ের চেনা মুখগুলোও খুব আপন মনে হয়, যাদের সঙ্গে রক্তের সম্পর্কও নেই। এটাই বাস্তবতা।

পবিত্র কোরআনে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাকো। আর ভয় করো রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে।
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর পর্যবেক্ষক। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘(তারাই বিবেকবান) আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে আদেশ দিয়েছেন, যারা তা অক্ষুণ্ন রাখে এবং তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, আর ভয় করে কঠোর হিসাবকে। ’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ২১)

এ আয়াতে বলা হয়েছে, বিবেকবান ঈমানদাররা আত্মীয়তার সম্পর্কের ব্যাপারে অত্যন্ত যত্নবান হয়। পাশাপাশি তারা সার্বিক বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করে। এই ভয় উৎসারিত হয় সম্মান, জ্ঞান, ভক্তি ও ভালোবাসা থেকে। তাদের কাছে প্রতিটি কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই মুখ্য হয়ে থাকে। বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ অনুকূল-প্রতিকূল সব পরিস্থিতিতে পরকালের জবাবদিহির ভয় করে। আল্লাহর ভয় ও পরকালে জবাবদিহির ভয় মানুষকে বিশ্বাস ও বিবেক নির্দেশিত পথে পরিচালিত করে। এর বিনিময়ে মহান আল্লাহ তাদের দুনিয়া-আখিরাতে যেমন সম্মানী করেন, তেমনি তাদের হায়াত ও রিজিকেও বরকত দান করেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমি নবী করিম (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার রিজিক প্রশস্ত ও আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৮৫)

এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, দুনিয়াতে সফলতা অর্জনের একটি গোপন রহস্য হলো, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা।

সাধারণত রক্ত, বংশ কিংবা বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপিত হয়। অনেক সময় বন্ধুত্ব থেকেও আত্মীয়তার মতো সম্পর্ক তৈরি হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা আত্মীয়তার সম্পর্ক থেকেও গভীর হয়। ইসলামের বিধান অনুযায়ী আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা অত্যাবশ্যকীয়। মহান আল্লাহ আমাদের উপার্জনের কিছু অংশে আত্মীয়-স্বজনের হক রেখে দিয়েছেন। যা তাদের দিয়ে দেওয়ার জন্য স্পষ্ট ভাষায় আদেশ করেছেন। পাশাপাশি এই কাজটি সফলতার সূত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব আত্মীয়-স্বজনকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও। এটি উত্তম তাদের জন্য, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চায় এবং তারাই সফলকাম। ’ (সুরা : রুম, আয়াত : ৩৮)

আরও পড়ুন:


যে দোয়া পাঠে গুনাহ মাফ হবে


ইসলামে রক্তের সম্পর্ক এতটাই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যে ব্যক্তি তার আত্মীয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখবে, মহান আল্লাহ তার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখবেন। আর আল্লাহকে পাওয়াই তো সবচেয়ে বড় সফলতা। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহ যাবতীয় সৃষ্টিকে পয়দা করলেন। যখন তিনি সৃষ্টি কাজ সমাধা করলেন, তখন আত্মীয়তার সম্পর্ক বলে উঠল, সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে আপনার আশ্রয় লাভকারীদের এটাই যথাযোগ্য স্থান। তিনি (আল্লাহ) বলেন, ‘হ্যাঁ, তুমি কি এতে খুশি নও যে তোমার সঙ্গে যে সুসম্পর্ক রাখবে, আমিও তার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখব। আর যে তোমার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আমিও তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করব। সে (রক্ত সম্পর্ক) বলল, হ্যাঁ, আমি সন্তুষ্ট হে আমার রব, আল্লাহ বলেন, ‘তাহলে এই মর্যাদা তোমাকে দেওয়া হলো। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৮৭)

অতএব, যারা জীবনে সফলতা অর্জন করতে চায়, আর্থিক সচ্ছলতা আনতে চায়, তাদের অবশ্যই আত্মীয়-স্বজনের অধিকার বাস্তবায়নে সচেষ্ট হওয়া আবশ্যক।

মহান আল্লাহ তা'আলা সবাইকে তাওফিক দান করুন।  

news24bd.tv রিমু