‘গোপন রোগ’ সারাতে ছাগলের অণ্ডকোষ মানুষে প্রতিস্থাপন!

অস্ত্রোপচার।

‘গোপন রোগ’ সারাতে ছাগলের অণ্ডকোষ মানুষে প্রতিস্থাপন!

অনলাইন ডেস্ক

যৌন দুর্বলতা কাটাতে রোগীর শরীরে ছাগলের অণ্ডকোষ প্রতিস্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এক চিকিৎসক। তাই দেখতে জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটছিল কানসাস স্টেট মেডিকেল বোর্ডের একটি দল। সেই সঙ্গে ছুটছিলেন সাংবাদিকরাও। ১৯৩০-এর সেপ্টেম্বরে কানসাসের মিলফোর্ডের ঘটনা এটি।

কানসাস স্টেট মেডিকেল বোর্ডের দলটি ঘরের এক কোনে দাঁড়িয়ে দেখল কীভাবে জীবন্ত ছাগলের নিম্নাংশ অসাড় করে তার দুটি অণ্ডকোষ কেটে বের করে আনলেন ওই চিকিৎসক।

তারপর পাশের টেবিলে শুয়ে থাকা রোগীর শরীরে খুব সন্তর্পনে সেগুলো প্রতিস্থাপন করলেন।

এই অস্ত্রোপচার নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। কিন্তু এই একটি অস্ত্রোপচারই সারা বিশ্বে পরিচিতি এনে দিয়েছিল তাঁকে।

‘গোট গ্ল্যান্ড ডাক্তার’ হিসেবে এক নামে সকলে চেনেন তাঁকে।

১৯০৮ সালে স্ত্রীকে নিয়ে শিকাগোয় চলে যান তিনি। সেখানে বেনেট মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখানেই ব্রিঙ্কলে মানব শরীর সম্পর্কে বিবিধ জ্ঞান অর্জন করেন। কিন্তু তিন বছর পর মাইনে না দেওয়ায় তাঁকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়। ফলে তাঁর কাছে কোনও চিকিৎসকের শংসাপত্র ছিল না। এরপর তিনি নিজের জন্য একটি নকল প্রশংসাপত্র জোগার করেন।

তারপর তিনি গ্রিনভিলেতে চলে যান এবং সেখানে আরও এক সহযোগীর সঙ্গে বিশেষ এক তেল বিক্রি করতে শুরু করেন। মানুষকে বোকা বানিয়ে যৌনসঙ্গমের সময় পুরুষাঙ্গ শক্তিশালী করার কথা বলে এই ওষুধ বিক্রি করতেন তাঁরা।

কিন্তু কয়েক মাস এভাবে চলার পর তাঁদের প্রতারণা ধরা পড়ে। ব্যবসা গুটিয়ে দুজনেই সেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে গ্রেফতারও হয়েছিলেন দুজনে।

এরপরই তাঁর কানসাসে আসা। ওষুধ বিক্রির জন্য নকল শংসাপত্র কাজে লাগিয়েছিলেন এখানে। নিজেকে নারী এবং শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে তুলে ধরেছিলেন। কানসাসের সেনা রিজার্ভ মেডিকেল বিভাগের চিকিৎসক হিসেবে কাজ পেয়ে যান। মাইনের টাকাতেই স্বপ্নপূরণ করেন ব্রিঙ্কলে। সে শহরের ইলেক্টিক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিজে স্নাতক হন।

এরপর তিনি বিভিন্ন প্রাণীর শরীর নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। তখনই নাকি তিনি জেনেছিলেন সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর প্রাণী ছাগল। ১৯১৭ সালে কানসাসে নিজের ১৬ ঘরের একটি ক্লিনিক খুলে ফেলেন তিনি। স্থানীয়দের সবরকম রোগেরই চিকিৎসা করতেন এই ক্লিনিকে। কিন্তু পরে একজন সার্জেন হিসাবে তিনি নাম এবং অর্থ উপার্জন করেছিলেন।

১৯১৮ সালেই বিল স্টিটসওয়ার্থ নামে এক ব্যক্তি তাঁর ক্লিনিকে এসেছিলেন। নিজের যৌন দুর্বলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন বিল। ব্রিঙ্কলে নেহাত মজা করেই তাঁকে বলেছিলেন, ছাগলের এক জোড়া অণ্ডকোষেই তাঁর মুক্তি লুকিয়ে রয়েছে। এরপর ব্রিঙ্কলের পেছনে পড়ে যান বিল। ছাগলের অণ্ডকোষ নিজের শরীরে প্রতিস্থাপনের জন্য একপ্রকার নাছোড়বান্দা হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর জোরাজুরিতেই এ রকম একটা অস্ত্রোপচার করতে সম্মত হয়েছিলেন ব্রিঙ্কলে।

তবে এর ভিন্ন মতও রয়েছে। বিলের পরিবারের দাবি, ব্রিঙ্কলেই নিজের টাকার বিনিময়ে বিলকে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে রাজি করিয়েছিলেন। অস্ত্রোপচার সফল হয়। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন বিল। তারপর ঝড়ের গতিতে ব্রিঙ্কলের কথা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল।

ব্রিঙ্কলের ক্লিনিকের বাইরে রোগীদের লাইন পড়ে যেতে শুরু করে। প্রচুর উপার্জন করেন তিনি। তাঁর কাছে প্রতিনিয়ত ছাগল সরবরাহ করতেন এক ব্যক্তি। এক নারীর দেহে ছাগলের ডিম্বাশয়ও প্রতিস্থাপন করেছিলেন। উপার্জিত অর্থে শহরের উন্নয়নেরও কাজে লাগিয়েছিলেন তিনি। একটি ডাকঘর, একটি ব্যাঙ্ক, রাস্তায় বৈদ্যুতিন আলো লাগিয়েছিলেন তিনি। একটি চিড়িয়াখানা খোলার চেষ্টাও করেছিলেন।

১৯২৩ সালে নিজের রেডিয়ো স্টেশন চালু করেন। তার মাধ্যমে নিজের আরও প্রচার করতেন। প্রতিদিনের অস্ত্রোপচারের কথা এবং নিজের অভিজ্ঞতা এর মাধ্যমে সকলের কাছে পৌঁছে দিতেন তিনি।

খুব বেশি দিন এভাবে কাটাতে পারেননি। প্রাথমিকভাবে অস্ত্রোপচার সফল মনে হলেও তাঁর রোগীরা ক্রমে অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করেন।

কারও সঙ্গী হলো ভয়ঙ্কর সংক্রমণ, কারও মৃত্যু ঘটল। ১৯৩০ সালে চিকিৎসকের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হয় তাঁর। এর ছ’মাস পর রেডিয়ো লাইসেন্সও বাতিল হয়ে যায়।

এরপর রাজনীতিতে হাত পাকাতে শুরু করেন ব্রিঙ্কলে। একাধিক বার কানসাসের গভর্নর হওয়ার ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রতি বারই পরাজিত হন।

এরপর টেক্সাসে গিয়েও লুকিয়ে তিনি ছাগলের গ্রন্থি মানব শরীরে প্রতিস্থাপনের কাজ করতে শুরু করেন।

প্রচুর উপার্জন করেন সেখান থেকেও। তাঁর এবং স্ত্রীর জন্য ১৬ একর জমির উপর একটি প্রাসাদ বানিয়ে থাকতে শুরু করেন। বিলাসবহুল ছিল সেই প্রাসাদ।

টেক্সাসেও লোক ঠকানোর এই কাজ বেশি দিন চালাতে পারেননি। জানাজানি হতেই তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ৩০ লাখ ডলার জরিমানা নেওয়া হয় তার কাছ থেকে। ১৯৪১ সাল নাগাদ নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন তিনি।

জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে ফের ধুলোয় মিশে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি ব্রিঙ্কলে। তিন বার হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। ক্রমে স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে। ১৯৪২ সালের ২৬ মে সান অন্টোনিয়োতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয় তার।

আরও পড়ুন: 

‌‌‘শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া’ ইস্যুতে যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

news24bd.tv তৌহিদ