হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তাদের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে

শওগাত আলী সাগর।

হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তাদের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে

Other

১. ‘ঢাকার খেলার মাঠে পাকিস্তানী পতাকা উড়িয়ে উল্লাস করছে বাংলাদেশিরাই’- এই দৃশ্যটি অসহনীয়। কিন্তু যারা পাকিস্তানী পতাকা নিয়ে মাঠে গেছে- তাদের আমি শুরুতেই গালি দেবো না। তার  আগে তাদের মানসপটটা বোঝার চেষ্টা করবো।   বাংলাদেশ- পাকিস্তানের মধ্যকার খেলায় বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে পাকিস্তানকে সমর্থন এবং সেদেশের পতাকা নিয়ে উল্লাস করার পেছনে তাদের কী ভাবনা কাজ করেছে- সেটা বোঝার  চেষ্টা করতে চাইব।

ইতিমধ্যে কোনো মিডিয়া তাদের এই প্রশ্নটা করেছে কী না জানি না। কিন্তু করাটা দরকার ছিলো। তারা কেন এটা করছে- কেবল সেটা জানার জন্যই না, আমাদের এতে কোনো দায় আছে কী না, সেটা বোঝার জন্যও আমি এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার পক্ষে।

২. খেলার মাঠে পাকিস্তানকে সমর্থন করা বা পাকিস্তানের পক্ষে উল্লাস করা নতুন কোনো ঘটনা নয়।

অনেক দিন ধরেই এগুলো চলে আসছে। এখন সেটা সংখ্যায় বেড়েছে। ‘খেলার সঙ্গে রাজনীতি মিশাবেন না’- এমন আপ্তবাক্য আর ‘এরা সব পাকি জারজ সন্তান’- এমন গালি দিয়েই আমরা আমাদের দায়িত্ব শেষ করেছি। এর বাইরে আর আর কিছু ভাববার দরকার আছে বলে কখনো মনে করিনি।

৩. খেলার সাথে কেন রাজনীতি জড়িয়ে যায়, কেবল রাজনীতিই নয, সংস্কৃতি, দেশপ্রেম জড়িয়ে যায়- সেগুলো বোঝার সক্ষমতা না থাকলে, অন্যকে বোঝানোর সক্ষমতা না থাকলে . আমরা অন্যকে কী দিয়ে প্রভাবিত করবো! ‘পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করেছি, কিংবা পাকিস্তানীদের নৃসংসতা’ অন্যদের কেন স্পর্শ করা উচিৎ-  এই বোধটা এই মানুষগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব ছিলো কী না- সেটাও  ভাববার চেষ্টার মধ্যে রাখতে চাই।

৪. রাজনীতি, সংস্কৃতির চর্চা না থাকা একটা দেশে ‘বাংলাদেশ নব্বই শতাংশ মুসলমানদের দেশ’ প্রচারণার সঙ্গে সঙ্গে একটা জনগোষ্ঠীর কাছে পাকিস্তান তাদের মুসলিম উম্মাহ হিসেবে ঠাঁই পেয়েছে কী না, মুসলমানিত্বের শতকরা হিসেবে তাদের কাছে বাংলাদেশ ‌‘কম ইসলামি দেশ’ মনে হয়েছে কী না- এইগেুলো জানার কৌতূহল্ও আমার আছে।

আরও পড়ুন: 


ফখরুল বললেন, আন্দোলন-আন্দোলন-আন্দোলন

ধর্ষণ মামলায় জামিন: ক্ষমা চাইলেন বিচারক


৫. মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে খেলার মাঠে পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে উল্লাস করা মানুষের সংখ্যা কেন বাড়ে, কীভাবে বাড়ে, রাষ্ট্র হিসেবে, সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালনে কোনো ঘাটতি আছে কী না, লেখক হিসেবে, সংস্কৃতি কর্মী হিসেবে, মিডিয়া হিসেবে- নাগরিকদের মনন এবং মনে দেশ প্রেম, স্বাধীনতাযুদ্ধের মন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা আমরা রেখেছি কী না- এগুলো নিয়ে ভাবাটাকে আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করবো।

৬. পাকিস্তানী পতাকা্ওয়ালাদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে গালি দিয়ে, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তাদের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।
স্বাধীনতা বিরোধী, সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান যাতে দেশে না ঘটে, সেটা নিশ্চিত করতে ‘আওয়ামী লীগের অপরিহার্যতা’ আমরাই কিন্তু জনগণের সামনে তুলে ধরেছিলাম।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের কোনো জনগোষ্ঠীর মনে পাকিস্তান প্রেম কীভাবে বেড়ে ওঠে- সেই প্রশ্নের উত্তরও  আমাদেরই দিতে হবে। অন্য কারো কাছে না হলেও নিজের কাছে তো বটেই।

শওগাত আলী সাগর, প্রধান সম্পাদক, নতুন দেশ, কানাডা।

news24bd.tv তৌহিদ