মহানবী (সা.)-এর জীবনী পাঠ করলে জানা যায়, শৈশবে তার পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা ছিল না। কিশোর বয়সে সামান্য অর্থের বিনিময়ে তিনি মক্কাবাসীর পশু চরাতেন। যুবক বয়সে তিনি খাদিজা (রা.)-এর প্রতিনিধি হিসেবে বাণিজ্য কাফেলার সঙ্গে শামে যান এবং অনেক বেশি লাভবান হন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সততা ও বিচক্ষণতায় মুগ্ধ হয়ে খাদিজা (রা.) তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান এবং পারিবারিকভাবে উভয়ের মধ্যে বিয়ে হয়।
কোনো সন্দেহ নেই নবুয়ত লাভের আগে মহানবী (সা.) ব্যবসা করতেন, পরিবারের জন্য উপার্জন করতেন।যেভাবে পারিবারিক ব্যয় নির্বাহ করতেন
নবুয়ত লাভের পর দ্বিনি দায়িত্ব পালন করার কারণে তাঁর অখণ্ড অবসরও ছিল না যে তিনি অন্য সবার মতো ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য কোনো কাজ করবেন। তাই নবুয়ত লাভের পর তাঁর পারিবারিক খরচ কিভাবে নির্বাহ করতেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। প্রশ্নটি সামনে রেখে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর আমি যা পেয়েছি তা হলো—
১. ব্যবসা : একাধিক হাদিসে এসেছে রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করছেন এবং বিক্রয়ও করছেন, যা থেকে ধারণা লাভ করা যায় যে তিনি নিয়মিত ব্যবসা না করলেও কখনো কখনো তা করতেন।
২. গনিমত : মহানবী (সা.)-এর পারিবারিক খরচ নির্বাহ করার একটি মাধ্যম ছিল গনিমত তথা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ। ইসলামী শরিয়তের বিধান মতে যুদ্ধলব্ধ সম্পদের পাঁচ ভাগের চার ভাগ মুজাহিদরা লাভ করে এবং এক ভাগ আল্লাহ, তাঁর রাসুল, নিকটাত্মীয়, এতিম, অসহায় ও মুসাফিররা লাভ করে থাকে।
৩. ফাই : বিনা যুদ্ধে অমুসলিমদের কোনো সম্পদ মুসলমানের হস্তগত হলে তার পাঁচ ভাগের চার ভাগ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য নির্ধারিত। অবশিষ্ট এক ভাগ রাসুলুল্লাহ (সা.), তাঁর পরিবার ও নিকটাত্মীয়, এতিম, অসহায় ও মুসাফিরের জন্য নির্ধারিত। নবীজি (সা.)-এর পারিবারিক খরচ নির্বাহে ফাইয়ের বিশেষ ভূমিকা ছিল। ওমর (রা.) বলেন, ‘বনু নাজিরের বিষয়-সম্পত্তি সেসব সম্পদের অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা আল্লাহ তাঁর রাসুলকে ফাই হিসেবে দান করেছিলেন। এ জন্য যে মুসলিমরা ঘোড়ায় বা উটে আরোহণ করে যুদ্ধ করেনি। সুতরাং এটা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত ছিল। এর থেকে তিনি তাঁর পরিবারের জন্য এক বছরের খরচ গ্রহণ করতেন। এরপর বাকিটা তিনি অস্ত্রশস্ত্র এবং ঘোড়া সংগ্রহের জন্য ব্যয় করতেন আল্লাহর পথে জিহাদের প্রস্তুতি হিসেবে। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৮৮৫)
৪. উপহার : রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর পরিবার কখনো জাকাত ও সদকা গ্রহণ করেননি। তবে তিনি হাদিয়া ও উপহার গ্রহণ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমাকে পায়া খেতে দাওয়াত দেওয়া হলে আমি তা কবুল করব এবং আমাকে যদি কেউ পায়া হাদিয়া দেয় তবে আমি তা অবশ্যই গ্রহণ করব। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৭৮)
আরও পড়ুন:
দুনিয়াতে সফলতা অর্জনের গোপন রহস্য
দ্বিনের জন্য কষ্ট স্বীকার
রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর পরিবার দ্বিনের জন্য আত্মত্যাগ স্বীকার করেছেন। আয়েশা (রা.) একবার উরওয়াহ (রা.)-কে বলেন, ভাতিজা, আমরা দুই মাসে তিনটি নতুন চাঁদ দেখতাম। কিন্তু এর মধ্যে আল্লাহর রাসুলের ঘরগুলোতে আগুন জ্বলত না। আমি বললাম, আপনারা কিভাবে দিন কাটাতেন? তিনি বললেন, কালো দুটি বস্তু। খেজুর ও পানি। আবশ্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কিছু আনসার প্রতিবেশীর কতগুলো দুধেল প্রাণী ছিল। তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে তা হাদিয়া দিতেন এবং আমরা তাই পান করতাম। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৫৯)
news24bd.tv রিমু