খালেদা জিয়া দুর্বল, তবে কথা বলেছেন: মাহমুদা ভাসানী

ফাইল ছবি।

খালেদা জিয়া দুর্বল, তবে কথা বলেছেন: মাহমুদা ভাসানী

নিজস্ব প্রতিবেদক

কথা বলতে পারছেন বেগম খালেদা জিয়া। তবে তিনি কথা বলছেন খুব ধীরে ধীরে। তিনি অনেক দুর্বল। বেগম জিয়াকে হাসপাতালে দেখে এসে এসব তথ্য জানিয়েছেন মাহমুদা খানম ভাসানী।

তিনি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মেয়ে। শুক্রবার সকালে ভাসানীর পরিবারের ৫ সদস্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। ৩০ মিনিট তারা হাসপাতালে অবস্থান করে বেরিয়ে আসার সময় গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন।  

ভাসানী,পরিবার

ভাসানীর মেয়ে মাহমুদা খানম ভাসানী বলেন, তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাকে বিদেশে পাঠিয়ে সুচিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

ভাসানীর নাতি হাবিব হাসান মনার বলেন, আমরা খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলাম। তার ডাক্তাররা বলেছেন, বেগম জিয়ার অবস্থা খারাপ। ভাসানী পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার দাবি জানাই।  

গয়েশ্বর,চন্দ্র

এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আল্লাহ যদি তাকে রহম করেন এবং জনগণের এই আকুতি যদি আল্লাহ আমলে নেন, আমি বিশ্বাস করি, খালেদা জিয়া জনগণের জন্য বেঁচে থাকবেন। কারও অনুকম্পায় বেঁচে থাকবেন না। সুতরাং আমার কাছে মনে হয়, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবির চেয়ে সরকার পতনের দাবিটাই আমাদের কাছে মুখ্য হওয়া দরকার। তিনি বলেন, দেশের শতকরা ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ মানুষ খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসা হোক, তা চায়। শুধু একজন চান না। আমরা একটা আজব দেশে বাস করছি। যে দেশে চিকিৎসার জন্য আন্দোলন করতে হয়। শুক্রবার এক সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এসব কথা বলেন।  

খন্দকার,মোশাররফ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য খন্দকার মোশাররফ বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। ক্রমেই অবস্থার অবনতি হচ্ছে। তার চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই। জরুরি ভিত্তিতে বিদেশে নেওয়া দরকার ।   শুক্রবার বাদ জুমা বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও মিলাদ শেষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে তিনি এ কথা জানান।

খালেদা জিয়া তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে যাচ্ছেন বলে মনে করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার যে মেকানিজম তা বাংলাদেশে নেই।  

মান্না

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে মান্না বলেন,আগামী কয়েকদিন খুবই কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তিনি (খালেদা জিয়া)। শুক্রবার তিনি এসব কথা বলেন। আইন মানুষের জন্যই মানুষ আইনের জন্য নয় উল্লেখ করে মান্না বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে শেখ হাসিনাসহ আমরাই বলেছিলাম আইন মানুষের জন্যই মানুষ আইনের জন্য নয়। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার করার কোনো আইন ছিল না। পরবর্তীতে সেটা আইনে অন্তর্ভুক্ত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেওয়া হয়েছিল। তখন এত বড় পরিবর্তন যদি করা যায় এখন একটা মানুষকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো যাবে না- এমন কোনো কথা হতে পারে?

এদিকে,আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খালেদা জিয়ার কিছু হলে দায় বিএনপিকেই নিতে হবে, সরকারের কোনো দায় থাকবে না। শুক্রবার তিনি এই কথা বলেন।  

কাদের

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সংবিধান ও আইন দ্বারা দেশ পরিচালিত হচ্ছে। দেশের প্রচলিত আইন ও সাংবিধানিক নিয়ন-নীতির মধ্যে যতটুকু সম্ভব তার সবটুকু সুযোগ বেগম জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন। শেখ হাসিনার মানবিক হৃদয়ের কল্যাণে একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হয়েও খালেদা জিয়া বাসায় থাকছেন। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেওয়ার সর্বোচ্চ সুযোগ পাচ্ছেন।  

তিনি বলেন, হতে পারে খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আইনের চোখে তিনি একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তার বর্তমান পরিচয় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। কাদের বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও তদারকির কাজ বিএনপির লোকেরাই করছে, স্লো পয়জনিং যদি করে থাকে তাহলে পাশের লোকেরাই করতে পারে। এর দায়ও তাদেরই।

হাছান

এদিকে, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেত্রীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতা অনুধাবনে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে খালেদা জিয়াকে আবারো কারাগারে পাঠানো হবে কিনা সেটি ভেবে দেখা হবে বলেও  জানান তিনি। শুক্রবার তিনি এ কথা বলেন।  

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তিনি আদালতে জামিন পাননি। তার সাজা মওকুফ হয়নি। এ সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনে প্রদত্ত প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে তাকে কারাগারের বাইরে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব বৃহস্পতিবার যে ভাষায় কথা বলেছেন, তাতে আমাদের মনে হচ্ছে- বেগম জিয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী যে মহানুভবতা প্রদর্শন করেছেন, সেটি তারা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এখন সেই আদেশ পুনর্বিবেচনা করার মাধ্যমে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে কিনা তা আমাদের ভাবতে হবে।

তবে বেগম জিয়াকে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ।   শুক্রবার মাহবুব উল আলম হানিফ এই পরামর্শ দেন।

হানিফ

তিনি বলেন, যদি সত্যিকার অর্থেই বিএনপি মনে করে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রয়োজন, যথাযথ চিকিৎসা এখানে হচ্ছে না, আরও উন্নত চিকিৎসা দরকার; তাদের উচিত ছিল রাজনীতি না করে তার জীবন বাঁচানোর জন্য আইনের যে একটা পথই এখন খোলা আছে, তা অনুসরণ করা। উনি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। যদি দণ্ড মওকুফ হয়ে যায়, তখন তিনি স্বাধীনভাবে যেকোনো জায়গায় যেতে পারেন।   

প্রসঙ্গত, গত ১৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।

news24bd.tv/আলী