পৌর মেয়রের হাতে সাংবাদিক লাঞ্ছিত, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

পৌর মেয়রের হাতে সাংবাদিক লাঞ্ছিত, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

অনলাইন ডেস্ক

শেরপুরের নকলা উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন নিউজ টোয়েন্টিফোর ও আজকের পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি তরুণ সাংবাদিক জুবাইদুল ইসলাম।  

রোববার দুপুরে উপজেলার গৌরদ্বার ইউনিয়নের পাইস্কা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের পাশের রাস্তায় ওই হামলার ঘটনা ঘটান উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান লিটন ও তার সহযোগীরা। পরে ওই ঘটনার প্রতিবাদে এবং পৌর মেয়র লিটনের শাস্তির দাবিতে সাংবাদিকরা ওই কেন্দ্রের পাশে ঢাকা-শেরপুর মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।  

পরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ এবং পৌর মেয়র কিভাবে ওই কেন্দ্রে গেলেন সেটি খতিয়ে দেখাসহ ঘটনার বিষয়ে সম্মানজনক সুরাহার আশ্বাস দিলে এক ঘণ্টা পর অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

তবে ঘটনার প্রতিবাদে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে রোববার রাতে শেরপুর ক্লাবে এক সভা আহ্বান করা হয়েছে।   

আরও পড়ুন:


হেফাজত মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম আইসিইউতে

অন্তঃসত্ত্বা নারীকে হত্যা করে পেট চিরে বাচ্চা চুরি!


জানা যায়, তৃতীয় দফায় ইউপি নির্বাচনের আওতায় রোববার দুপুর ১টার দিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার জন্য জেলার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা নকলা উপজেলার গৌড়দ্বার ইউনিয়নের পাইস্কা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়েছিলেন।  

ওই কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার পর পাশের রাস্তায় নকলা পৌরসভার মেয়র হাফিজুর রহমান লিটনসহ কয়েকজন তার পথ আটকিয়ে তাকে দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করার জন্য হুমকি দেন এবং অতর্কিতভাবে তার ওপর হামলা চালিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।  

ওইসময় মেয়রের সাথে থাকা আইয়ুব খান ও হৃদয়সহ তার সহযোগীরাও ওই সাংবাদিককে বিভিন্ন জায়গায় মারধর করতে থাকলে হাতে থাকা ক্যামেরার ট্রাইপড ভেঙে যায় ও ক্যামেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ওই অবস্থায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে কর্তব্যরত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্তিমিত হয়। তবে ঘটনা জানাজানি হয়ে পড়লে কিছুক্ষণের মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় কর্তব্যরত জেলা পর্যায়ের সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেন।  

পরে উপস্থিত সাংবাদিকরা মেয়র লিটনের ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে এবং তার দ্রুত বিচারের দাবিতে ওই কেন্দ্রের পাশে থাকা ঢাকা-শেরপুর মহাসড়ক অবরোধ করে। ফলে শেরপুর থেকে ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকাসহ সকল রোডের সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।  

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শানিয়াজ্জামান তালুকদার ও নকলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। ওইসময় তারা ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। ওইসময় সাংবাদিকরা পৌর মেয়র লিটন কিভাবে পর্যবেক্ষক হয়ে ভোটকেন্দ্রে ঘুরেন-এমন প্রশ্ন তুললে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, তা হয়ে থাকলে সেটি আচরণবিধির লঙ্ঘন হবে। তবে তিনি কিভাবে কেন্দ্রে গিয়েছিলেন বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি। পরে শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরাজ উদ্দিনসহ উপস্থিত সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সাময়িকভাবে সেই অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।

ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিক জুবাইদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, তিনি পাইস্কা কেন্দ্রটিতে ভোটের চিত্র সংগ্রহ করে অন্য কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন। ওইসময় নকলা পৌরসভার মেয়র হাফিজুর রহমান তার পথ আটকিয়ে তাকে দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করার জন্য হুমকি দেন এবং অতর্কিতভাবে তার ওপর হামলা চালিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। ওইসময় মেয়রের সাথে থাকা আইয়ুব খান ও হৃদয়সহ তার সহযোগীরাও তাকে মারধর শুরু করে।
 
অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান লিটন বলেন, তিনি সাংবাদিক কিনা জানি না। তবে একটি পক্ষের তোপের মুখের অবস্থা থেকে তাকে ধাক্কা দিয়ে বরং রক্ষা করেছি। এছাড়া তিনি ওই কেন্দ্রে কোন প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব বিস্তার করেননি বলে দাবি করেন।

এ ব্যাপারে শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক এবং তা আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহতি করেছি। তদুপরি ঘটনার বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে আজ রাতেই প্রেসক্লাবে এক সভা আহ্বান করা হয়েছে।

news24bd.tv/ কামরুল