ভারতের যে ছেলেটাকে টুইটারের সিইও হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তার বয়স সাইত্রিশ। ২০০৫ সালে মুম্বাই আইআইটি থেকে সে ব্যাচেলর শেষ করে একুশ বছর বয়সে। সে বছরই আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে যায় পিএইচডি করতে। পিএইচডি শেষ করার আগেই সে সিলিকন ভ্যালির সাথে মিশে যায়।
এই ছেলেটা হয়তো এক্সট্রা অর্ডিনারি। এক্সেপশনাল। আমি নিদির্ষ্ট করে তাকে নিয়ে বলবো না। কিন্তু সে যেই শিক্ষার পরিবেশটার মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এসেছে আমি সে পরিবেশটা নিয়ে বলছি।
ভারতের আইআইটিগুলো এমন অসংখ্য ছেলে-মেয়ে তৈরি করছে। তাদের সবাই হয়তো সিইও হচ্ছে না কিন্তু তারা ভারত ও ভারতের বাইরে অনেক বড়ো বড়ো ভূমিকা রাখছে। ভারত যে মহাকাশ গবেষণা, পরমাণু শক্তি গবেষণা, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা, কেমিক্যাল এন্ড বায়োকেমিক্যাল গবেষণাসহ বহু ফিল্ডে অভাবনীয় সফলতা দেখাচ্ছে, তার মূলে হলো এই আইআইটিগুলো।
ভারতের আইআইটিগুলো এখন বিশ্বমানের পিএইচডি তৈরি করছে। এটা যে কতো বড়ো একটা বিষয় এবং ভারতের ভবিষ্যতের জন্য কতো বড়ে ভূমিকা রাখছে—সেটা অভাবনীয়।
আপনি একবার ভাবুন, আমাদের দেশে শতবর্ষী একটা বিশ্ববিদ্যালয় আছে। কিন্তু আমরা আজো প্রতি বছর বিশ্বমানের মাত্র দুইশ পিএইচডি তৈরি করতে পারছি না! —এটা কি দুর্ভাগ্য নয়? —এটা কি আশংকাজনক নয়? —এটা কি লজ্জাজনক নয়?
ভারতের অসংখ্য মানুষ এখনো খেতে পায় না। ভারতের অসংখ্য মানুষ এখনো মৌলিক সমস্যা নিয়ে লড়াই করছে। তাই বলে কি ভারতের উচ্চশিক্ষা দুর্বল হয়ে আছে? তাই বলে কি তারা বিশ্বমানের তরুণ তৈরিতে ছাড় দিচ্ছে? তাই বলে কি তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান উন্নয়ন নিয়ে কাজ বন্ধ আছে?
আইআইটিগুলো থেকে পড়াশুনা করে অনেকে ভারতেই থেকে যায়। অনেকে বিদেশে গিয়ে ক্যারিয়ার গড়ে। অনেকে বিদেশে গিয়ে সেরা সেরা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা শিখে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানেই আবার ফিরে আসে। আইআইটিগুলো সারাদুনিয়া থেকে সেরা সেরা তরুণদের খুঁজে শিক্ষক-গবেষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করে। সেইসব তরুণ গবেষকরা কি নিয়ে ফিরে আসে? তারা নিয়ে আসে শিক্ষা ও গবেষণার চলমান ফ্যাশন ও ট্রেন্ড নিয়ে। সারা দুনিয়ায় কি হচ্ছে, কি করছে, কি সমস্যা সমাধানে ব্যাকুল হয়ে আছে—এই বিষয়গুলো নিয়ে এসে তারা স্টুডেন্টদের শেখায়।
আইআইটির মতো প্রতিষ্ঠান কি আমরা গড়ে তুলতে পারি না? —অবশ্যই পারি। বুয়েট আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আছে। বছর বছর গণহারে বিপ্রবি তৈরি না করে পাঁচটা প্রতিষ্ঠানকে আগে বিশ্বমানের তৈরি করার চেষ্টা করুন। বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই মানের শিক্ষক নিয়োগ দেন। তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করুন। তাদেরকে গবেষণার জন্য অর্থ দেন। সারা দুনিয়া থেকে ট্যালেন্ট হান্ট করুন। যে সেরা তার জন্য সেরা রিওয়ার্ড নিয়ে বসে থাকুন। হাজার কোটি টাকা খরচ করে চাইনিজ প্রতিষ্ঠান দিয়ে ব্রিজ করেন ঠিক আছে। কিন্তু শত কোটি টাকা দিয়ে বিদেশ থেকে কিছু শিক্ষক-গবেষকও আনুন। দেশের তরুণদের শেখান। তাদেরকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করুন।
সিঙ্গাপুর-সুইজাল্যান্ড চাই না। আপাতত ভারতের মতো একটা উচ্চশিক্ষা কি দেশকে উপহার দিতে পারবেন? —প্লিজ!
আরও পড়ুন
রিসোর্টে নিয়ে তরুণীকে ধর্ষণ, টিকটকার মাসুদ গ্রেপ্তার
news24bd.tv এসএম