মানুষের আয় কমলেও আয়কর রিটার্ন জমা বেড়েছে

এনবিআর আয়োজিত সেমিনারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

মানুষের আয় কমলেও আয়কর রিটার্ন জমা বেড়েছে

অনলাইন ডেস্ক

দীর্ঘ সময় ধরে চলা করোনা মহামারির কারণে অনেকটা মন্দা চলছে ব্যবসা বাণিজ্যে। তার পরেও এবার ব্যক্তি শ্রেণির আয়কর বিবরণী (রিটার্ন) জমার সংখ্যা বেড়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নভেম্বর মাসকে আয়কর রিটার্ন দেওয়ার মাস বা সেবা মাস হিসেবে পালন করে। গত বছরের নভেম্বর মাসে ২৯ দিনে আয়কর রিটার্ন জমার চেয়ে এ বছর নভেম্বর মাসে ২৯ দিনে ৮০ হাজার আয়কর রিটার্ন বেশি জমা পড়েছে।

করোনার কারণে এ বছরও আয়কর মেলার আয়োজন হয়নি। মেলার পরিবর্তে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন সারা দেশে ৩১টি কর অঞ্চলের ৬৪৯টি সার্কেলে মেলার মতো উৎসবমুখর পরিবেশে রিটার্ন জমা নেওয়া হচ্ছে।

এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (জরিপ, কর ফাঁকি ও আইটিপি রেজি., কর-১৫) দীপক কুমার পাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ বছর নভেম্বর মাসে ২৯ দিনে দেশের সব কর অঞ্চল মিলে ১৫ লাখ ৫০ হাজার আয়কর রিটার্ন জমা পড়েছে। গত বছর নভেম্বর মাসের ২৯ দিনে আয়কর রিটার্ন জমা পড়েছিল ১৪ লাখ ৭০ হাজার।

সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এ বছর আয়কর রিটার্ন জমা বেড়েছে। ’ গতকাল (৩০ নভেম্বর) আরো ছয় থেকে সাত লাখ আয়কর রিটার্ন জমা পড়তে পারে বলেও তিনি জানান।

এ বছর করদাতাদের জন্য অনলাইনে নতুন আয়কর রিটার্ন ফাইলিং সিস্টেম চালু করেছে এনবিআর। অনলাইনে গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত রিটার্ন জমা পড়েছে প্রায় ৫২ হাজার।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, দেশের ৭০ লাখের বেশি কর শনাক্তকারী নম্বরধারী (টিআইএন) করদাতা রয়েছেন। সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বিভিন্ন কর অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, আয়কর রিটার্ন জমার সময় বাড়বে না মনে করে প্রতিটি কর অঞ্চলেই করদাতাদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। প্রতিটি বুথের সামনেই লম্বা লাইন। করদাতারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন।

রিটার্ন জমা দিতে আসা করদাতারা বলছেন, ‘শেষ সময়ের কারণে ভিড় বেড়েছে। তাই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে রিটার্ন জমা দিতে হয়েছে। ’

কর কর্মকর্তারা বলছেন, ‘মাসের শুরুতে ভিড় না থাকলেও রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ সপ্তাহ থেকেই ভিড় করছেন করদাতারা। শেষ সময়ে বাড়তি চাপের কথা বিবেচনায় নিয়ে এবার বাড়ানো হয়েছে বুথ। ’

করের টাকা জনগণ দেয়, এই টাকার যেন অপব্যবহার না হয় সে জন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় আয়কর দিবস উপলক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত ‘রূপকল্প বাস্তবায়ন ও আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে আয়করের ভূমিকা’ শীর্ষক এই সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের দেওয়া করের টাকা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ জনগণের কল্যাণেই ব্যয় হয়। উন্নয়নের চাহিদা মেটানোর জন্য যোগ্য সবাইকে কর দেওয়া দরকার। যত বেশি আয়কর দেওয়া যাবে, দেশ তত বেশি উন্নত হবে। ’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কর আহরণ বৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন খাত চিহ্নিত করতে হবে। অডিটের নামে হয়রানি বন্ধ করতে হবে। এখানে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আমদানিনির্ভর দেশ থাকতে চাই না। মেড ইন বাংলাদেশের কার্যক্রমকে আরো জোরদার করতে হবে। ’ সভাপতির বক্তব্যে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা বলেন, ‘টেক্স নেট বৃদ্ধি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এটার জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। আমরা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করছি। ’

এদিকে গতকাল সকালে ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, সবাই মিলে দেব কর’ স্লোগান সামনে রেখে এনবিআর অফিসের সামনে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে ১৪তম জাতীয় আয়কর দিবস উদ্বোধন করা হয়। এনবিআরসহ প্রতিষ্ঠানটির ৩১টি কর অঞ্চলে একযোগে দিবসটি উদযাপন করা হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে দেশে আয়কর দিবস পালিত হচ্ছে। আগে প্রতিবছর ১৫ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালিত হতো। তবে ২০১৬ সাল থেকে ৩০ নভেম্বর আয়কর দিবস পালন করছে এনবিআর।

আরও পড়ুন


ভ্যাকসিন এভাবে কাজ করে না

news24bd.tv এসএম