সেখানে চাকরির জন‍্য একমাত্র বিবেচ‍্য বিষয় যোগ‍্যতা

রাউফুল আলম

সেখানে চাকরির জন‍্য একমাত্র বিবেচ‍্য বিষয় যোগ‍্যতা

Other

আমেরিকায় চাকরির ইন্টারভিউর অভিজ্ঞাতাটা ছিলো খুবই সারপ্রাইজিং। চাকরির ইন্টারভিউ এতো চমৎকার এবং ওয়েলকামিং হতে পারে—সেটা আমি কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিনি।

২০১৭ সাল। ইউনিভার্সিটি অব প‍্যানসেলভেনিয়াতে (UPenn) পোস্টডক করছি তখন।

পোস্টডকের এক বছর যেতেই চিন্তা করি ইন্ড্রাস্ট্রিতে ঢুকবো। যদিও একসময় একাডেমিক ক‍্যারিয়ারের ইচ্ছে ছিলো, পরে সেটা চেইঞ্জ করি। আগে যেহেতু আমেরিকায় কখনো ইন্টারভিউ দেইনি, তাই ল‍্যাবের অন‍্যান‍্যদের কাছ থেকে নিয়ম কানুন কিছু জানলাম। অনেক ব্যাকরণ আছে এই প্রক্রিটার মধ্যে।

প্রথম ইন্টারভিউর ডাক পেলাম ফাইজার (Pfizer) থেকে। ইন্টারভিউর কয়েকটা ধাপ। চাকরির জন‍্য কোনো আবেদন ফি নাই। প্রথম ধাপে রেজুমে, কাভার লেটার ও রিসার্চ সামারি পাঠাতে হলো। তারপর সিলেকশন হলে ওরা একটা ফোন ইন্টারভিউ নেয়। ফোন ইন্টারভিউ হলো। ফোন ইন্টারভিউর পর আমাকে ইনভাইট করা হলো অন-সাইট (On-site) ইন্টারভিউর জন‍্য। অন-সাইট ইন্টারভিউ হলো মূলত সশরীরে গিয়ে হাজির হওয়া। এই অন-সাইট ইন্টারভিউতে সবাইকে কল করে না। সাধারণত একটা পজিশনের (পোস্ট) জন‍্য, দুই-তিনজনকে কল করে। কারণ অন-সাইট ইন্টারভিউতে যখন কল করা হয় তখন সকল প্রকার যাতায়ত খরচ, হোটেলে থাকার খরচ, খাবার খরচ ইত‍্যাদি বহন করে প্রতিষ্ঠান।  

ফাইজারের হেডকোয়ার্টারে গেলাম। অন-সাইট ইন্টারভিউর কয়েকটা পার্ট থাকে। প্রথম পার্ট হলো আমাকে প্রেজেন্ট করতে হবে। সাধারণত এক ঘণ্টার একটা প্রেজেন্টেশন। তারপর দিনভর বিভিন্ন সাইন্টিস্টদের (কর্মকর্তা) সাথে সাক্ষাত। এইচআর (HR) থেকে কয়েকজন লোক থাকে। তাদের সাথে কথা বলতে হয়। তারা মনঃস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা করে। প্রতিষ্ঠান ভেদে আরো কিছু ধাপ থাকে।

অনেক ফিল্ডেই ইন্টারভিউ প্রক্রিয়াটা মোটামুটি এই ধাঁচের। খুবই রিগোরাস একটা প্রসেস। তবে ইনজয় করা যায়। খরচের কোনো টেনশন নাই। আমি ক‍্যালিফোর্নিয়া গিয়েও ইন্টারভিউ দিয়েছি। দেখা গেছে বিমান ভাড়া, হোটেল, খাবার মিলে প্রায় দুই হাজার ডলার বিলও এসেছে, যেটা প্রতিষ্ঠান বহন করেছে।

আদর-আপ‍্যায়ন সবচেয়ে বেশি ছিলো আমি যে প্রতিষ্ঠানে এখন কাজ করি সেটাতে ইন্টারভিউর সময়। ওরা খুবই ওয়েলকামিং ছিলো। ট্রেন স্টেশনে থেকে লিমো সার্ভিসে হোটেলে পৌঁছে দিয়েছে। ইন্টারভিউ ডিনার ছিলো। যেটা সাধারণত ইন্টারভিউর আগের রাতে প্রতিষ্ঠানের কয়েকজনের সাথে একটা ডিনার। এই ডিনারের মাধ‍্যমে মূলত ইন্টারভিউর আগেই কয়েকজনের সাথে পরিচয় হওয়া। তাতে করে ইন্টারভিউর সময় মানসিক চাপ একটু কম থাকে। তারপর হোটেল থেকে প্রতিষ্ঠানে যাওয়া এবং ইন্টারভিউ শেষে ট্রেন স্টেশন পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত ছিলো লিমো সার্ভিস। অর্থাৎ আপ‍্যায়নের যেনো ঘাটতি না হয়, সে ব‍্যাপারে প্রতিটা স্টেপে ওরা খুব সর্তক ছিলো।

ইন্টারভিউর সময় প্রতিষ্ঠান কেমন ট্রিট করে সেটাও কিন্তু একটা বিবেচনার বিষয়। অনেক বড়ো প্রতিষ্ঠান অনেকসময় তেমন ভালো ট্রিট করে না। অনেক প্রতিষ্ঠান ছোট হলেও ট্রিট ভালো দেয়। আমেরিকানরা এগুলো কেয়ার করে। চাকরির অফার পেলে ডিসিশন নেওয়ার সময় এগুলো চিন্তা করে। চাকরির শুরুতেই একটা বোনাস দেয়, যেটাকে সাইন-ইন বোনাস বলে। অনেকে রিলোকেশন বোনাস দেয়। এমন অনেক চমৎকার বিষয় তখন শিখেছিলাম।

সবচেয়ে বড়ো কথা, এদেশে ইন্টারভিউ দেওয়ার আগে পড়ে কখনো আমাকে ভাবতে হয়নি, আমার বাবা কি করে। বাবার নাম কী। বাবার টাকা আছে কিনা। বাবার কোনো সার্টিফিকেট আছে কিনা। কোনো কোটা আছে কিনা। পরিচিত মামা-চাচা আছে কিনা। নেতা আছে কিনা। সহমতের বড়ো ভাই আছে কিনা। আমার ধর্ম কী। জাত-জাতীয়তা কী। গায়ের রং কী। আমি দেখতে কেমন। কোন দেশ থেকে এলাম—এসব কোনো কিছুই ভাবতে হয়নি।

চাকরির জন‍্য একমাত্র এবং একমাত্র বিবেচ‍্য বিষয় যোগ‍্যতা।

লেখাটি রউফুল আলম ​-এর ফেসবুক থেকে নেওয়া (সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগের লেখার আইনগত ও অন্যান্য দায় লেখকের নিজস্ব। এই বিভাগের কোনো লেখা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়। )

news24bd.tv/ তৌহিদ