বেফাঁস কথা গলায় ফাঁস হলো যাদের 

বেফাঁস কথা গলায় ফাঁস হলো যাদের 

নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা তিনবার দেশ পরিচালনা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন অনেকেই বেফাঁস কথা বলে ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে সমালোচিত হয়েছেন। তালিকার সবশেষ নাম ডা. মুরাদ হাসান। তিনি তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তিনি মঙ্গলবার পদত্যাগ করেন। আওয়ামী লীগ বলছে, যারাই সীমা লঙ্ঘন করেছে, দল তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।   

ডা. মুরাদ হাসানের আগেও আরেকজন মন্ত্রী বেফাঁস কথার জের ধরে সব হারিয়েছেন। তিনি লতিফ সিদ্দিকী।

হজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার পর তিনি ব্যাপক সমালোচিত হন। একে একে তার হাতছাড়া হয় মন্ত্রিত্ব, দলীয় পদ। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ও খ্যাতি তলানিতে পৌঁছে যায়।  

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে মেয়র পদ হারিয়েছেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের জাহাঙ্গীর আলম। তিনি একই সঙ্গে হারিয়েছেন আওয়ামী লীগের পদও।   

প্রতিমন্ত্রী  ডা. মুরাদ হাসানের পতন  
বেশ কয়েকদিন ধরেই বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে আলোচনায়-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ডা. মুরাদ হাসান। বিশেষ করে রাষ্ট্রধর্ম, রাজনীতি, খালেদা জিয়ার নাতনি ও সবশেষ ফোনালাপ ফাসঁ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় ছিলেন। তার উল্টাপাল্টা মন্তব্য এবং অস্বাভাবিক আচরণের কারণে দলীয় সহকর্মীদেরও বিব্রত হতে হয়েছে।  

এসবের জের ধরে সোমবার রাতে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডা. মুরাদের এগ্রেসিভ বক্তব্যে সবাই খুব বিরক্ত হলেও এতোদিন আলোচনায় ছিলেন না তেমন। সবশেষ রাষ্ট্রধর্ম ও ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়া নিয়ে বক্তব্য দিয়ে প্রথম আলোচনায় আসেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। গত অক্টোবরে প্রথম রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরোধিতা করে আলোচনায় আসেন মুরাদ হাসান।  

আরও পড়ুন : দুপুরেই ঢাকা ছাড়েন তথ্য প্রতিমন্ত্রী
সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমান ও নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন তিনি।
 বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। গত শনিবার একটি টিভি টকশোতে উপস্থিত বিএনপির একজন সাবেক নারী এমপিকে ‘মানসিক রোগী’ বলে অভিহিত করে তার সঙ্গে বিতণ্ডায় লিপ্ত হন ডা. মুরাদ।   এদিকে এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে মুরাদ হাসানের আপত্তিকর ফোনালাপ ফাঁস হয়। মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়ে যায় এটি।
 
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সরকারে প্রথমে মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৯ সালের মে মাসে স্বাস্থ্য থেকে তাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সাবেক মন্ত্রী ও আ.লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লতিফ সিদ্দিকী
২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে হজ, তাবলিগ জামাত, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও সাংবাদিকদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন তৎকালিন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তার এমন মন্তব্যে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠলে তাকে মন্ত্রিসভা ও দলীয় পদ থেকে অপসারণ করে আওয়ামী লীগ সরকার। এমনকি সংসদ সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি। এরপর থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে আর রাজনীতিতে সেভাবে দেখা যায় না।

২০১৪ সালের  ২৮ সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে নিউইয়র্ক টাঙ্গাইল সমিতির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী বলেন, আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তার চেয়েও হজ ও তাবলিগ জামাতের বেশি বিরোধী।

আরও পড়ুন : পদত্যাগপত্রেও ভুল করেছেন মুরাদ

তিনি বলেন, ‘এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার (জনশক্তি) নষ্ট হয়। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে।
ওই অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন,  এদের  কোনো কাম নাই। এদের কোনো প্রডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে।

তার বক্তব্যের এই ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে সমালোচনা শুরু হয়। লতিফ সিদ্দিকী দলের একাধিকবারের সাংসদ। তার ভাই কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। কাদের সিদ্দিকীও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন ১৯৯৯ সালে। দুই ভাই দল থেকে যখন বহিষ্কৃত হন তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন দল হিসেবেই ছিল।

প্রসঙ্গত, সে সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে নিউইয়র্ক সফর করেন আইসিটি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।  

মেয়র জাহাঙ্গীরের পতন
গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ঘরোয়া আয়োজনে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তিমূলক বক্তব্য দিলে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই সময়ে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া চার মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, হেফাজতের প্রয়াত নেতা জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে তার সখ্য ও রাষ্ট্রীয় দুটি সংস্থা নিয়ে নানা আপত্তিকর মন্তব্য করেন মেয়র জাহাঙ্গীর।

আরও পড়ুন :  র‍্যাব সদর দফতরে চিত্রনায়ক ইমন

এরপর থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। তার শাস্তির দাবিতে মশাল মিছিল বের হয়। রাজনীতির অঙ্গনে জাহাঙ্গীরের বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।  

এরপর গাজীপুরের পরিস্থিতি শান্ত করতে আওয়ামী লীগ উদ্যোগ নেয়। শেষমেষ  তাকে মেয়র পদ থেকে অপসারণ করে সরকার। এরপর জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়।  

আরও পড়ুন সেই জাহাঙ্গীরের মোটরসাইকেলে মুরাদ: ভাইরাল ছবি

গত ২৫ নভেম্বর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করে সরকার। এরপর তার নামে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মামলাও হয়েছে কয়েকটি।

news24bd.tv/আলী