বেপরোয়া ডা. মুরাদ: দলের কৃপা না পেলে এমপি পদও হারাতে পারেন

ফাইল ছবি

বেপরোয়া ডা. মুরাদ: দলের কৃপা না পেলে এমপি পদও হারাতে পারেন

অনলাইন ডেস্ক

অশালীন, শিষ্টাচারবহির্ভূত ও নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর বক্তব্যের জেরে দেশজুড়ে ক্ষোভের মুখে অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন ডা. মুরাদ হাসান। এদিকে, দলের আনুকূল্য না পেলে সংসদ সদস্য (এমপি) পদও হারাতে হবে তাকে।

প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের জামালপুর জেলা কমিটি তাঁকে অব্যাহতি দিয়ে তা অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠিয়েছে।

নারীর প্রতি অবমাননাকর ও অশালীন বক্তব্যের জন্য মন্ত্রিত্ব হারানো ডা. মুরাদ হাসানের সংসদ সদস্য পদ থাকবে কি না এ প্রশ্নই এখন সামনে এসেছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই মনে করছেন মুরাদ হাসানের সংসদ সদস্য পদ থাকা উচিত নয়।

বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে মন্ত্রিপরিষদ থেকে অপসারণ বা পদত্যাগে বাধ্য করানোর পর দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার এবং সংসদ সদস্য পদ হারানোর দৃষ্টান্ত আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। আর স্থানীয় সরকারে এমন নজির গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও রাজশাহীর কাটাখালীর সাবেক মেয়র আব্বাস আলী। তাঁরা দল থেকে বহিষ্কারের পর মেয়র পদ হারিয়েছেন।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি দল থেকে পদত্যাগ করেন তাহলে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুসারে তাঁর সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। সংবিধানের ৬৬(২) অনুসারে সংসদ সদস্য হওয়ার বা থাকার অযোগ্যতা বিষয়ে যে কারণগুলো আছে, তাতেও দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি নেই। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা নিয়ে কোনো বিতর্ক উঠলে সংসদ সদস্য বিরোধ নিষ্পত্তি আইন, ১৯৮১ অনুসারে জাতীয় সংসদের স্পিকার তা নিষ্পত্তির জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠাতে পারেন।

তিনি বলেন, ‘বিতর্কিত মন্তব্য বা কর্মকাণ্ডে দল থেকে বহিষ্কার হলেও গাজীপুরের জাহাঙ্গীর আলম ও রাজশাহীর কাটাখালীর আব্বাস আলীকে ওই কারণ দেখিয়ে মেয়র পদ থেকে অপসারণ করা হয়নি। এ অবস্থায় সদ্য পদত্যাগকারী তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা জানার জন্য আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে। ’ 

২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক অনুষ্ঠানে পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করায় তৎকালীন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল থেকে নিন্দা-ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বলেন। তিনি পদত্যাগ না করায় সংবিধানের ৫৮(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে তাঁর মন্ত্রিত্বের অবসান ঘটানো হয়। একই দিনে তাঁকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং দলীয় প্রাথমিক সদস্য পদ বাতিল করা হয়।

এরপর ২০১৫ সালের ৫ জুলাই লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ বাতিলের ব্যবস্থা নিতে দলের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। স্পিকার বিষয়টি নিষ্পত্তি করে সিদ্ধান্ত জানানোর অনুরোধ জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) চিঠি দেন।

নির্বাচন কমিশন বিষয়টি শুনানির জন্য লতিফ সিদ্দিকীকে নোটিশ পাঠায়। নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত চেয়ে তিনি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। রিটে ওই চিঠি কেন অবৈধ ও অকার্যকর ঘোষণা করা হবে না তা জানতে রুলের আরজি জানান। বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দেন। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালতে লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে আবেদন করেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। সে আবেদনও আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে খরিজ হয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্ট লতিফ সিদ্দিকীকে নির্বাচন কমিশনে যেতে বলেন।

এরপর লতিফ সিদ্দিকী নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে হাজির হয়ে বলেন, ‘শুনানির প্রয়োজন নেই। আমি সংসদ থেকে পদত্যাগ করব। ’ ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।  

এই বাস্তবতায় ডা. মুরাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে, তা মূলত আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তবে মুরাদের পদত্যাগের পর গতকাল সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সংসদ সদস্য পদের বিষয়ে স্পিকার সিদ্ধান্ত নেবেন। এখন আপাতত যেটা হয়েছে, তিনি একজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, তাঁকে সে পদ থেকে সরে যেতে হলো। দলের একটা পদ থেকেও তিনি অব্যাহতি পাচ্ছেন। এমপি পদের বিষয়েও যদি সে রকম গুরুতর কোনো অভিযোগ আসে, সেটা স্পিকার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।  

মুরাদ হাসানের দলের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল হবে কি না তা নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ বিষয়ে দলের পরবর্তী ওয়ার্কিং কমিটিতে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। ’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা গাজীপুরের মেয়র এবং ওই মহানগরের সাধারণ সম্পাদকের ব্যাপারে এভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং ছাড়া গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। আমরা পরবর্তী ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে তাঁর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। ’

আরও পড়ুন: 


বিএনপি-আ. লীগ দুই আমলেই তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী


তবে মুরাদ হাসানের সংসদ সদস্য থাকা না থাকা পুরোপুরি নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল হানিফ গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ডা. মুরাদ অত্যন্ত নিম্নরুচির পরিচয় দিয়েছেন। এ রকম ব্যক্তির সংগঠনের কোনো দায়িত্বশীল পদে থাকার সুযোগ নেই। তাঁকে সরানোর জন্য দলের আগামী কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সুপারিশ করা হবে।

news24bd.tv রিমু