আফ্রিকান সাংবাদিক ইসমাইল আইনাশ ইতালিতে বাংলাদেশি এক তরুণের গল্প তুলে এনেছেন। বিবিসির একটি সিরিজ প্রতিবেদনে এই গল্প উঠে আসে। দুই বছর আগে ভাগ্য ফেরাতে দেশ ছাড়া এই তরুণ দালালের মাধ্যমে লিবিয়া গিয়ে প্রতারিত হন। পরে সেখান থেকে পালিয়ে তিনি ইতালিতে চলে চান।
ঢাকার অদূরে পদ্মা নদীর তীরের একটি গ্রামে আলীর (ছদ্মনাম) বাড়ি। ঢাকার উপকণ্ঠে একটি প্রসাধনীর দোকানে কাজ করতেন তিনি। এক দালাল তাকে প্রতিনিয়ত লিবিয়ায় যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিত।
লিবিয়ায় যাওয়ার আগে আলীর দেশটি সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না। ওই দালাল আলীর মা-বাবাকে জানায়, লিবিয়ায় তিনি মাসে ৫০০ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারবেন। আলীর বাবা বাড়ির পালের তিনটি গরু থেকে একটি বিক্রি করে দালালকে টাকা দেন।
বাংলাদেশ থেকে যাত্রা শুরুর এক সপ্তাহ পর লিবিয়ায় পৌঁছেন আলী। তিনি ঢাকা থেকে বাসে ভারতের কলকাতা এবং কলকাতা থেকে বিমানে করে মুম্বাই, দুবাই হয়ে মিসরের কায়রো যান। এরপর সেখান থেকে লিবিয়ার বেনগাজি বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি।
বেনগাজি পৌঁছার পরপরই দালালদের স্থানীয় প্রতিনিধিরা নিয়ে যায় আলীকে। জেলখানার মতো একটি স্থানে তাকে আটকে রাখে। তারা আলীর সঙ্গে থাকা সব টাকা কেড়ে নেয়। এরপর তাকে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করে। আলীকে মুক্ত করতে তার মা-বাবা বাকি দুটি গরু বিক্রি করে দালালদের টাকা দেন।
ছোট একটি কক্ষে আরও ১৫ বাংলাদেশিসহ আলীকে আটকে রাখা হয়। এর মধ্যে যারা মুক্তিপণ দিতে পারতেন না তাদের খাবারও দেওয়া হতো না। তাদের প্রায়ই মারধর করা হতো।
২০২০ সালের মে মাসে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলির কাছে মিজদা এলাকায় একটি গুদামকক্ষে ৩০ জন অভিবাসীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে ২৬ জনই ছিলেন বাংলাদেশি।
মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পাওয়ার পর আলী বেনগাজিতে একটি পানি বোতলজাত করার কোম্পানিতে তিন মাস কাজ করেন। এরপর একটি টাইলস কারখানায় কাজ করেন।
লিবিয়ায় বর্তমানে ২০ হাজারের মতো বাংলাদেশি অভিবাসী দুর্ব্যবহার ও নির্যাতনের শিকার বলে মনে করা হয়। অনেকে কাজের কোনো পারিশ্রমিক পান না। অনেককে অসহনীয় পরিস্থিতিতে কাজ করতে এবং বসবাস করতে হতো। আলী তার মালিকের কাছে বাস করতেন। মালিক কক্ষ তালাবদ্ধ করে চাবি নিয়ে যেতেন। কারখানায় শ্রমিকদের সার্বক্ষণিকভাবে দুজন প্রহরী পাহারা দিত। পারিশ্রমিক না দেওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত খাবারও তাদের দেওয়া হতো না।
এক পর্যায়ে আলীসহ অন্য কয়েকজন অভিবাসী সেখান থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত নেন। এক অভিবাসী পালাতে গিয়ে দোতলা থেকে পড়ে পা ভেঙে ফেলেন। এক পর্যায়ে এক লিবীয় নাগরিক দয়াপরবশ হয়ে আলীকে এক স্থানীয় মসজিদে আশ্রয় নিতে সাহায্য করেন। আলী দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
গত বছর জুলাইয়ে সমুদ্রে পাড়ি দেওয়া ছিল তার জন্য আরেক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। আলীসহ মোট ৭৯ জন অভিবাসী একটি কাঠের ডিঙিতে করে সমুদ্রযাত্রা করেন। টানা দুই দিন সাগরে ভাসেন তারা।
শেষ পর্যন্ত তাদের উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে সিসিলির রাজধানী পালেরমোর বাইরে অভিবাসীদের এক ক্যাম্পে বাস করছেন আলী। লিবিয়ায় কোনো বাংলাদেশি বা অন্য কারো সঙ্গেই আলীর যোগাযোগ ছিল না। তাদের আটকে রাখা হতো। সব কিছু পাচারকারীরা নিয়ন্ত্রণ করত।
ইতালি যাওয়ার অর্থ সংগ্রহের জন্য আলীর মা-বাবা আবার ঋণ করেন। বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে পৌঁছতে আলীর সর্বমোট চার হাজার ডলার ব্যয় হয় তার
news24bd.tv/নকিব