৮ বছরের চয়ন ৮৪ লাখ টাকা প্রতারণা মামলার আসামি

মা-মামার সঙ্গে শিশু চয়ন

৮ বছরের চয়ন ৮৪ লাখ টাকা প্রতারণা মামলার আসামি

সঞ্জয় কুমার দাস, পটুয়াখালী

পটুয়াখালীতে প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগে মেধাবী দুই শিশু শিক্ষার্থীর বয়স গোপন রেখে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দায়েরকৃত মামলায় ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র ৮ বছরের শিশু চয়নের বয়স দেখানো হয়েছে ২২ বছর আর তার বড় বোন ৯ম শ্রেণির ছাত্রী ১৭ বছর তার বয়স দেখানো হয়েছে ১৯ বছর।

মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে সমন জারী করলে বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

জানা যায়, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার তুলাতলি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনীর মেধাবী ছাত্র আব্দুল্লাহ আল ইসলাম চয়ন।

সহপাঠীরা যখন বিদ্যালয়ের ক্লাস করছে, সে সময়ে চয়ন মা ও মামার হাত ধরে পটুয়াখালী আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন। প্রতারণা এবং বিশ্বাস ভঙ্গের একটি মামলায় ৮ বছর বয়সী চয়নকেও পরিবারের অনান্য সদস্যদের সাথে আসামি করা হয়েছে। আর এতে চয়নের বয়স দেখানো হয়েছে ২২ বছর।

এদিকে বুধবার চয়ন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট আদালত আবেদনটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে পাঠায়।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের বিচারক তাৎক্ষনিকভাবে শিশু চয়ন এবং তার ১৭ বছর বয়সী বোন তৃপ্তিকে জামিন প্রদান করেন। এ ঘটনায় আদালত পাড়ায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

চয়নের আইনজীবী এ্যাডভোকেট মো. সোলায়মান সিকদার জানান, কলাপাড়া উপজেলার তুলাতলি এলাকার বাসিন্দা মাসুম তালুকদার। ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর মাসুম তালুকদার মারা যাওয়ার পর জনৈক মাসুম বিল্লাহ নামে এক ব্যক্তি ৮৪ লাখ টাকা দাবী করে মাসুম তালুকদারের ওয়ারিশদের নামে এ বছরের ১২ আগস্ট পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে দন্ডবিধি ৪০৬ এবং ৪২০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় শিশু চয়নের বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ২২ বছর। প্রকৃত পক্ষে জন্ম নিবন্ধন অনুয়ায়ী চয়নের জন্ম তারিখ ২ জানুয়ারী ২০১৩। এ ছাড়া চয়নের বোন তুলাতলি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া ইমরোজ তৃপ্তির বয়স ১৭ বছর হলেও তার বয়স ১৯ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া চয়নের মা, দাদীসহ ওই মামলায় মোট ৮ জনকে আসামি করা হয়।

এ ঘটনায় আদালত আসামীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করলে আসামিরা হাজির হন। বুধবার আসামী শিশু চয়ন এবং তার পরিবারের সদস্যরা আদালতে উপস্থিত হলে আদালতে বিব্রত পরিস্থিতি তৈরী হয়।

পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক আশিকুর রহমানের কাছে জামিনের আবেদন করলে বিচারক মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালে প্রেরণ করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের বিচারক মোঃ মইনুল হক তাৎক্ষনিকভাবে আসামি শিশু চয়ন এবং তৃপ্তিকে জামিন প্রদান করে এবং বাদীর পক্ষের আইনজীবীকে তলব করেন।  

এবিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. মোহসীন উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলেও তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি। এ বিষয়ে তিনি আদালতে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি।

পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখ জনক। মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে বিচার প্রার্থী এবং আইনজীবীদের আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ’

শিশু চয়নসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় দাবী করা হয় চয়নের পিতা মরহুম মাসুম তালুকদার কলাপাড়া উপজেলার লেমুপাড়া মৌজায় ১২ একর জমি বিক্রি করার জন্য ৮৪ লক্ষ টাকা নিলেও মৃত মাসুম তালুকদার জমির দলিল প্রদান করেনি। এর প্রেক্ষিতে মাসুম তালুকদারের ওয়ারিশদের বিরুদ্ধে প্রতরণা এবং বিশ্বাস ভঙ্গের মামলাটি দায়ের করেন মাসুম বিল্লাহ। মাসুম বিল্লাহ পটুয়াখালী পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড এর টাউন কালিকাপুর এলাকার বাসিন্দা।

এদিকে শিশু চয়নের মা সাবরিনা বিশ্বাস মনু বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে আমাদের হয়রানী এবং জমিজমা দখলের লক্ষ্যেই এই ধরণের মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

আরও পড়ুন


মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণ: যুবকের যাবজ্জীবন ও  ১৪ বছরের কারাদণ্ড

news24bd.tv এসএম