যৌতুকের জন্য গৃহবধূকে নির্যাতন, মামলার পরে গ্রেপ্তার ২

নির্যাতনের শিকার শান্তা খাতুন

যৌতুকের জন্য গৃহবধূকে নির্যাতন, মামলার পরে গ্রেপ্তার ২

নাজমুল হুদা, সাভার

সাভারে শান্তা খাতুন নামের এক পোশাক শ্রমিককে যৌতুক না দেওয়ার জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা ও গরম পানি দিয়ে শরীর ঝলসে দেওয়ার ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে সাভারের পৌর এলাকার টান গেন্ডা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এর আগে একইদিন রাতে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ওই পোশাক শ্রমিক।

রোববার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহিদ হাসান।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ভুক্তভোগী শান্তার শ্বশুর নজরুল ইসলাম ও তার শাশুড়ী খুরশিদা বেগম খুশি। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন শান্তার স্বামী জহিরুল ইসলাম সাগর, সাগরের মামাতো ভাই নিরব হোসেন শাওন, সাইফুল ইসলাম ও জুলহাস।

ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, প্রায় দুই বছর আগে সাগর ও তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি সাগরের বাড়িতে বিয়ের জন্য অনশন করেন।

পরে বাধ্য হয়ে শান্তাকে বিয়ে করে সাগর। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই যৌতুক দাবি করে সে। শান্তা এরই মধ্যে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দিয়েছে। তার পরেও তার উপর চলছে অমানবিক নির্যাতন। পুরো পরিবার তার ওপর নির্যাতন চালাতেন বলে দাবি শান্তার।

শান্তা পরিবারের অমতে বিয়ে করায় পরিবারের সাথেও তেমন যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু সাগর যৌতুকের জন্য চাপ প্রয়োগ করায় অনেক কষ্টে মায়ের মাধ্যমে কিছু টাকা এনে দেন। আবারও টাকা দাবি করলে স্বামীর সাথে ধামরাইয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে পোশাক কারখানায় কাজ নেয় শান্তা। তার পরেও চলে নির্যাতন।

সর্বশেষ ১৩ ডিসেম্বর কৌশলে মোবাইল ফোনে টান গেন্ডা এলাকার বাড়িতে ডেকে নেয় জহিরুল। গাড়ি থেকে নামতেই তার চোখ বেঁধে নির্যাতন শুরু করে। প্রায় ২ ঘণ্টা খানেক পরে তার চোখ খুললে দেখেন তিনি শ্বশুড় বাড়িতে। এসময় তারা আবারও মারধর করে মুখে বিষ ঢেলে দেয়। পরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা ও গরম পানি শরীরে ঢেলে দেয়। অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নির্যাতনকারীদের ধাক্কা দিয়ে দৌড় দিয়ে এসে উঠানে পড়ে যান তিনি। সেখান থেকে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসা শেষে শনিবার রাতে সাভার মডেল থানার একটি  মামলা দায়ের করলে দুই জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এদিকে সকাল থেকে সাভারের ৯নং ওয়ার্ড বর্তমান কমিশনার মুরাদ ও সাবেক আয়েনাল হক গেদু কমিশনারের পরিচয়ে দুই দফায় লোকজন এসে ভুক্তভোগীকে আপোষের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী শান্তা। তিনি বলেন, প্রথম দফায় তিন থেকে চার জন লোক এসে বলেন গেদু কমিশনার পাঠিয়েছেন। থানায় যেন কোন মামলা না হয়। কোন চার্জশীট যেন না হয়। দ্বিতীয় দফায় পাঁচ থেকে ৬ জন এসে মুরাদ কমিশনারের লোক পরিচয় দিয়ে একইভাবে চাপ প্রয়োগ করেন। মুরাদ সাভার পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কমিশনার ও আয়নাল হক গেদু একই ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার ছিলেন।

সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহিদ হাসান জানান, এ ব্যাপারে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলা হওয়ার সাথে সাথেই দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন


২৮ বছরের তরুণীকে ধর্ষণ চেষ্টা, সালিশে ৫ হাজার টাকায় দফারফা

news24bd.tv এসএম