কোথায় আছেন মেজর জিয়া? 

ফাইল ছবি

কোথায় আছেন মেজর জিয়া? 

অনলাইন ডেস্ক

বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত মেজর (চাকরিচ্যুত) সৈয়দ মো. জিয়াউল হক জিয়াকে গ্রেপ্তার করতে আট বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গোয়েন্দারা। এর মধ্যে অন্তত পাঁচবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাঁর সন্ধান পান আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। কোনোবারই তাঁকে ধরা যায়নি। গোয়েন্দা সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, জিয়াউল হক জিয়াসহ অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা এখনো বাংলাদেশেই রয়েছে। জিয়া ও আকরামের সন্ধান চেয়ে গত রবিবার ৫০ লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণার সময় এ ধারণা ব্যক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের অধীন রিওয়ার্ড ফর জাস্টিস (আরএফজে)।

তবে জিয়া এখন দেশে নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মানিকগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে যতটুকু তথ্য আছে, তাঁরা (জিয়া ও আকরাম) দেশে নেই।

তাঁরা অন্য দেশে গাঢাকা দিয়েছেন। যত দ্রুত সম্ভব তাঁদের ধরে এনে রায় কার্যকর করা হবে। এ জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ’

অভিজিৎ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে প্রথমে আকরামের নাম আসে। পরে প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলা এবং জুলহাস-তনয় হত্যা মামলায়ও তাঁর নাম আসে। মেজর জিয়ার অন্যতম সহযোগী আকরাম। তিন মামলায়ই জিয়ার সঙ্গে আকরামও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। আকরাম কখনো আকরাম হোসেন, কখনো হাসিব, কখনো আবির আবার কখনো বা আবদুল্লাহ ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। গোয়েন্দাদের তথ্য মতে, আকরাম যাত্রাবাড়ীতে থাকতেন। তাঁর বাবার নাম মশিউর। তিনি ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন।  

গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে, জিয়া সর্বশেষ কয়েক মাস আগে সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করেছিলেন। সেখান থেকে তিনি দেশের বাইরে চলে যান। তবে কোন দেশে এখন তাঁর অবস্থান, সেই তথ্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর কোনো সূত্রই নিশ্চিত করতে পারেনি।  

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত জিয়া কোন কোন এলাকায় ঘোরাঘুরি করতেন তার একটি চিত্র তাদের হাতে ছিল। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহে তাঁর অবস্থান ছিল। সেই হিসাব মতে অন্তত পাঁচবার তাঁর খুব কাছ পর্যন্ত গোয়েন্দারা পৌঁছতে পেরেছিলেন, কিন্তু ধরা যায়নি।

২০১৯ সালের শেষের দিকে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় এক বন্ধুর বাসায়ও জিয়া কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন। একই বছরে ময়মনসিংহের একটি বাসায়ও কয়েক মাস ছিলেন তিনি। সেখান থেকে টঙ্গীতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানেও যান।

জিয়ার বর্তমান অবস্থান কোথায় হতে পারে জানতে চাইলে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গতকাল বলেন, ‘জঙ্গি জিয়াকে আমরা খুঁজছি। তবে এই মুহূর্তে কোথায় আছে, তা আমাদের জানা নেই। ’    

জিয়ার গ্রামের বাড়িতে তালা : যুক্তরাষ্ট্র জিয়ার সন্ধানে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণার পর তাঁর গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের শহরতলির মোস্তফাপুর ইউনিয়নে বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। মোস্তফাপুর গ্রামে জিয়ার পৈতৃক বাড়ি। বাড়ির  দুটি ঘরেই বাইরে থেকে তালা ঝুলছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কমান্ডার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শীর্ষ জঙ্গি নেতা জিয়াকে ধরার সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ’

আরও পড়ুন


মালয়েশিয়ায় কর্মী যাবে লাখ টাকারও কম খরচে 

তদন্তকারী সূত্র জানায়, জিয়া সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে কর্মরত ছিলেন। ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি সেনাবাহিনী এক সংবাদ সম্মেলনে ধর্মান্ধ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার সরকার উত্খাতে একটি অভ্যুত্থান পরিকল্পনা নস্যাৎ করার খবর দেয়। সেই দলে থাকা জিয়া ঘটনার পরেই পালিয়ে যান। এরপর তাঁকে ধরিয়ে দিতে ছবিসহ সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে একের পর এক ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক-প্রকাশক, বিদেশি নাগরিক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে হত্যার প্রেক্ষাপটে আবারও তাঁর নাম আলোচনায় আসে। একসময় এবিটির তাত্ত্বিক নেতা মুফতি জসিমউদ্দিন রাহমানির ঘনিষ্ঠ ছিলেন জিয়া। ২০১৩ সালে ব্লগার রাজীব হায়দার খুনের পর এবিটিতে জিয়ার কার্যক্রম প্রকাশ পায়। রাহমানি গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে জেলে রয়েছেন। ২০১৬ সালে পুলিশ সদর দপ্তর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়, জিয়া আল-কায়েদাপন্থী  জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান। সূত্র: কালের কণ্ঠ