‘আমি তার ছোট ছোট ৩ সন্তানকে কী বলব?’

‘আমি তার ছোট ছোট ৩ সন্তানকে কী বলব?’

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

ভারতের বিজেপিশাসিত ঝাড়খন্ডে স্বঘোষিত গো-রক্ষকদের আক্রমণে দুই মুসলিম যুবক নিহত হয়েছে। বুধবার সকাল নয়টার দিকে ওই ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, চিরাগউদ্দিন আনসারি (৩৫) ও মুর্তজা আনসারি (৩০)। ঝাড়খন্ডের গোড্ডা জেলার সংশ্লিষ্ট এলাকার গ্রামবাসীরা ওই দুজনের বিরুদ্ধে মহিষ চুরির অভিযোগ করে।

 

এলাকাবাসীর দাবি, তারা ১৩টি মহিষ চুরি করে পালানোর সময় গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পড়ে। তাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে নিহতদের পরিবার।

তারা বলেন, নিহত দুজনের বিরুদ্ধে পশু চুরির অভিযোগ ভিত্তিহীন। এটি ‘পরিকল্পনামাফিক ষড়যন্ত্রের ফল’ বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

নিহত মুর্তজা আনসারির বাবা হালিম আনসারি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা পুরোনো শত্রুতার ঘটনা। আমার ছেলেকে ধোঁকা দিয়ে গ্রামে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এটা কী ধরণের আইন যে, ছেলেকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হলো? ও পশু চোর নয়, বরং পশুর ব্যবসা করতো। এখন আমি তার ছোট ছোট তিন সন্তানকে কী বলব? তারা তার বাবার পথ চেয়ে আছে। ’

স্থানীয় কংগ্রেস নেতা ও সাবেক জেলা সভাপতি দীপিকা পাণ্ডে বলেন, ‘ঈদের সামনে অশান্তি ছড়ানোর ষড়যন্ত্র। যখনই রাম মাধব ঝাড়খণ্ডে আসেন তখনই এ ধরণের কোনো না কোনো ঘটনা ঘটে। আসলে বিজেপি সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সুবিচার করা হচ্ছে না। ওই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। ’

অন্যদিকে, বিজেপি’র জেলা সভাপতি রাজেশ ঝা’র দাবি নিহতরা পশু চোর ছিল। এ নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়।

সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা ওই দু’জনকে গণপিটুনি দিয়ে এলোপাথাড়ি কিল-চড়-লাথি-ঘুষি মারে এবং নৃশংসভাবে বাঁশ ও লাঠি বেধড়ক মারধর করে। সংজ্ঞাহীন অবস্থাতেও একজনকে বাঁশে বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যেয়ে মারধর করা হয়। ঘটনাস্থলেই ওই দুই যুবকের মৃত্যু হয়।

জেলা পুলিশ কর্মকর্তা রাজীব রঞ্জন সিং বলেন, গ্রামবাসীরা গরু চোর সন্দেহে দুজনকে গণপিটুনি দিলে তাদের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় সন্দেহভাজন চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‘অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ সিভিল রাইটস’ (এপিসিআর)-এর পশ্চিমবঙ্গের আহ্বায়ক মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘পশু ব্যবসায়ী তো অনেকেই আছেন। তারা গবাদি পশুর ব্যবসা করে বলে তাদের প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হয়েছে, এটা একটা চক্রান্ত। যদি চুরি করার অপরাধও থাকে তাহলে তো প্রশাসন বুঝবে। শাস্তি তো কোনো জনসাধারণ দিতে পারে না। প্রশাসনের আইনানুগ পদ্ধতিতে বিচার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তার শাস্তি হবে। ’

তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত ভারতের বিভিন্ন জায়গায় গবাদি পশুর নাম করে, গরু হত্যার নাম করে, গরু চুরির নাম করে সংখ্যালঘু মানুষদের উপরে অত্যাচার চালানো হচ্ছে। আমরা মনে করি প্রশাসন এ দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখুক। যারা এভাবে হত্যা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিক।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর