পাহাড়ে বৃষ্টিতে আতঙ্ক, আশ্রয় কেন্দ্র মুখী মানুষ

পাহাড়ে বৃষ্টিতে আতঙ্ক, আশ্রয় কেন্দ্র মুখী মানুষ

রাঙামাটি প্রতিনিধি

বৃষ্টির তীব্রতায় বাড়ছে পাহাড়ে আতঙ্ক। তাই বাধ্য হয়ে ঘর ছাড়ছে মানুষ। রাঙামাটির ৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ২৫৯ জন আশ্রয় নিয়েছে। বাকিরাও আশ্রয় কেন্দ্র মুখি হচ্ছে।

তবুও পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে আছে রাঙামাটির প্রায় ১৫ হাজারেরও অধিক মানুষ।

অন্যদিকে মঙ্গলবার নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড় ধসে ১১জনের মৃত্যুর পর চাপা উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে। শোকের সাগরে বাসছে নানিয়ারচরের পুরো উপজেলা। স্বজন হারানো আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে চারপাশের পরিবেশ।

রাঙামাটি নানিয়ারচর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান কোয়ালিটি চাকমা জানান, মাটিচাপা পরে নিহত ১১জনের মরদেহ সনাক্ত করে তাদের স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রাঙামাটি  জেলা প্রাশাসন ও জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তাদের দাহক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

অন্যদিকে টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটি শহরের প্রাণ হানিরমত কোনো ঘটনা না ঘটলেও পাহাড় ধসে তছনছ হয়ে যায় পুরো রাঙামাটি। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সাজানো বাড়ি-ঘরগুলো এখন প্রায় বিধ্বস্ত। দুমরে মুছরে আছে গাছ-গাছালিও। ভেঙ্গেছে বিভিন্ন সড়ক। উঠে গেছে সড়কের প্লাস্টার ও কংক্রির। বেশিরভাগ এলাকার সড়কে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দরে পরিণত হয়েছে। ধসে পরছে পিলার, বাড়ি-ঘরের প্লাস্টার ও সীমানা প্রাচির।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের এক পরিসংখ্যনে দেখা গেছে-জেলার ১০টি উপজেলায় মোট ৩ হাজার ৩৭৮টি পরিবারের ১৫ হাজারেরও বেশি লোক পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করে। তার মধ্যে রাঙামাটি সদরের ৯টি ওয়ার্ডে ৩৪টি এলাকায় ৬০৯ পরিবারের প্রায় আড়াই হাজার ও সদর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ৭৫০ পরিবারের ৩হাজার ৪২৪ জন মানুষ পাহাড়ের ঢালে ঝুঁকিতে বসবাস করছে। যদিও পাহাড় ধসে সম্ভাব প্রাণ হানি এড়াতে তৎপর স্থানীয় প্রশাসন।

তাই রাঙামাটি জেলা প্রশাসন এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেছেন, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত রাঙামাটি। তবে তার জন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। প্রশাসন আপ্রাণ চেষ্ট করছে সবাইকে নিরাপদে রাখতে। তবুও যারা ইচ্ছে করে পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তাদের জন্য প্রাণহানির ঘটনা এড়ানো সম্ভবনা। তবুও মানুষদের নিরাপদ স্থানে সড়ে নিতে মাঠে কাজ করছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী ও পুলিশ।
আর এদিকে আবহওয়া অফিসের ভারপাপ্ত কর্মকর্তা ক্যাচিংনু মারমা জানান, লঘুচাপের কারণে রাঙামাটিতে আরও তিনদিন পর্যন্ত দমকা, ঝড়ো হাওয়া ও বিজলী চমকানোসহ ভারী থেকে মাঝারী ধরনের বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সম্প্রতি সময় রাঙামাটিতে ২৫৭ থেকে ২৬৪ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি।

উল্লেখ্য, বছর ঘুরতেই রাঙামাটি পাহাড় ধসে ফের প্রাণহানির ঘটনা ঘটলো। ২০১৭সালে ১৩জুন ছিল রাঙামাটিবাসির জন্য একটি ভয়াল দিন। ভারি বর্ষণের তীব্রতায় যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকায় পরিনত হয় পাহাড়। পাহাড়ি মাটিতে বিলিন হয়ে যায় হাজার হাজার বাড়ি-ঘর। ৫জন সেনাকর্মকর্তা ও সদস্যসহ প্রাণ হারায় ১২০জন। সেসময় মাটি চাপায় নিখোজ হয় ১৭টি পরিবার। যাদের এখনো পর্যন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়নি। ভিটে মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় হাজারো মানুষ। সে শোকের ছায়া এখনো কাটেনি। তার মধ্যে ফের পাহাড় ধসে প্রাণ হারালো আরও ১১জন। এটা ছিল ২০১৮ সালে ১২জুনের মধ্যে ভয়াল ঘটনা। তবে এতে শেষ নয়। কারণ এখনো বৃষ্টি অব্যাহত আছে। তাই পাহাড় ধসের শঙ্কা এখনো কাটেনি। নিষ্টুর পাহাড় আর কত মানুষের প্রাণ নিবে তার কোন হিসেব কারো জানা নেয়।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/মুমু/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর