লঞ্চের ভয়াবহতা অগ্নিদগ্ধদের মাঝে, ঘুমের মধ্যেও আঁতকে উঠছেন

আগুনে পুড়ে যাওয়া লঞ্চ

লঞ্চের ভয়াবহতা অগ্নিদগ্ধদের মাঝে, ঘুমের মধ্যেও আঁতকে উঠছেন

রাহাত খান, বরিশাল

দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারছেন না বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ঝালকাঠিতে লঞ্চে অগ্নিদগ্ধরা। হতাহত হয়ে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এলেও ওই দৃশ্য চোখে ভাসতে সব সময়। ঘুমের মধ্যেও আঁতকে ওঠেন তারা। আগুনে পুড়ে মৃত্যুর বিভৎস দৃশ্য কাছ থেকে দেখেছেন তারা।

শিশুসহ নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েও প্রাণে বেঁচে গেছেন অনেকে।

এদিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে ঢাকা থেকে আগত ৭ বিষেশজ্ঞ চিকিৎসকের সেবায় ক্রমেই সুস্থ হয়ে উঠছেন দগ্ধরা। আইসিতেও চিকিৎসাধীন ৩ জনের অবস্থারও উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে কোন কোন রোগী প্রয়োজনীয় ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।

রোগীদের সব চাহিদা পূরণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিচালক।  

ঢাকা থেকে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ঝালকাঠির কাঠালিয়ার নিজ বাড়ি যাচ্ছিলেন আফজাল হোসেন। ঝালকাঠি শহর ছাড়িয়ে অভিযান লঞ্চটি যখন সুগন্ধা নদী অতিক্রম করছিলো তখন ইঞ্জিন রুমে বিস্ফোরণ হয়। ওই সময় প্রাণে বাঁচতে লঞ্চের তৃতীয় তলায় ওঠেন তিনি। কোন উপায়ন্ত না পেয়ে তিনি নদীতে ঝাঁপ দেন। এর আগে প্রাণে বাঁচতে শিশু ও নারীদের আকুতি এখনও চোখে ভাসছে তার। ওই দুঃসহ স্মৃতি কোনভাবেই ভুলতে পারছেন না আফজাল।  

একইভাবে পরিবারের ৪ সদস্য নিয়ে অভিযান লঞ্চের কেবিনে বরগুনায় যাচ্ছিলেন পটুয়াখালীর কলাপাড়ার বাইজিদ। রাতে লঞ্চের নিচতলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চিৎকার আহাজারীতে ঘুম ভেঙ্গে যায় তাদের। আগুন বাড়তে থাকলে কোন উপায়ন্ত না দেখে লঞ্চের সামনে গিয়ে শিশু ভাতিজাকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। পানির গভীর থেকে কোনমতে উপরে ভেসে উঠে তীরে শিশুটিকে রেখে ফের লঞ্চের কাছে গিয়ে ভাবীকে লাফ দিতে বলেন তিনি। লাফ দিয়ে পা ভেঙ্গে যাওয়া ভাবীকে নদীর তীরে রেখে ফের লঞ্চে উঠে ভাবীর বৃদ্ধ মাকে কোলে করে নদীতে পড়েন বাইজিদ।

তাদের মতো অনেক যাত্রী বেঁচে গেলেও দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারছেন না তারা। কিভাবে বেঁচে গেছেন তাও বলতে পারছেন না তারা। ওই দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।  

এদিকে ওই লঞ্চে দগ্ধ রোগীদের মধ্যে ৩৭ জন আজ সকাল পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলো শেবাচিম হাসপাতালে। ঢাকা থেকে আগত ৭ জন বার্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিবীরভাবে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন তাদের। এতে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন তারা। তাদের চিকিৎসায় খুশি দগ্ধ রোগীরা। তবে কেউ কেউ প্রয়োজনীয় ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।  

ঢাকার বার্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. নুরুল আলম জানান, চিকিৎসাধীন ৩৭ জন রোগীর সবার অবস্থান স্থিতিশীল এবং আশংকামুক্ত। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা চলছে। কেউ চিকিৎসা বঞ্চিত হবেন না বলে জানান তিনি।

এদিকে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম জানান, লঞ্চে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার্থে একটি কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। তাদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপাকে কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট আন্তরিক।  

চিকিৎসাধীন ৩৭ জন রোগীর মধ্যে ৩ জন আইসিইউ’তে, ৫জন অর্থপেডিক বিভাগে এবং ৫ শিশুসহ ২৯জন সার্জারী বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

আরও পড়ুন


লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড: মালিকসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

news24bd.tv এসএম