মেগা প্রকল্পে মেগা দুর্নীতি: পরিকল্পনা মন্ত্রী

পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান

মেগা প্রকল্পে মেগা দুর্নীতি: পরিকল্পনা মন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ, শিক্ষা ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতার কারণে সরকারের ক্ষতি হচ্ছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে এ অবস্থার উত্তরণ হওয়া প্রয়োজন। দুর্নীতি আছে এটি স্বীকার করতে হবে। মেগা প্রকল্পে মেগা দুর্নীতির সুযোগ রয়েছে।

উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রীতা, প্রকল্প ব্যায় বৃদ্ধি ও দুর্নীতি এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন টেকসই করার পথে বড় চ্যালেঞ্জ।

রোববার (২ জানুয়ারি) এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি’ নিয়ে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্না এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা কয়েকগুণ বাড়লেও দুর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করা যায় না।

এটি একটি মনঃস্বাত্তিক বিষয়। দুর্নীতি হ্রাস করতে হলে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো বেশি শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের একাধিক গাড়ী ব্যবহারের প্রবণতাকে তাদের ব্যক্তিগত ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। দুর্নীতির ঘটনায় দায়ী ব্যাক্তিদের অবশ্যই তিরষ্কার ও অপরাধ অনুযায়ী দণ্ডের ব্যবস্থা করতে হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রী আরো বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মানব সম্পদ উন্নয়নের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। বাংলাদেশে এখনো ৪০ শতাংশ লোক নিরক্ষর। তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি ও গুণগত শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

এলডিসির গ্র্যজুয়েশন বাস্তবায়নে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের গুরুত্ব প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা নির্বাচন। যে কোন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়া উচিত। তবে নির্বাচন নিয়ে দ্বিমুখীতা থাকা উচিত নয়। কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও তা প্রতিহত করার অধিকার তারা রাখে না।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ আমাদের জন্য যাতে গলার কাটা না হয়ে দাঁড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাই প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে মনোযোগী হয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার দিকে নজর দেয়া জরুরী। এলডিসি উত্তরণের পথে দুর্নীতি একটি বড় বাধা। দুর্নীতি না থাকলে প্রবৃদ্ধি আরো বাড়তো। তাই এলডিসির চ্যালেঞ্জ উত্তরণে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরাটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে সরকার ও জনগনের আত্মবিশ্বাস ও মর্যাদার বিকাশ ঘটবে। বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। এলডিসি উত্তরণের জন্য নির্ধারিত ৩টি মানদণ্ড পর পর ২ বার বাংলাদেশ পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। পদ্মা সেতু পুরোপুরি চালু হলে জিডিপি ৩ শতাংশ বাড়বে।

এলডিসির চ্যালেঞ্জ উত্তরণে অনুষ্ঠানের সভাপতি ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ১০ দফা সুপারিশ করেন। সুপারিশগুলো হচ্ছে- ১. এলডিসি থেকে উত্তরণের পর অন্তত আরো ১২ বছর বিদ্যমান শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা প্রাপ্তির জন্য ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি জোরদার করা ২. বিকাশমান ওষুধ শিল্প পেটেন্ট সুবিধা বাড়ানোর জন্য জোর চেষ্টা অব্যাহত রাখা ৩. এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসন নিশ্চিত করে বাংলাদেশীদের রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি করে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরতা কমানো ৪. রাজস্ব আহরণে বৈচিত্রতা সহ আভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আয় বৃদ্ধি করা ৫. বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন তৈরী করে মানব সম্পদ উনড়বয়নে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা ৬. সাম্প্রতিক সময়ে কোভিডের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা উত্তরণে নব্য দারিদ্রের জন্য আয় বর্ধণমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করা ৭. এলডিসি থেকে উত্তরণে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য গঠিত ফান্ড থেকেও বাংলাদেশের সহায়তা কমে যাবে। তাই জলবায়ু অর্থায়নে বৈদেশিক উৎসের ওপর নির্ভর না করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিতের মাধ্যমে বিপন্ন জনগোষ্ঠী এবং জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য অর্থায়ন নিশ্চিত করা ৮. আমদানি-রপ্তানিতে ব্যয় কমানোর জন্য পরিবহন-বন্দর, আইসিটি অবকাঠামো উনড়বয়ন করে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সক্ষমতা আরও বড়িয়ে মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা ৯. ব্যাংকিংসহ পুরো আর্থিক খাতে সুশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে খেলাপি ঋণ কমানো ১০. বাংলাদেশের লিঙ্গ সমতা অর্জনের জন্য বাস্তবতা নিরিখে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে প্রতিযোগিতায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক অনিমেষ কর, সাংবাদিক কাবেরী মৈত্রেয় ও সাংবাদিক সুশান্ত সিনহা।

আরও পড়ুন


যে কারণে বিয়ে করছেন না মিমি!

news24bd.tv এসএম