দোকানটি ঠিকই আছে, নেই শুধু 'মউ'

নিজের দোকানের সামনে মউ

দোকানটি ঠিকই আছে, নেই শুধু 'মউ'

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক:

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন কিন্তু মউর দোয়ানের (মামার দোকান) নাম শোনেননি এমন কাউকে হয়ত পাওয়া যাবে না। শাটল ট্রেনে চড়ার আগে মউর দোয়ানে বসে সিঙারা-সমুচার সঙ্গে কিছুক্ষণ আড্ডা না দিলে যেন দিনটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা ধূলিকনার সঙ্গে যেন মিশে আছে 'মউ' নামটি। তার আসল নাম গুরা মিয়া (৭০) হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি 'মউ' (মামা) নামেই পরিচিত।

অনেকবার তার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়েছিল। কিন্তু, সব সংবাদকে ছাপিয়ে প্রতিবারই তিনি দোকান খুলে বসেছেন। তবে আর তিনি দোকান খুলবেন না। মউর দোয়ান হয়ত ঠিকই থাকবে, দেখা যাবে না শুধু মউকে।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ৭০ বছর বয়সে সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রিয় ‘মউ’ (ইন্না লিল্লাহি....রাজিউন)।  

জানা গেছে, হৃদরোগ ও কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন চবি'র প্রিয় মুখ মউ। শুক্রবার ভোরে সেটি বেড়ে গেলে তাকে তড়িঘড়ি করে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সকাল সাড়ে আটটায় সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

স্বাধীনতার পরেই তিনি এখানে দোকান দেন। শুরু থেকেই তাকে মউ বলে সম্বোধন করতেন শিক্ষার্থীরা। এ থেকেই নিজের দোকানের নাম দেন ‘মউর দোয়ান’। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি। ছিলেন না কোন কর্মচারীও। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তার সখ্যতা যেন সবচেয়ে পুরনো। চবি রেলস্টেশনে চালাতেন ছোট্ট একটি খাবারের দোকান। সেই দোকান চালানো সাধারণ মানুষটা যে এতোটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে তা যেন ভাবনার অতীত! বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের বাংলা সাহিত্য নামের একটি কোর্সের ‘কবিতা ও রম্য রচনা’ অংশে ১০ নম্বরের প্রশ্ন এসেছিল ‘মউর দোয়ান নিয়ে’। বলা হয়েছিল মউ ও দোকান নিয়ে একটি কবিতা লিখতে।

গুরা মিয়ার (মউ) মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কাঁদছে যেন প্রকৃতিও। চবি রেলস্টেশন চত্ত্বরে প্রতিটা দোকানেই এখন আলোচ্য বিষয় 'মউ'।  

জানা গেছে, শুক্রবার সকালে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রথমে ছড়িয়ে পড়ে খবরটি। প্রথমে কেউ বিশ্বাস না করলেও হল থেকে ছুটে যান শিক্ষার্থীরা। এরপরই খবরটি চবি'র বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে শেয়ার হতে থাকে। মউর মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

সম্পর্কিত খবর