শিশুদের নিউমোনিয়া প্রতিরোধে করণীয়

প্রতীকী ছবি

শিশুদের নিউমোনিয়া প্রতিরোধে করণীয়

সিন্ধুরা মুনুকুন্তলা

নিউমোনিয়া চিকিত্সাযোগ্য ও প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ। এরপরও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের অসুস্থতা ও মৃত্যুর কারণ হিসেবে নিউমোনিয়া শীর্ষে। ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, যুগে যুগে বহু প্রাণ কেড়ে নিলেও যঠেষ্ট গুরুত্ব পায়নি এই রোগ। তাই হয়তো নিউমোনিয়াকে “দ্য ফরগটেন কিলার অব চিলড্রেন” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে ইউনিসেফ।

যেকোন দেশের, যেকোন বয়সের ও লিঙ্গের মানুষই নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের ঝুঁকিতে থাকে। তবে শিশুদের ঝুঁকি ও মৃত্যুহার তুলনামূলক বেশি।


শিশুদের নিউমোনিয়ার ঝুঁকির কারণ:
নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুদের নিউমোনিয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি থাকে। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবারের শিশুরা পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে শরীরে পর্যাপ্ত ইমিউনিটি বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয় এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে সফলভাবে লড়াই করতে পারে।

তবে নিম্নবিত্তদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন হওয়ায় তাদের ইমিউনিটি কম থাকায় রোগ্রাক্রান্তের ঝুঁকি বেশি থাকে। পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে একটি শিশুর ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হতে পারে। এইচআইভি, হাম ইত্যাদি রোগের সংস্পর্শে থাকা শিশুদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি থাকে। অপরদিকে পরিবেশগত কারণ, যেমন; অভ্যন্তরীণ অর্থাৎ বাড়ির মধ্যে বায়ু দূষণ (জ্বালানী দ্বারা সৃষ্ট), জনাকীর্ণ বাড়িতে বসবাস, পরোক্ষ ধূমপান ইত্যাদি শিশুর রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে পারে পারে।

ঝুঁকি হ্রাসে করণীয়:
নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের ঝুঁকি হ্রাসে অভিভাবকদের করণীয় হলো; অভ্যন্তরীণ বায়ু দূষণ হ্রাস, বাচ্চাদের সিগারেটের ধোঁয়ার সংস্পর্শে না রাখা, সাবান দিয়ে ঘনঘন হাত পরিষ্কার, নিরাপদ পানি পান করা, সঠিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত ইত্যাদি। এসকল ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণের মাধ্যমে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে। ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হলেও নিউমোনিয়া প্রতিরোধ সম্ভব।

শিশুদের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করার উপায়:
১) পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ- পর্যাপ্ত পুষ্টি শিশুদের ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী করে তোলে। তাই পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ ও অপুষ্টিকর খাবার বর্জন করা প্রয়োজন।
২) বুকের দুধ খাওয়ানো- বাচ্চার ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। বুকের দুধে শরীরের প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টিই বিদ্যমান থাকে, যা শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে আবশ্যক। এছাড়া বুকের দুধ ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী করে তোলে, যা নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে দ্রুত লড়াই করতে পারে।
৩) টিকা গ্রহণ- জাতীয় নির্দেশিকা অনুযায়ী হিব, নিউমোকোকাস, হাম এবং হুপিং কাশির (পারটুসিস) টিকা গ্রহণ।   


নিউমোনিয়া হলে শিশুর জরুরী চিকিৎসা সুবিধা প্রয়োজন হয়। বেশিরভাগ নিউমোনিয়া হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়। এছাড়া প্রয়োজন অক্সিজেন সরবরাহের। অবস্থা গুরুতর হতে থাকলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড-১৯ ও নিউমোনিয়া ভয়াবহ দুটি রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপসর্গসমূহ প্রায় একইরকম হওয়ায় রোগ দুটি বেশি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। উভয় রোগের মোকাবিলা ও প্রতিরোধ করতে মাস্ক পরিধান, শারীরিক দূরত্ব বজায়, হাত ধোয়াসহ সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করাতে হবে।

নিউমোনিয়া নিরাময়যোগ্য একটি রোগ। তবুও এই রোগে অসুস্থতা ও মৃত্যুহার বৃদ্ধি জন্য আমাদের অসচেতনতাই মূলত দায়ী। তাই আতঙ্কিত না হয়ে রোগ সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে এবং আক্রান্ত হলে অবিলম্বে চিকিত্সা গ্রহণ করতে হবে।

লেখক : সিন্ধুরা মুনুকুন্তলা। কনসালটেন্ট, পেডিয়াট্রেশিয়ান,ইয়াশোদা হসপিটালস, হায়দ্রাবাদ।  

news24bd.tv /আলী