মরদেহ উদ্ধারের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমু হত্যা রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। তদন্তের সময় প্লাস্টিকের সুতার সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করে পুলিশ। এ ঘটনায় শিমুর স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল (৪৮) ও তার বাল্যবন্ধু গাড়িচালক এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদকে (৪৭) গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিমুকে (৩৫) হত্যার দায় শিকার করেছেন তার স্বামী খন্দকার নোবেল।
এদিকে পুলিশের জেরায় চাঞ্চল্যকর সব তথ্য দিয়েছেন নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ।অভিনেত্রী শিমু সপরিবারে কলাবাগান থানার গ্রিনরোড এলাকায় থাকতেন। সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানার হজরতপুর ইউনিয়নের আলীপুর ব্রিজ এলাকায় রাস্তার পাশে ঝোপের ভেতর থেকে শিমুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। একই দিন কলাবাগান মডেল থানায় স্ত্রী নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শিমুর স্বামী নোবেল।
মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) রাতে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. কামরুজ্জামান জানান, মরদেহ উদ্ধারের পর তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে নিহত নারীর পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে। পাশাপাশি অভিনেত্রী শিমুর বাসায় গিয়ে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে। এ সময়ই একটি প্লাস্টিকের সুতার সূত্র ধরে উদ্ঘাটন হয় হত্যার মূল রহস্য।
তিনি বলেন, মরদেহ গুম করতে দুটি বস্তা যে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল, সেই সুতার হুবহু এক বান্ডিল শিমুর স্বামী নোবেলের গাড়িতে পাওয়া যায়। গাড়িটি ধোয়া ছিল এবং দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো ছিল। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোবেলকে আটক করে পুলিশ।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর নোবেল ও তার গাড়িচালক ফরহাদ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন বলেও জানান এআইজি মো. কামরুজ্জামান।
জিজ্ঞাসাবাদে শিমুর স্বামী জানান, পারিবারিক কলহের জেরে তিনি শিমুকে হত্যা করেছেন। ১৬ জানুয়ারি (রোববার) সকাল ৭টা-৮টার দিকে তিনি শিমুকে গলাটিপে হত্যা করেন। এরপর ফরহাদকে মুঠোফোনে কল করে ডেকে নেন। পরে ফরহাদ ও নোবেল পরিকল্পনা করে বাইরে থেকে বস্তা এনে শিমুর মরদেহ লম্বালম্বিভাবে দুটি পাটের বস্তায় ভরে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করেন। এরপর বাড়ির দারোয়ানকে নাশতা আনতে বাইরে পাঠিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে শিমুর মরদেহ নিয়ে বেরিয়ে যান।
প্রথমে নোবেল ও ফরহাদ মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে মরদেহ গুমের উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে তারা আবার বাসায় ফেরেন। ১৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আবার তারা মরদেহ গুম করতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার হজরতপুর ইউনিয়নের কদমতলী এলাকার আলীপুর ব্রিজের ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোপের ভেতর রাত সাড়ে ৯টার দিকে মরদেহ ফেলে চলে যান।
আরও পড়ুন:
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে দশ হাজার ইউরো জরিমানা
আবুধাবি বিমানবন্দরের কাছে তিনটি তেলের ট্রাকে বিস্ফোরণ
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় করা মামলায় শিমুর স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল ও গাড়িচালক এস এম ফরহাদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। অভিনেত্রী শিমুর স্বামী ও তার গাড়িচালক দুজনই মাদকাসক্ত এবং বেকার বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এদিকে শিমুকে যে এভাবে মেরে ফেলা হবে ভাবতেই পারছেন না তার ছোটবোন ফাতিমা নিশা।
শিমুর মরদেহ উদ্ধার হওয়ার আগের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ফাতিমা বলেন,‘রোববার সন্ধ্যায় আমার কাছে একটি ফোন আসে যে, আমার বোন রাইমা ইসলাম শিমুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। তখন থেকেই শিমুর ফোন নাম্বারে বারবার কল দিই। নাম্বার বন্ধ পাচ্ছিলাম। পরে আমি আমার বোনের মেয়েকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করি— তোমার আম্মু কোথায়? সে আমাকে বলে, মা সকালে একা বের হয়েছে এখনও বাসায় ফেরেননি। তার পর আমি আমার বোনের স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল ভাইকে ফোন দিই। তাকে ফোন দিয়ে বলি, ভাইয়া আপু কোথায়? তার ফোন তো বন্ধ পাচ্ছি। তখন তিনি আমাকে বলেন, আমি তো বিষয়টি জানি না। সারাদিনে আমি তাকে ফোন দিইনি। তার নাম্বার যে বন্ধ সেটিও আমি জানি না। ’
পর দিনই (সোমবার) শিমুর লাশ উদ্ধারের বিষয়টি জানতে পারেন ফাতিমা।
news24bd.tv/আলী