তিনশতাধিক বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের ভাতা না পাওয়ার অভিযোগ

ফাইল ছবি

তিনশতাধিক বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের ভাতা না পাওয়ার অভিযোগ

বেলাল রিজভী,মাদারীপুর 

মাদারীপুরের কালকিনিতে এক বছর ধরে তিনশতাধিক বিধবা ও প্রতিবন্ধীরা তালিকাভুক্ত হলেও ভাতা  বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অসহায়, হত দরিদ্র এসব ব্যক্তিরা ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। স্থানীয়রা বলছেন, এসব হত-দরিদ্রদের ভাতা দ্রুত প্রদান করা হোক।  

তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন, ভাতার টাকা বিতরণে কোন অনিয়ম হয়নি।

যারা টাকা পাচ্ছেন না তাদের কাগজপত্র তদারকি করে দেখা হবে।  

সরেজমিন জানা গেছে, মাদারীপুরের কালকিনি পৌর শহরের ৭ নং ওয়ার্ডের উত্তর রাজদী গ্রামের শাহিনুর বেগম। নিঃসন্তান শাহিনুরের স্বামী মারা গেছে অনেক বছর আগে। বোনের স্বামীর বাড়িতে ছোট্ট একটি ঘর তুলে বসবাস করছেন।

তবে, শাহিনুরের বোন ও তার স্বামীও অনেক আগে মারা গেছে। আপনজন বলতে আর কেউ নেই। সরকারি ভাবে বরাদ্দকৃত বয়স্ক ভাতার টাকা দিয়ে সে ঔষধপত্র কিনে খেত। কিন্তু গত এক বছর ধরে ভাতার টাকা না পাওয়ায় মানবেতন জীবন পার করছেন তিনি। শুধু শাহিনুর বেগমই নয়। একই গ্রামের প্রায় ৮০ বছরের বৃদ্ধা রহিমুন নেসা। তার একমাত্র মেয়ে ও গরীব মেয়ের জামাইর বাড়িতে থাকে। তিনিও গত এক বছর ধরে সরকারি ভাবে বরাদ্দ দেওয়া ভাতার টাকা পাচেছ না। হত-দরিদ্র, অসহায় রহিমুন নেসাও মানবেতন জীবন যাপন করছেন।

কালকিনি উপজেলার বিভাগদী গ্রামের দেলোয়ার সরদারের প্রতিবন্ধী ছেলে মারুফ আহমেদও এখনো পর্যন্ত প্রতিবন্ধী ভাতা পাননি বলে অভিযোগ করে। শুধু এরাই নয়। কালকিনি পৌরসভার তথ্য মতে এরকম আরো তিন শতাধিক ভাতাভোগীরা গত এক বছর ধরে সরকারি ভাতা পাচ্ছে না। কালকিনি উপজেলা সমাজ সেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালকিনি উপজেলায় বয়স্ক ভাতা ১০ হাজার ৯’শ ৪১ জন, বিধবা ভাতা ৪ হাজার ৩’শ ৬৯ জন, প্রতিবন্ধী ভাতা ৪ হাজার ৪’শ ৭৫ জন ও শিক্ষা উপবৃত্তি ১৭১ জনসহ ১৯ হাজার ৯ ’শ ৫৬ জন হতদরিদ্র অসহায় মানুষকে সরকারি ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে।

স্থানীয়রা দ্রুত তাদের ভাতা প্রদানের দাবী জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা আবির পারভেজ বলেন, শাহিনুর বেগম ও করিমুন নেছার মত অনেকেই এই সরকারি ভাতা থেকে বঞ্চিত। শাহিনুর বেগমের ছেলে মেয়ে কিংবা স্বামী নেই। বিভিন্ন মানুষের সাহায্য সহযোগিতাতেই তার সংসার চলে। এরা সরকারি ভাতা পেলে উপকৃত হতো। কিন্তু রহস্যজন জটিলতায় বর্তমানে এদের ভাতা বন্ধ। আমরা চাই দ্রæত জটিলতা কাটিয়ে ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হোক। কালকিনি পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান তালুকদার লাবু বলেন, ভাতা প্রত্যাশি তিনশতাধিক লোকজন আমাদের কাছে আসে ভাতা পাওয়ার জন্য কিন্তু সমাজ সেবা অফিসের জটিলতার কারনে ভাতা পাচ্ছে না। এরা সবাই ভাতা পাওয়ার জন্য তালিকা ভুক্ত কিন্তু টাকা পাচ্ছে না।

বৃদ্ধা শাহিনুর বেগম বলেন, আগে ব্যাংক থেকে আমাদের ভাতার টাকা দিতো। তখন নিয়মিত পেতাম কিন্তু মোবাইল নম্বরে দেয়ার শুরু করার পর থেকেই ঝামেলা শুরু হয়েছে। এক কিস্তি টাকা পাইছি রোজার সময় আর পাইনি। একই রকম কথা বললেন রহিমুন নেছা।  

তিনি বলেন, আগে ঠিক মতই পেতাম এখন পাইনা। এই টাকা পাইলে অনেক উপকার হতো। শারিরীক প্রতিবন্ধী মারুফের বাবা দেলোয়ার সরদার বলেন, আমার ছেলে শারিরীক প্রতিবন্ধী। ভাতার কার্ড করে দিছে কিন্তু ভাতা পাই না। মোবাইলে ভাতার ম্যাসেজ আসছে কিন্তু হিসাবে টাকা জমা হয়নি। আমরা চাই এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হোক।

তবে, কালকিনি উপজেলা সমাজ সেবা অফিসের সহকারী সমাজ সেবা কর্মকর্তা মশিউর রহমানের দাবী, সঠিক ভাবেই তারা তালিকা অনুসারে প্রতি কিস্তিতে টাকা মোবাইলে পাঠাচ্ছেন। তবে কেউ যদি পেয়ে না থাকে তাহলে তদারকি করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
news24bd.tv/আলী