বাসযোগ্য হচ্ছে না পূর্বাচল, ভুল মানুষদের হাতে প্লট

বাসযোগ্য হচ্ছে না পূর্বাচল নতুন শহর

বাসযোগ্য হচ্ছে না পূর্বাচল, ভুল মানুষদের হাতে প্লট

অনলাইন ডেস্ক

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জের কিছু অংশ নিয়ে ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে ৬ হাজার ১৫০ একর জমিতে বাস্তবায়ন শুরু হয় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প।

এই প্রকল্পটি তিন দফা সময় বাড়িয়ে ২০১০ সালের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু তারপর আরও দু’দফা সময় বাড়িয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। সেটিও সম্ভব হয়নি।

এরপর ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে এক পর্যায়ে ২০২১ সালের জুনে শেষ করার কথা বলা হয়। সেই সময় আবার এক বছর বাড়ানো হয়েছে। সে অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুনে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্রায় দেড় যুগ আগে ৫ কাঠার প্লট বরাদ্দ পান উত্তরবঙ্গের আদিবাসিন্দা রেজাউল করিম।

কিন্তু চাকরির সুবাদে থাকেন ঢাকাতে। গত বছর দাপ্তরিক কাজ শেষ করে প্লটের দখলও বুঝে নিয়েছেন তিনি। কিন্তু বাসাবাড়ি বানিয়ে থাকার ব্যবস্থা করতে পারেননি।

দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক দেশ রূপান্তরের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেন তিনি। সংবাদমাধ্যমটিকে রেজাউল করিম জানান, পূর্বাচল প্রকল্পের প্রথম দিকের কিছু সেক্টরের প্লট বাসযোগ্য হয়েছে, সেখানে রাস্তাঘাট হয়েছে। বেশির ভাগ জায়গায় ড্রেনেজ, স্যুয়ারেজ লাইন নেই। নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। ফলে একজন বরাদ্দ গ্রহীতা চাইলেই সেখানে বাড়ি বানিয়ে থাকতে পারবেন না।

রেজাউল করিমের মতো পূর্বাচল নতুন শহরের প্লট পাওয়া বেশিরভাগ মানুষ এমন সমস্যার কথা বলছেন। কিন্তু নগরবিদরা বলছেন, যাদের প্রয়োজন নেই তাদের হাতে প্লটগুলো গেছে। আর তাই এ প্রকল্প বাসযোগ্য হচ্ছে না।

পূর্বাচলের এসব বিষয় নিয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, পূর্বাচল প্রকল্প ঘিরে রাজউকের পক্ষ থেকে সব কাজই প্রায় শেষ করেছে। যাদের হাতে রাজউকের প্লটগুলো গেছে তারা বাড়ি করছেন না। তাদের বাড়ি করার প্রয়োজন নেই। তাদের মূল শহরে থাকার ব্যবস্থা আছে। তাই তারা এসব প্লট কেনাবেচার মধ্যে রয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, পূর্বাচল নিয়ে আমাদের ভেবে দেখার সময় এসেছে। যাদের প্লট দেওয়া হয়েছে সেখানে বেশ কিছু শর্ত ছিল। এর অন্যতম শর্ত হলো- নির্ধারিত সময়ে স্থাপনা নির্মাণ করা। এ শর্ত বাস্তবায়নের দিকে হাঁটবে রাজউক। এতে যদি প্লট বাতিল করার মতো পরিস্থিতি হয় তাহলে তাই করতে হবে। রাজউকের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই।

প্রকল্পটির বিষয়ে গণমাধ্যমটিতে কথা বলেছেন নগরবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব। তিনি মনে করেন, সরকারি এ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের প্লটগুলো ভুল মানুষের হাতে গেছে। একটি ভুল ব্যবস্থাপনায় এগুলোর দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। যাদের প্লটের প্রয়োজন নেই সরকার তাদের হাতে প্লট দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ইকবাল হাবিব আরও বলেন, জনগণের করের টাকায় সরকার সেখানে সব ধরনের ইউটিলিটি সার্ভিস দিচ্ছে। এ প্রকল্প ঘিরে ৩০০ ফুট রাস্তা বানানো হয়েছে। এ রাস্তায় যে পরিমাণ অর্থ গেছে তা কোনো বরাদ্দ গ্রহীতা দেননি। রাজউকের উচিত ৩/৫ বছরের মধ্যে বরাদ্দগ্রহীতাদের বাড়ি বানানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া। যারা বাস্তবায়ন করবেন না তাদের কাছ থেকে প্লট ফিরিয়ে নেওয়া। আর প্লটগুলো ফেরানো হবে বরাদ্দ মূল্যে।

রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) ও পূর্বাচল নতুন শহরের প্রকল্প পরিচালক উজ্জ্বল মল্লিক বলেন, এ বছর থেকে এখানে প্লট পাওয়া লোকজন পানি পাবেন। রাস্তাও হয়ে গেছে। এখন তারা যদি বাড়ি না তৈরি করেন তাদের প্লট বাতিল করা ছাড়া আর কোনো রাস্তা খোলা নেই।

উজ্জ্বল মল্লিক আরও বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানকে প্লট দেওয়া হয়েছে তারা যদি স্থাপনা না তৈরি করে, তারা যদি তাদের কার্যক্রম শুরু না করে; তাহলে তো কিছু করার নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের ক্যাম্পাস করার জন্য ৫০ একর জমি দেওয়া হয়েছে। এমনভাবে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে অনেক বড় আকারের জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ২৫ হাজার প্লটের মধ্যে মাত্র ১৫০ জন লোক নকশা অনুমোদন করেছেন। তাদেরও সবাই বাড়ি বানাচ্ছেন না। ব্যক্তিগত উদ্যোগের চেয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশি তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। তারা যেন দ্রুত তাদের স্থাপনা তৈরি করেন।

এ প্রকল্প কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহকদের অভিযোগ হচ্ছে ড্রেনেজ বা স্যুয়ারেজ লাইন নিয়ে। আবাসিক না থাকলে তারা স্যুয়ারেজ তৈরি করবেন কীভাবে? এগুলো তো সচল থাকবে না। বিশ্বের কোনো শহরে অগ্রিম স্যুয়ারেজ করে রাখা হয় বলে তার জানা নেই। এছাড়া ফুটপাত করার বিষয়টিও এমনই। বাড়িঘর হলে এরপর লোকজনের জন্য ফুটপাত বানানো হবে।

রাজউকের চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, আমরা চলতি বছর থেকে পিপিপির মাধ্যমে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করছি। এখন সেখানে যদি বাসিন্দা না থাকেন এগুলোর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ বিল আছে। এগুলো কে দেবে? রাজউককে তা পরিশোধ করতে হবে।

আরও পড়ুন


২০ দিনে সাফারি পার্কে ৯ জেব্রার মৃত্যু, কারণ জানে না কর্তৃপক্ষ

news24bd.tv এসএম