উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করেছেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক। এসময় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মানবিক সহায়তা দিয়ে আটক সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তি চান তারা।
এসময় ড. জাফর ইকবাল বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি আর্টিকেল লিখে ১০ হাজার টাকা পেয়েছি। টাকাটা আমি তোমাদের (আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী) হাতে তুলে দিলাম।
আমাকে অ্যারেস্ট করুক। আমি দেখতে চাই আমাকে এখন কে অ্যারেস্ট করে।তিনি আরও বলেন, তোমাদের সাহায্য করলে যদি অ্যারেস্ট হতে হয়, হোক। পুলিশের আইজিপির সঙ্গে আমার পরিচয় আছে।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) ভোর ৪ টায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করেন অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অধ্যাপক জাফর ইকবাল এসব কথা বলেন।
শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পুরো দেশে আলোড়ন তুলেছে উল্লেখ করে জাফর ইকবাল বলেন, তোমরা আসলে কি করেছো, তা বলে বোঝাতে পারবো না। তোমরা ইতিহাস গড়েছো। তোমাদের মাধ্যমে যে বার্তা গিয়েছে, তাতে ভবিষ্যতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগের আগে একবার অন্তত ভাবা হবে। তোমাদের সঙ্গে দেশের সব তরুণ আছে।
শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জীবন অনেক মূল্যবান। তুচ্ছ বিষয়ে জীবন অপচয় করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আজ উচ্চ পর্যায়ের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা বাসায় এসেছিল। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তোমরা যা চাইছো, যে দাবি তোমাদের সেটা পূরণ হবে। তাদের সঙ্গে আলোচনার পর আমরা দেরি করিনি, সরাসরি এখানে চলে এসেছি। আমরা তোমাদের অনশন না ভাঙিয়ে যাবো না। তোমরা পুরো দেশ কাঁপিয়ে দিয়েছো।
অধ্যাপক জাফর ইকবাল আরও বলেন, তোমাদের পানি পান না করিয়ে আমি ক্যাম্পাস ছাড়বো না। আমি তোমাদের সব কথা বলতে পারছি না। তবে এতটুকু বলতে পারি তোমরা যা চাইবে, তোমাদের দাবি যা, তা পূরণ হবে।
টানা দুই ঘণ্টারও বেশি কথা বলার পর ড. জাফর ইকবাল ও তার সহধর্মিণী ড. ইয়াসমিন হক অনশন ভাঙতে রাজি করান শিক্ষার্থীদের। সকাল ৮টার দিকে ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রীর হাতে পানি পান করে বা অন্য কোনো আয়োজনে অনশন ভাঙবে বলে কথা দেয় শিক্ষার্থীরা।
তবে শিক্ষার্থীরা একদিনও ভিসি ফরিদ উদ্দিনকে দেখতে চান না বলে দাবি তোলেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মানবিক সহায়তা দিয়ে আটক সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তি চান তারা।
এর জবাবে অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হক বলেন, আমাদের উপর মহল থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে এসব মামলা তুলে নেওয়া হবে। পাশাপাশি শাবির সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীকেও আজ জামিন দেওয়া হবে।
এর আগে মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে সিলেটের উদ্দেশে রওনা দেন তারা।
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল দীর্ঘদিন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। ২৫ বছরের শিক্ষকতা জীবন শেষে ২০১৯ সালে অবসরে যান তিনি।
গত ১৭ জানুয়ারি থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার থেকে একই স্থানে অনশন শুরু করেন ২৪ শিক্ষার্থী। বাসবভনের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেওয়ায় ১৭ জানুয়ারি থেকেই কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
# শিক্ষার্থীদেরকে অনশন ভাঙার আহ্বান জানিয়ে যা বললেন ড. জাফর ইকবাল