শৈলকুপায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ

স্বতন্ত্র প্রার্থীর অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ

শৈলকুপায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় সপ্তম ধাপের ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নে শেখড়া বাজারে এঘটনা ঘটে।

বিষয়টি নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র (মোটরসাইকেল প্রতিক) চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক হোসেন বিশ্বাস। এ ঘটনার পর নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নে উত্তাপ বিরাজ করছে।

শান্তি বজায় রাখার জন্য প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সাধারণ ভোটররা।

জানা যায়, পঞ্চম ধাপে শৈলকুপায় ১২টি ইউনিয়নে গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচন শেষ হয়েছে। মামলা জটিলতায় বাকি ছিল নিত্যানন্দপুর ও মনোহরপুর ইউনিয়ন। এরপর সপ্তম ধাপে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি মনোহারপুর ও ১০ ফেব্রুয়ারি এই দুটি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে মনোহারপুর ইউপিতে নৌকা মনোনীত প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। অপর দিকে নিত্যানন্দপুর ইউপিতে মফিজ উদ্দিন নৌকা প্রতিক, বর্তমান চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন বিশ্বাস মোটরসাইকেল প্রতিক ও সাফিয়া খাতুন আনারস প্রতিক নিয়ে ভোট যুদ্ধে লড়াই করছেন।

নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন বিশ্বাসের অভিযোগ, ২৫ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) প্রতিক বরাদ্দের পর থেকে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী মফিজ উদ্দিন বিশ্বাসের সমর্থক উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শামীম মোল্লার নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দিয়ে এলাকায় সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দিয়ে আসছেন। মোটরসাইকেল প্রতিকের পক্ষে ভোট করতে কেউ মাঠে নামলে তাদের হাত-পা ভেঙ্গে ফেলাসহ বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের হুমকিও দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, গোপালপুর গ্রামের সামাজিক মাতব্বর নেকবার হোসেন ও তার কর্মী আবু সুফিয়ানের বাড়িতে গিয়ে হুমকি ধামকি দিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে আমি সঠিক বিচার চেয়ে এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেখড়া বাজারে পুলিশের উপস্থিতিতে আমার (মোটরসাইকেল মার্কার অফিস ভাংচুর করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ নিরব ছিল। এমন নিরবতা পালন করা পুলিশের ঠিক হয়নি।

শেখরা বাজার ও গোপালপুর গ্রামের সাধারণ ভোটাররাও জানান, বিকালে চায়ের দোকানে বসে ছিলাম। এমন সময় নৌকার শ্লোগান দিতে দিতে ২০-২৫ জন এসে নৌকার বিপক্ষে কাজ না করা জন্য ভয়ভীতি দিখিয়ে চলে যান। কিছুক্ষণ পর তারা শেখরা বাজারে গিয়ে মোটরসাইকেলের অফিস ভাংচুর করে।

এসব সম্পর্কে নৌকা প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মফিজ উদ্দিন বিশ্বাস জানান, কিছু ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা গোপালপুর গ্রামে গিয়েছিল। নৌকার বিপক্ষে কাজ করায় কিছু মানুষকে হুমকি-ধামকি দিয়েছে। গ্রামের ভোটাররা কেউ কেউ বলছে আনারস ও মোটরসাইকেল প্রতিকে ভোট দেব। এ জন্য তারা হুমকি দিয়েছে যেন নৌকার বাইরে কেউ কাজ না করে আর ভোট না দেয়। এর বেশী কিছু না। ভবিষ্যতে তারা আর এটি করবে না।

তিনি আরও বলেন, তবে অফিস ভাংচুরর ব্যাপারে এখনও আমি নিশ্চিত হতে পারছি না। উল্টো আমার কর্মী শামীম হোসেন মোল্লা গাড়িতে করে যাচ্ছিল। সেসময় মোটরসাইকেল সমর্থকেরা তার উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। সেই ই্ট এসে শামীম হোসেন মোল্লার পায়ে লাগে। ওই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই সুযোগে নিজেরা তাদের অফিস ভাংচুর চালিয়ে আমাকে মিথ্যা দোষারোপ করছে।

এব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম হোসেন মোল্লার সাথে মোবাইল ফোনে বার বার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সভাপতি দিনার বিশ্বাস জানান, আমার কোন নেতাকর্মী নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নে যায়নি। কাউকে ভয়ভীতি দেখায়নি। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পুর্ণ মিথ্যা।

এ বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ জানান, নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক হোসেন বিশ্বাসের কাছ থেকে একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এখন পর্যন্ত ইউনিয়নের দায়িত্ব পালনের জন্য কোন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হবে সেই চিঠি আমি এখনও পায়নি। ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের চিঠি পেলে তাকে এবং থানাকে অভিযোগপত্রটি ফরোয়ার্ডিং করে দেব। এরপর তারা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

শৈলকূপা থানার ওসি মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান একটা অফিস ভাঙ্গা তো ১৫মিনিটের ব্যাপার। প্রার্থী পুলিশের অযথা দোষারোপ করছেন। এটা ঠিক করছেন না। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। বর্তমানে এলাকার পুলিশের নিয়ন্ত্রণে।

উল্লেখ্য, ইউপি নির্বাচনে ঝিনাইদহের শৈলকুপা,সদর ও কালীগঞ্জ উপজেলায় মোট ৮ জন প্রাণ হারিয়েছে। এরমধ্যে সারুটিয়া ৫জন ও বগুড়া ১জন এবং ফুরসন্দি ১ জন ও কাষ্টভাঙ্গা ১জন। এছাড়া অসংখ্য আহত ও পঙ্গু হয়ে চিকিৎসারত অবস্থায় রয়েছে।

আরও পড়ুন


প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ের ৪ মাসেই জীবন প্রদীপ নিভে গেল মেঘলার

news24bd.tv এসএম