দেশে এখন আর না খেয়ে কেউ মারা যায় না : কৃষিমন্ত্রী

ফাইল ছবি

দেশে এখন আর না খেয়ে কেউ মারা যায় না : কৃষিমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক

জনগণের আয় বৃদ্ধি ও জীবনমানের উন্নয়নের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা পূরণ করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশে এখন আর কোন মঙ্গা নাই। গ্রাম পর্যায়ে শহরের সুবিধা নেয়া হয়েছে।

আজ ২৯ জানুয়ারি শনিবার জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষ্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে রাজধানীর তেজগাঁও এফডিসিতে ‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে সরকারের পদক্ষেপ’ নিয়ে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর আওতায় প্রান্তিক মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। দেশে গত ১৩ বছরে কেউ না খেয়ে মারা যায় নি। করোনা মোকাবেলায় সরকার কৃষিখাতে আগামী জুন নাগাদ ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিবে। যা এর আগে ছিলো ৮ থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা।

করোনার এই সময় সারা পৃথিবীতে সারের দাম বাড়লেও সরকার আগের নির্ধারিত দামেই কৃষকদের সার সরবরাহ করছে। অভাব না থাকলে কেউ হাত পাতে না। কম্বল বা শাড়ির জন্য যেন এদেশে কেউ পদদলিত হয়ে মারা না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, সঠিকভাবে না জেনে অনেক সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বাজারে অভিযান চালায়। যথেষ্ট তথ্য না থাকায় অতীতে ভূল যন্ত্রের মাধ্যমে পরিমাপ করে প্রচুর পরিমাণ ফল ধ্বংস করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ফরমালিনবিরোধী ভুল অভিযানের কারণে ভবিষ্যতে কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

তিনি বলেন, বাজারে যেসব ফল বিক্রি হয় তার মধ্যে ক্ষতিকারক ফরমালিনের তেমন কোন প্রভাব নেই। তাই করোনার এই অতিমারির সময় এখন প্রচার প্রচারনা বাড়িয়ে ফরমালিনের ভয় কাটিয়ে মানুষকে বেশি করে ফল ও শাকসবজি খাওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা উচিত।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে হাসান আহমেদ বলেন বাজারে বিক্রিত ১৫টি দেশি মাছের মধ্যে ৭৩ শতাংশ মাছে মাইক্রোপ্লাস্টিক বা প্লাস্টিকের ক্ষুদ্রকণা রয়েছে। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠতে পারে। পেটে প্লাস্টিকের কণা পাওয়া মাছগুলো হলো রুই, তেলাপিয়া, কই, কালিবাউশ, বেলে, টেংরা, পাবদা, পুঁটি, শিং, টাটকিনি, বাইন, বাটা, মেনি ও বাছা। আমরা প্রতিদিন যে কাপে চা পান করছি, যে গ্লাসে পানি পান করছি, যে প্লেটে খাবার খাচ্ছি তা কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত সেটা আমাদের ভাবতে হবে।

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পক্ষ থেকে ১০ দফা সুপারিশ করা হয়। সুপারিশসমূহ হলো-

১। কৃষি উৎপাদনে সঠিক জ্ঞান, দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি উপযুক্ত কৃষি উপকরণের যোগান বাড়ানো।

২। নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কর্মরত প্রতিষ্ঠানসমূহকে একই ছাতার নিচে নিয়ে আসা।

৩। খাদ্যপন্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও বিপণন ব্যবস্থায় খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলার প্রতি যথাযথ নজরদারী নিশ্চিত করা।

৪। খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণকারী ব্যক্তির যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে বিশেষ আদালতে খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণকারীদের বিচার করা।

৫। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে নিশ্চিত হয়ে দোষীদের জরিমানা করা বা পণ্যদ্রব্য ধ্বংস করা।

৬। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে সরকারি-বেসরকারি গবেষণা ও বিনিয়োগ বাড়িয়ে খাদ্য ও কৃষিপণ্য সংরক্ষণে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আধুনিক মানসম্পন্ন ষ্টোর নির্মাণ করা।

৭। কৃষিতে রাসায়নিক সার, ওষুধের পরিবর্তে জৈব সারের মাধ্যমে কৃষিকাজে উৎসাহিত করা ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা।

৮। খাদ্যপণ্যে ক্ষতিকর রং ও প্লাস্টিকের প্যাকেট ব্যবহার বন্ধ করে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

৯। স্থানীয় সরকারকে সম্পৃক্ত করে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে কমিউনিটি ভিত্তিক সামাজিক জাগরণ গড়ে তোলা।

১০। নিরাপদ খাদ্য সংক্রান্ত আইনের প্রয়োগ যথাযথভাবে নিশ্চিত করা।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, সরকার নিরাপদ খাদ্য সংক্রান্ত আইনের বাস্তবায়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও এর কর্মকান্ড সম্প্রসারণেরর মাধ্যমে সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ করা হবে।

আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের খাদ্যপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে সর্বচ্চ গুণগত মান রক্ষায় সরকার সচেষ্ট। একসময় চিংড়ির মধ্যে তারকাটা ঢুকিয়ে ওজন বাড়িয়ে রপ্তানি করা হতো। যা ছিলো লজ্জাজনক। বর্তমানে ল্যাবে পরীক্ষার মাধ্যমে গুণগতমান নিশ্চিত করে রপ্তানি করা হচ্ছে। অনেক সময় যথাযথ তথ্যের অভাব ও পেশাগত অদক্ষতার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাজারে অযাচিত হস্তক্ষেপ করে। বর্তমানে খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষাকে সমান গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। নাগরিক সমাজের সম্পৃক্ততা ও গণমাধ্যমের ইতিবাচক প্রচারণা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে পরিস্থিতি উত্তরণে সহায়ক হবে।

জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত উক্ত প্রতিযোগিতায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ড. এস এম মোর্শেদ, মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ, সাংবাদিক সবুজ ইউনুস ও সাংবাদিক শেখ নাজমুল হক সৈকত।

news24bd.tv/এমি-জান্নাত