লেগুনার হেলপার সেজে যেভাবে হত্যাকারীকে ধরলেন এসআই

এসআই বিলাল আল আজাদ

লেগুনার হেলপার সেজে যেভাবে হত্যাকারীকে ধরলেন এসআই

অনলাইন ডেস্ক

গত ২২ জানুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা সংলগ্ন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রহস্য উদঘাটনে তদন্তে নেমে প্রথমে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তারা। ফুটেজে দেখা যায় একটি লেগুনা থেকে ওই ব্যক্তিকে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

তবে সিসিটিভির ফুটেজে ওই ব্যক্তিকে ফেলে দেওয়া লেগুনার নম্বর প্লেট দেখা যাচ্ছিলো না।

শুধুমাত্র এই হত্যার একটি ক্লু ছিল তা হল- লেগুনার পা-দানি ছিল লাল রঙয়ের। সেই লেগুনা আর হত্যাকারীদের খুঁজতে লেগুনায় হেলপারি শুরু করেন যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিলাল আল আজাদ।

এসআই বিলাল আল আজাদ জানান, পূর্ব পরিচিত লেগুনাস্ট্যান্ডের এক লাইনম্যানের মাধ্যমে পরিচয় গোপন রেখে হেলপারি শুরু করি। কখনো স্ট্যান্ডে স্ট্যান্ডে চাকরি খোঁজার নামে খুঁজতে থাকেন সেই লাল রঙের পা-দানির লেগুনাটি।

এভাবে বিভিন্ন স্ট্যান্ডে অন্তত ৩০০ লেগুনা যাচাই করেও কাঙ্ক্ষিত লেগুনা খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

লাল পা-দানির লেগুনা না পেয়ে যাত্রাবাড়ী স্ট্যান্ডে গিয়ে নিজেই লেগুনা চালানোর আগ্রহের কথা জানান পরিচয় গোপন রাখা সেই এসআই। অন্য চালকদের কাছে জানতে চান, লাইনে কোনো লেগুনা বসে আছে কি-না। শেষ পর্যন্ত একজন জানান, একটি লেগুনা নষ্ট হয়ে কদমতলীর একটি গ্যারেজে পড়ে আছে। সেটি মেরামত করে চালানো যাবে। কারণ এর চালক অসুস্থ হয়ে গ্রামে চলে গেছেন। শেষ পর্যন্ত কদমতলীর সেই গ্যারেজে গিয়ে সন্ধান মেলে সেই লাল পা-দানির লেগুনা।

এসআই আরও বলেন, কদমতলীর সেই গ্যারেজে গিয়ে জানতে পারি ২২ জানুয়ারি রাতে লেগুনাটি নিয়েছিলেন মঞ্জুর নামে এক চালক আর হেলপার ছিলেন আবদুর রহমান। দুইজনের নাম জানলেও তাদের কোনো মোবাইল নম্বর বা বাসার ঠিকানা পাওয়া যায়নি।  

এরপর এসআই হেলপার সেজে অন্য সহকর্মীদের মাধ্যমে মঞ্জুর ড্রাইভারকে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে জানতে পারেন, মঞ্জুরের হেলপার রহমান এখন বাসে হেলপারি করেন। শেষ পর্যন্ত রহমানকে পাওয়া গেলেও মঞ্জুরকে পাওয়া যাচ্ছিল না।

রহমানকে নজরদারিতে রেখে খোঁজা হচ্ছিল মঞ্জুরকে। এরপর সাইনবোর্ড স্ট্যান্ডে কাকতালীয়ভাবেই পাওয়া যায় মঞ্জুরকে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় রিপন আর রুবেল নামে আরও দুইজনকে।

২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত পরিচয় লুকিয়ে হেলপারি করে রহস্য উদঘাটন করা এসআই বিলাল আল আজাদ জানান, ফ্লাইওভারের ওপর সেই মরদেহটি ছিল মাছ বিক্রেতা মহির উদ্দিনের। তাকে সাদ্দাম মার্কেট এলাকা থেকে লেগুনায় তুলে ওই চারজন তার কাছ থেকে পাঁচ হাজার ৯০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর তাকে ফ্লাইওভারে চলন্ত গাড়ি থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়।

যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার চক্রটি রাতের বেলা লোকজনকে লেগুনায় তুলে সবকিছু কেড়ে নিত। এরপর চোখে মলম বা মরিচের গুঁড়া লাগিয়ে ফেলে দিত।

আরও পড়ুন


নানককে বুঝিয়ে দিতাম ঘুঘুর ফাঁদ কোথায় আছে : তৈমূর

news24bd.tv এসএম