স্বামীর গলা কেটে লাশের পাশেই নববধূকে নির্যাতন

নববধূকে মৃত স্বামীর লাশের পাশেই নিযার্তন করে তারা

স্বামীর গলা কেটে লাশের পাশেই নববধূকে নির্যাতন

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক:

মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের চোখে এখন শুধুই বিভিষিকার চিত্র। চোখের সামনেই টানতে টানতে নিয়ে গেছে সদ্য যৌবনে পা দেওয়া মেয়েটিকে। পরিবারের পুরুষ সদস্যগুলোকে হত্যা করা হয়েছে সামনেই। কাউকে পুড়িয়ে, কাউকে গলা কেটে, কাউকে আবার গুলি করে।

নির্যাতন করা হয়েছে নারী সদস্যদের। লাখো বিধবার বুক ফাটা আর্তনাদ এখন টেকনাফের বাতাস ভারী করে তুলেছে। হাতে মেহেদির রঙ না মুছতেই বিধবা হওয়া তেমনই এক নারী জয়নাব (১৮) দিলেন মিয়ানমারের সেনাদের লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা। জানালেন কীভাবে তার চোখের সামনেই হত্যা করা হয়েছে তার স্বামী ইলিয়াছকে।

বিয়ের ১৪ দিনের মাথায় নিজের চোখের সামনে স্বামীকে নির্মমভাবে হত্যা করতে দেখেছেন জয়নাব। মনের কথাটিও বলার সুযোগ পাননি প্রাণপ্রিয় স্বামীকে। মিয়ানমারের আর্মিরা প্রথমে গুলি করে হত্যা করে ইলিয়াছকে। পরে কাটে গলা। এরপর স্বামীর লাশের সামনেই জয়নাবের ওপর চালায় অমানুষিক নির্যাতন। বলতে বলতে হু হু করে কেঁদে ওঠেন অসহায় এ নারী। তার কান্না যেন মুহূর্তে থামিয়ে দেয় আশপাশের সব কোলাহল।  প্রতি ফোঁটা চোখের পানিতে যেন হাহাকার আর হতাশার চিহ্ন। কিন্তু, কে দেবে তাকে শান্তনা? এখানকার সবারই কষ্ট প্রায় একই ধরণের।

উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎই চোখ আটকে যায় জয়নাবের দিকে। ফর্সা রঙের এক তরুণী। হাতে একটি ঝুড়ি। পায়ে কাদামাটি। চোখে মুখে হতাশা, ক্ষোভ আর ক্লান্তির ছাপ। পোশাকই বলে দিচ্ছে অনেক বড় ঝড় বয়ে গেছে তার ওপর দিয়ে। উখিয়ায় কুতুপালংয়ের ক্যাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন। সামনে এগিয়ে একটু কথা বলতেই কান্নার মাত্রা বেড়ে গেল কয়েকগুণ। কথা বলতে পারছেন না। গলা আটকে আসছে। আশে-পাশের লোকজন জানালেন তার সম্পর্কে। এ যেন নির্মমতার সর্বশেষ সিড়ি পার হওয়া এক রূপকথা।

এরমধ্যে দুয়েকজন পাওয়া গেল যারা জয়নাবকে কাছ থেকে চেনেন। জানালেন, মেয়েটির বিয়ে হয়েছিল মাত্র দুই সপ্তাহ আগে। নতুন সংসার। অনেক স্বপ্ন। এরই মধ্যে সব শেষ। মিয়ানমারের সেনারা তার সামনেই স্বামীকে হাত-পা বেঁধে গুলি করে হত্যা করেছে। গুলি করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। গলাও কেটে ফেলেছে জয়নাবের চোখের সামনে। তারপর নববধূকে মৃত স্বামীর লাশের পাশেই নিযার্তন করে তারা। একে একে অনেকে।

তরুণীটি একটু স্থির হতেই জানতে চাইলাম সেদিনের ঘটনা। ঘটনার বর্ননা দিয়ে তিনি জানান, সেদিন কয়েকজন অস্ত্রসহ এসে প্রথমে জ্বালিয়ে দেয় তাদের ঘর-বাড়ি। এরপর তার স্বামী মো. ইলিয়াছকে (২৫) বেঁধে টেনে নিয়ে যায় গাছের নিচে। তার চোখের সামনেই প্রথমে পায়ে, তারপর বুকে গুলি করলো সেনারা। এরপর এলো তার পালা। কয়েকজন আর্মি মিলে স্বামীর লাশের পাশেই নির্যাতন করলো তাকে।  

জয়নাবের সংসার মাত্র ১৪ দিনের। নতুন পৃথিবীটা সাজাতে চেয়েছিলেন নিজের মতো করে। তার সেই স্বপ্নের কথা বলতে চেয়েছিলেন স্বামীকে। কিন্তু তা আর হলো না বলা। এলাকা জুড়ে মিয়ানমার সেনাদের ভয়াবহ তান্ডব। চারিদিকে পুড়ছে ঘর। পুড়ছে মানুষ। পুড়ছে স্বপ্ন। পুড়ছে মানবতা। ভেবেছিলেন এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়তো থাকবে না বেশিদিন। তখন সুখে সংসার করা হবে। এমন ঘটনা তো আগেও ঘটেছে। আবার পরিস্থিতি ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু, মিয়ানমার যে এবার রোহিঙ্গা নিধনের চূড়ান্ত নীলনকশা করে মাঠে নেমেছে তা জয়নাব-ইলিয়াছের মাথাতেও ছিল না। এছাড়া নিজের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে যাবে কোথায়? কেন যাবে? তাই নিরবে অপেক্ষা করছিলেন পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার। শান্ত হয়েছে, তবে সহিংসতা আর তাণ্ডব নয়, শান্ত হয়েছে জয়নাবের প্রাণপ্রিয় স্বামীর হৃদস্পন্দন। সে আর কখনো আসবে না। আর বলা হবে না কেমন করে সংসারটি সাজাতে চেয়েছিল জয়নাব। আর কখনো প্রাণের মানুষটি বাইরে থেকে চুঁড়ি-ফিতা এনে নতুন বউকে ডাক দেবে না। জিজ্ঞাসা করবে না রান্না হয়েছে কিনা। স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে ঘুমের মধ্যেও হানা দিচ্ছে জয়নাবের।

সম্পর্কিত খবর