মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে মেয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়ায় তার পরিবারকে একঘরে করে মসজিদ কমিটি। সোমবার (২ ফেব্রুয়ারি) ভুক্তভোগী পরিবার এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ জানায়।
এই ঘটনায় নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে মসজিদ কমিটি। এ জন্য কমিটি দুঃখ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন কুলাউড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ভুক্তভোগী পরিবার ও গ্ৰামের মসজিদ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ইউএনও। এ সময় বৈঠকে কুলাউড়া থানার ওসি বিনয় ভূষণ দেব, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।
ইউএনও ফরহাদ চৌধুরী বলেন, দুই পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম। মসজিদ কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া ও সম্পাদক আমিন মিয়াও সেখানে ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, তবে তারা ভুল বুঝতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঝর্ণার বাবার কাছে। সেই সঙ্গে লিখিত দিয়েছেন যে ভবিষ্যতে আর এমন কিছু করবেন না। ঝর্ণার পরিবারও খুশি হয়েছেন। তারাও লিখিত দিয়েছেন যে তারা এখন খুশি।
উল্লেখ্য, গত ২৬ ডিসেম্বর উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান নুরুন্নাহার চৌধুরী ঝর্ণা। ২৭ ডিসেম্বর থেকে স্থানীয় একটি গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝর্ণাকে নিয়ে নানা কুৎসা রটান। ২৮ ডিসেম্বর ভাটেরাবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটি ঝর্ণার বাবা হাজি আবদুল হাই চৌধুরী গুলাবের বিরুদ্ধে সালিশ বৈঠক ডাকেন। তিনি অসুস্থ থাকায় বৈঠকে উপস্থিত হতে পারেননি। পরে পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া ও সম্পাদক আমিন মিয়ার নির্দেশে তাদের একঘরে করে দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে ঝর্ণা চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র থেকে জানান, কিছু অতি উৎসাহী মানুষ উচ্চশিক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্রে আসাকে কেন্দ্র করে মসজিদে আমাকে নিয়ে বিচার ডাকেন। আমার বাবাকে বিচারে উপস্থিত হতে বলেন। কিন্তু ৭০ বছর বয়সী আমার বাবা অসুস্থ থাকায় বিচারে না যাওয়ায় আমার পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া হয়েছে।
ঝর্ণা আরও বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি আমিন মিয়াকে জিজ্ঞাসা করি আমার বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? তিনি বলেন, আমি আমেরিকায় গিয়ে আমার এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী একজনকে বিয়ে করেছি। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তাছাড়া আমার বাবা কেন তাদের নির্দেশ মানেননি, তাই আমার পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি শামছুল ইসলাম মাখন ও সম্পাদক আমিন মিয়া বলেন, ঝর্ণার এমন চলাফেরা নিয়ে পঞ্চায়েতের লোকজন আমাদের চাপ দিতে থাকেন। আমরা কমিটির লোকজন তার বাবার কাছে বিষয়টি জানতে চাই। তিনি আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। তাই শুক্রবার পঞ্চায়েতের লোকজন মসজিদে বসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। আমরা তাদের সমাজচ্যুত করিনি। তিনি পঞ্চায়েতকে গুরুত্ব দেননি, তাই তিনি তার মতো করে চলবেন। আমরা আমাদের মতো চলব।
স্থানীয় ভাটেরা ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ এ কে এম নজরুল ইসলাম বলেন, ঝর্ণাকে নিয়ে যারা অপপ্রচার চালিয়েছে তাদের সতর্ক করে দিয়েছি। তার পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা দিতে খোঁজখবর রাখছি।
আরও পড়ুন
প্রকাশ্যে ঘুরছে আসামি, প্রশাসনের ভূমিকায় আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা
news24bd.tv এসএম