বঙ্গোপসাগরে ২৫ ট্রলার ডুবির ঘটনায় দুই জনের লাশ উদ্ধার, নিখোঁজ ২৭

২৭ জেলে এখনো নিখোঁজ

বঙ্গোপসাগরে ২৫ ট্রলার ডুবির ঘটনায় দুই জনের লাশ উদ্ধার, নিখোঁজ ২৭

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

ঝড়ের কবলে পড়ে সুন্দরবন উপকূলে বঙ্গোপসাগরের সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে ২৫ ফিসিং ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। ফিসিং ট্রলার ডুবির ঘটনায় ২৭ জেলে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২ জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

উদ্ধারকৃত দুই লাশের মধ্যে একজন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বগা গ্রামের আনোয়ার শেখের ছেলে আল মামুন শেখ (২৫) বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এখনো নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে কোস্টগার্ডের দুটি জাহাজসহ শতাধিক ফিশিং ট্রলার উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে।

নিখোঁজ জেলেদের বাড়ি বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলায়। নিখোঁজ জেলেদের মধ্যে ১০ জনের বাড়ি বাগেরহাটের কচুয়া ও রামপাল উপজেলায়।

শুক্রবার রাত ১০টার দিকে বঙ্গোপসাগরের দুবলার চর থেকে ৪৫ কিলোমিটার গভীর সাগরে মাছের খনি হিসেবে খ্যাত সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে ইলিশ ও সুন্দরবনের দুবলায় শুটকীর জন্য মাছ আহরণে থাকা এসব ফিশিং ট্রলার ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগ, দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপ ও উদ্ধার অভিযানে থাকা নিখোঁজ জেলেদের স্বজনেরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বগা জেলে পল্লীর ৮ জন ও রামপাল উপজেলায় ২ জন জেলে ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ থাকায় তাদের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা ফরেষ্ট ষ্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রহ্লাদ চন্দ্র রায় জানায়, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও গত নভেম্বর থেকে সুন্দরবনের দুবলার চরে শুরু হয়েছে শুঁটকি মাছ আহরণ মৌসুম। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দুবলার চরের অস্থায়ী শুঁটকি পল্লীতে সামুদ্রিক মাছ ধরতে আসেন প্রায় ৩০ হাজার জেলে। এসব জেলেরা দুবলাসহ আটটি চরে অস্থায়ী বসতি গড়ে তোলেন। সেখানে থেকেই তারা বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরেন। দুবলার জেরে পল্লীর ফিশিং ট্রলার ছাড়াও ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ আহরণে সুন্দরবন উপকূলের মাছের খনি হিসেবে খ্যাত সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে শত-শত ফিশিং ট্রলার মাছ আহরণে থাকে।

শুক্রবারও মাছ ধরার সময় হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে দুবলার চর ৪৫ কিলোমিটার গভীর সাগরে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অন্তত ২৫টি ফিসিং ট্রলার ডুবির খবর পাওয়া গেছে। ডুবে যাওয়া এসব ফিশিং ট্রলারের মধ্যে দুবলা জেরে পল্লীর ৮টি এবং তার পাশ্ববর্তী এলাকা আলোরকোল শুটকি পল্লীর আরও ১০টি ফিশিং ট্রলার রয়েছে। অন্য ফিশিং ট্রলারগুলো ইলিশ আহরণে সাগরে ছিল।

শনিবার বিকাল পর্যন্ত অন্য ট্রলারের সাহায্যে ১৫৪ জেলে ফিরে আসতে পারলেও এখনো ২৭ জেলে নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে কোস্টগার্ডের দুটি জাহাজসহ দুবলার ১০০ ট্রলার উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। বন বিভাগের এই কর্মকর্তা নিখোঁজদের মধ্যে বাগেরহাটের রামপালের দূর্গাপুর গ্রামের মো. ইদ্রিসের ছেলে শাহিনুর ও ইসলামাবাদ গ্রামের মো. ছোট্টোর ছেলে মোতাচ্ছিনের নাম পরিচয় জানাতে পেরেছেন।

এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় দুবলার চরের প্রায় দুই কোটি টাকার শুটকি মাছ নষ্ট হয়েছে বলেও জানিয়েছেন দুবলা ফরেষ্ট ক্যাম্পের ওসি প্রহ্লাদ চন্দ্র রায়।

বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য বন্দর কেবি ফিশারী ঘাটের আড়ৎদার মেসার্স ফাইভ ব্রাদার্স এন্ড সন্সের মৎস্য ব্যবসায়ী মো. আব্দুল বারিক জানান, শুক্রবার রাতে ঝড়ের কবলে পড়ে আমাদের আড়তের ৩টি ফিশিং ট্রলার ডুবে ১১ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।

এসব নিখোঁজ জেলেদের মধ্যে বাগেরহাটের কচুয়ার বগা গ্রামের আনিস সরদারের এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের ৭ জেলে, একই বগা গ্রামের ইলিয়াসের এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের ১ জেলে ও মঠবাড়িয়ার তুষখালীর হারুন মুন্সির এফবি জামিলা ট্রলারের ৩ জেলে রয়েছে।

নিখোঁজ এই ১১ জেলের মধ্যে এফবি জামিলা ট্রলারের ৩ জেলে আলমঙ্গীর সরদার (৪৫), ইসমাইল (২০) ও বাচ্চু’র (২৫) নাম জানাতে পেরেছের তিনি। তাদের বাড়ী পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার তুষখালীতে। নিখোঁজ অন্য ৮ জেলের বাড়ী বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বগা গ্রামে। উদ্ধার নিখোঁজ জেলেদের স্বজনের শুক্রবার মধ্যরাতে উদ্ধার অভিযান চালাতে সাগরে গেছেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে নিখোঁজ জেলেদের স্বজন ও সাগরে উদ্ধার উদ্ধার অভিযানে থাকা বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বগা গ্রামের জেলে মো. মোতালেব হোসেন বাবুল সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে দুই জেলের লাশ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, কিছুক্ষন আগে কচুয়া বগা গ্রামের আনিস সরদারের ডুবে যাওয়া এফবি মায়ের দোয়া ট্রলার থেকে আল মামুন শেখ (২৫) নামে জেরের লাশ উদ্ধার করে সুন্দরবনের দুবরার ভেদোরখালীতে নিয়ে আসা হয়েছে। হতভাগ্য আল মামুন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বগা গ্রামের আনোয়ার শেখের ছেলে। অন্যজন বাগেরহাটের রামপালের মোতাচ্ছিনের ফিশিং ট্রলারের এক জেলে। তিনি এই জেলের নাম পরিচয় জানাতে পারেনি। তবে, লাশ উদ্ধারের বিষয়টি সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে তাৎক্ষনিক ভাবে কোস্টগার্ড জানাতে পারেনি।

সুন্দরবনের দুবলা ফিশারম্যান গ্রæপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ সন্ধ্যায় জানান, শুক্রবার হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে দুবলা শুটকি পল্লীর ১৮টি ফিশিং ট্রলার ডুবে গেছে। এরমধ্যে দুবলায় ৮টি ও আলোরকোল শুটকী পল্লীর ১০টি ফিশিং ট্রলার রয়েছে। ভোর থেকেই দুবলা শুটকী পল্লীর মতাধিক ট্রলার নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে গভীর সমুদ্রে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এখনো দুবলা শুটকী পল্লীর ৩ জেলে নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও তাদের নাম পরিচয় জানাতে পারেননি এই মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা।

মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার লুৎফর রহমান জানান, বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে ভোর থেকে কোস্টগার্ড উদ্ধার চাালয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যার পর যতোক্ষন সমুদ্রে দেখা যায় ততক্ষণ কোস্টগার্ড উদ্ধার অভিযান চালাবে। রবিবার ভোর থেকে আবারো উদ্ধার অভিযান শুরু করবে কোস্টগার্ড।

আরও পড়ুন


প্রিয় কর্মস্থল থেকে অশ্রুসিক্ত বিদায় জানালেন সহকর্মীরা

news24bd.tv এসএম