দিনে যতটুকু পানি পান করবেন

প্রতীকী ছবি

দিনে যতটুকু পানি পান করবেন

সাবরিনা ফারিন প্রত্যাশা 

মানুষের দেহের মোট ওজনের ৬০-৭০ শতাংশ পানি। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে প্রায় ৪০ লিটারের মতো পানি থাকে। খাদ্য পরিপাক, পরিশোষণ, পরিবহন, বর্জ্য পদার্থ অপসারণ ও তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষার জন্য সঠিক মাত্রায় পানি পান করতে হয়। কম পানি পানে কোলেস্টেরল, সুগার ইত্যাদি বেড়ে  রক্তের তারল্য কমে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হতে পারে।

কতটুকু পানি পান?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক পানির চাহিদা প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৪৩ মিলি। আমাদের দেশে ৩৫ থেকে ৭৫ কেজি ওজনের ব্যক্তিদের  দৈনিক পানির চাহিদা দেড় থেকে সাড়ে তিন লিটার। এজন্য প্রতিদিন ৬-১৪ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত।

খাবারের কতক্ষণ পর?
ন্যাচারোপ্যাথির মতে, মূল খাবার শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে মুখ বা খাদ্যনালী থেকে খাবারকে একটু নামিয়ে দিতে ১০০ থেকে ১৫০ মি.লি. পানি পান করা দরকার।

খাবার পর পরই এর বেশি পানের দরকার নেই। ভালো হয়, আধা ঘন্টা বিরতি দিয়ে পানি পান করলে।  

পানি পানের উপযুক্ত সময় 
• ওয়াটার থেরাপি বা পানির সমন্বয় অনুসারে, সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে  খালি পেটে (ব্যক্তি বিশেষে) এক থেকে দেড় লিটার পানি পান করা উচিত।  
• এরপর ঘন্টা খানেক পর সকালের মূল খাবার ও দুপুরের মূল খাবারের ঠিক মাঝামাঝি সময়ে বা পুরো সময়টাকে দু’ভাগে ভাগ করে আধা লিটার থেকে এক লিটার পানি পান করুন।
• আবার দুপুরের মূল খাবার শেষ করে তিন ঘন্টা পর এক থেকে দেড় লিটার পানি পান করুন।  
• সকাল, দুপুর, বিকেল ও রাতের মূল খাবারের শুরু থেকে শেষ করা পর্যন্ত ১৫০-২৫০ মি.লি. পানি পান করা যাবে৷ এতে চার মূল খাবারে প্রায় আধা লিটার থেকে এক লিটার পরিমাণ হবে।
• সন্ধ্যার পর থেকে রাতে আর পানি পান না করাই ভালো। তবে ১০০ থেকে ২৫০ মি.লি. পর্যন্ত গরুর দুধ পান করা যেতে পারে।
• এছাড়া অন্য কোনো তরল পানীয় পান না করাই উচিত। এতে শরীর ও মন ভালো থাকবে, ঘুম ও ভালো হবে।
• এভাবে সময়মতো ও পরিমাণ নির্ধারণ করে ব্যক্তিবিশেষে মোট তিন থেকে পাঁচ লিটার পানি পান করবেন।  

ওয়াটার ইনটক্সিফিকেশন 
• অনেক বেশি পান করার কারণে ‘ওয়াটার ইনটক্সিফিকেশন’ হয়ে থাকে। একে ওয়াটার পয়েজিংও বলা হয়। অনেক বেশি পানি পান করলে রক্তে পানির পরিমাণ বেড়ে যায়। অতিরিক্ত পানি রক্তে ইলেকট্রোলাইটের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়, বিশেষ করে সোডিয়ামের।  
• অতিরিক্ত পানি পানের কারণে সোডিয়াম লেভেল কমে দেহ কোষের বাইরের পানি কোষের ভেতর চলে যায় এবং কোষের আকার বৃদ্ধি করে। এভাবে মস্তিষ্কের কোষের আকার বৃদ্ধি হওয়া শুরু হলে ভেতরে চাপ বৃদ্ধি পায়। তখন কিছু লক্ষণ যেমন : মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি, তন্দ্রাচ্ছন্নভাব, ভ্রম, দৈত দৃষ্টি ইত্যাদি ইত্যাদি দেখা দেয়।
•  একজন পূর্ণ বয়ষ্ক মানুষের কিডনি দিনে ২০-২৮ লিটার পানি শরীর থেকে বের করতে পারে। তবে ঘন্টায় ৮০০ মিলি থেকে ১ লিটারের বেশি পানি শরীর থেকে বের করতে পারে না।  
তাই কখনোই ঘন্টায় ৮০০ মিলি থেকে ১ লিটারের বেশি পানি খাওয়া উচিত নয়। ঘন্টায় ২ লিটারের বেশি পানি পান করলে ওয়াটার ইনটক্সিফিকেশনের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে।

পরামর্শ
• যাদের কিডনি রোগ আছে, যাদের হার্ট ও লাঞ্চে পানি জমে থাকে তারা পানি পানে ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করবেন অথবা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী পানি পান করবেন।
• কেমিক্যাল ব্যবহার করে নয়, পানিকে ফুটিয়ে ফিল্টারিং করে বা ছেঁকে বিশুদ্ধ করে পানি পান করুন।

লেখক : পুষ্টিবিদ ও ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট

 

www.news24bd.tv/এআর-কাবুল

সম্পর্কিত খবর