জন্মভূমি ফ্রান্সের বিপক্ষে আজ কী করবেন হিগুয়েইন?

জন্মভূমি ফ্রান্সের বিপক্ষে আজ কী করবেন হিগুয়েইন?

ক্রীড়া ডেস্ক

নিজ দেশের জার্সি গায়ে জড়ানো যে কোনো ফুটবলারের জন্যেই গর্বের ব্যাপার। মূলত জাতীয় দলের হয়ে খেলার পরেই আসে বিশ্বকাপে খেলার প্রশ্ন। কিন্তু শত কাঠখড় পুড়িয়ে অনেকেই বিশ্বমঞ্চ মাতানোর সুযোগ পান না। ।

সেদিক দিয়ে গঞ্জালো হিগুয়েইন একটু বেশিই ভাগ্যবান!

গায়ে চাপিয়েছেন ঐতিহ্যবাহী আর্জেন্টিনার আকাশি-নীল জার্সি। খেলেছেন তিনটি বিশ্বকাপও। কিন্তু এবার নিজ আদালতে নিজেকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হচ্ছে তাকে। কেননা, নিজ জন্মভূমি ফ্রান্সের বিপক্ষেই বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে নামছেন তিনি।

১৯৮৭ সালে ফ্রান্সের ব্রেস্ট শহরে জন্ম নেন গঞ্জালো হিগুয়েইন। তার বাবা জর্জ হিগুয়েইন ছিলেন তখনকার সময়কার আর্জেন্টিনার ভালো মানের সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার। ১৯৮১-৮৭ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব রিভার প্লেট ও বোকা জুনিয়র্সের পাশাপাশি সান লরেঞ্জোতে খেলেছেন সিনিয়র হিগু। ১৯৮৭ সালে চলে যান ফ্রান্সের স্টেড ব্রেস্টোইসে। ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর সেখানেই জন্ম নেন পিপা (গঞ্জালো হিগুয়েইনের ডাকনাম)।

হিগুয়েইনের মা ন্যান্সি জাকারিয়াস একজন চিত্রশিল্পী। অবসর সময়ে আঁকাআঁকি করেই পার করেছেন তিনি। ছেলে পিপার অনেকগুলো ছবি নিজ হাতেই এঁকেছেন তিনি।

ফ্রান্সের ব্রেস্ট শহরে জন্ম নিলেও এখানে পিপা ছিলেন মাত্র ১০ মাস। এই সময়টায় তার পক্ষে ফ্রেঞ্চ ভাষা শেখা সম্ভব হয়নি। তবে জন্মসূত্রে ফ্রান্সের নাগরিকত্ব পেয়ে যান ঠিকই।  

আর্জেন্টিনায় চলে আসার পর সেখানেই বড় হতে থাকেন। পেয়ে যান আর্জেন্টিনার নাগরিকত্ব সনদও। তারপরই হিগুয়েইনের জীবনে আসে কঠিনতম মুহূর্ত।

news24bd.tv

২০০৬ সালের ১০ নভেম্বর গ্রিসের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের জন্য ২৪ সদস্যের ফ্রেঞ্চ দল ঘোষণা করেন তৎকালীন কোচ রেমন্ড ডোমেনেখ। সেই দলে তিনি হিগুয়েইনকে রাখেন। হিগুয়েইন তখন রিভার প্লেটের হয়ে বিশ্ব মাতাচ্ছিলেন। এদিকে, ফ্রান্সও তখন চাচ্ছিল ১৮ বছরের তরুণকে দ্রুতই তাদের জার্সি চাপাতে। কিন্তু ডোমেনেখকে অবাক করে দেন পিপা।

ফ্রান্স জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ হেলায় ফিরিয়ে দেন তিনি। এটাতে বেশ হতবম্ব হয়ে পড়েন ডোমেনেখ। তখন এক প্রতিক্রিয়ায় ডোমেনেখ বলেছিলেন, ‘আমি তার সিদ্ধান্তে  হতবাক। তবে তার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। প্রত্যেক প্রবাসী ফ্রেঞ্চ খেলোয়াড়ই যোগ্যতা রাখে দেশের হয়ে খেলার। সে অন্য দেশের হোক বা না হোক। ’

হিগুয়েইনের বাবা রেডিও দেল প্লাতাতে সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘আর্জেন্টিনার জার্সি অন্য সবকিছুর থেকে বিশেষ কিছু তার জন্য। গঞ্জালো চাচ্ছে না এখান থেকে অন্য কোথাও যেতে। তার ভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। এখানকার সবকিছু তার অনেক পরিচিত। ’

ফ্রান্সের ডাক তো ফিরিয়ে দিলেন এবার আকাশি-সাদা জার্সি গায়ে চাপানোর সময়। ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনার অলিম্পিক স্কোয়াডে ডাক পান এই ফুটবলার। বিশ্বকাপে মাত্র তিনজন রয়েছেন যারা ভিন্ন দেশে জন্ম নিয়েও আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মাঠে নেমেছেন। পেদ্রো আরিকো সুয়ারেজ ও কন্সট্যান্টিনো উরবিয়েতা সোসার পর হিগুয়েইন হলেন সেই তৃতীয় জন।

সব অতীতকে পেছনে ফেলে আজ প্রথমবারের মতো নিজ জন্মভূমির বিপক্ষে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে চড়াবেন হিগুয়েইন। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত আশানরূপ পারফরমেন্স প্রদর্শন করতে না পারলেও জুভেন্টাস তারকার ওপর ভরসা রাখছেন কোচ।  

২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে তার গোলেই শেষ চারে পা রেখেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু এবার সমীকরণ ভিন্ন। নিজ জন্মভূমির বিপক্ষে হিগুয়েইন কি পারবেন জ্বলে উঠতে? এমন প্রশ্ন কোটি কোটি আর্জেন্টাইন ভক্তের মাঝে।  

অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর