চূড়ান্ত নারীমুক্তির জন্য তৈরি শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

চূড়ান্ত নারীমুক্তির জন্য তৈরি শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক

স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে একটি উন্নত-সম্মৃদ্ধ দেশের পথে রয়েছে বাংলাদেশ। এক সময়ের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র অপবাদ দূর করে উন্নয়নের মহাসড়কে আমাদের গতি এখন অপ্রতিরোধ্য।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতির পাশাপাশি সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে ঘটেছে অবিশ্বাস্য পরিবর্তন।

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নও ঘটেছে প্রশ্নাতীতভাবে।

কয়েক দশক আগেও বলতে গেলে ঘরবন্দি নারী এখন অর্থনীতি-রাজনীতির বলিষ্ঠ নিয়ন্ত্রক।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নভাবনার বড় অংশ জুড়ে রয়েছে নারীমুক্তি ও নারীর ক্ষমতায়ন। এ লক্ষ্যে শুরুতেই তিনি নারী শিক্ষার প্রসারের ওপর জোর দিয়েছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গত বছরের আগস্টের মাসিক পরিসংখ্যান বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

এই বয়সী নারীদের সাক্ষরতার হার ৭৩ শতাংশ।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সূচক বলছে, বাংলাদেশে লিঙ্গ সমতায় দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম স্থানে রয়েছে। অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ, শিক্ষা হার, স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে এই সূচক। এটি দেখাচ্ছে, সরকারের বাস্তবমুখী উদ্যোগ কীভাবে সারা দেশের নারীদের বহুমুখী দিক থেকে এগিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখছে।  

সবশেষ শ্রম জরিপের তথ্য বলছে, দেশের মোট কর্মজীবী নাগরিকের প্রায় ৩৮ শতাংশ নারী। শ্রমজীবী নারীর সিংহভাগ তৈরি পোশাক খাতে নিয়োজিত এছাড়া বড় একটি অংশ নিয়োজিত আছে কৃষি খাতেও।

গ্রামীণ কৃষিকাজের প্রায় ৪৬ শতাংশই করছেন নারীরা এবং তারা কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত ২১টি ধাপের মধ্যে ১৭টি ধাপে কাজ করেন। শুধু কৃষিখাত নয়, গ্রামীণ পরিবেশে নারীরা উদ্যোক্তার ভূমিকা নিতেও শুরু করেছেন। আর এক্ষেত্রে বিভিন্ন সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় সহায়তা দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার।  

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বহুমাত্রিক প্রকল্প গ্রহণ ও সেগুলো বাস্তবায়ন করছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন দূরদর্শী পদক্ষেপ তার আগের সরকারগুলোর জন্য ছিল অকল্পনীয়।  

গ্রামীণ ও প্রন্তিক নারীদের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপ এখানে তুলে ধরা যেতে পারে- 
নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে গঠিত জয়িতা ফাউন্ডেশনের অধীন ১৮০টি সমিতির মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের ১৪ হাজার ৯৬০ জন নারী উদ্যোক্তার পণ্য বাজারজাত করা হচ্ছে।  

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অধীন নিবন্ধিত মহিলা সমিতিভুক্ত দরিদ্র, দুস্থ ও অসহায় নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাদের তৈরি পোশাক/পণ্য সামগ্রী বিক্রির জন্য রাজস্ব বাজেটের আওতায় অধিদপ্তরের সদর কার্যালয়ে বিক্রয় ও প্রদর্শনী কেন্দ্র ‘অঙ্গনা’ পরিচালিত হচ্ছে।

আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের আওতায় ২০১৪-১৫ অর্থবছর হতে জুন/২০১৮ পর্যন্ত ৩৫ হাজার ৬৫০ জন নারীকে ৪৩ কোটি ৩৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

মাতৃত্বকালীন ভাতাপ্রাপ্ত মায়েদের জন্য ‘স্বপ্ন প্যাকেজ’ কর্মসূচির আওতায় ৫৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি জেলার ১০টি উপজেলায় ৭০০ জন উপকারভোগী মায়ের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিনসহ আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের আয়বর্ধক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার জন্য অধিদপ্তরের আওতায় নিবন্ধিত মহিলা সমিতিগুলোতে ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে জুন/২০১৮ পর্যন্ত ৩৯ কোটি ৪৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে দুস্থ অসহায় নারীদের মধ্যে ১০ হাজার ৭৪৩টি সেলাই মেশিন বিতরণ হয়েছে। দুস্থ ও শিশু কল্যাণ তহবিল থেকে ৯৩৪ জনকে ১ কোটি ৫২ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।  

তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের স্বীকৃতি ও অনুপ্রেরণাদানের জন্য ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ কর্মসূচির মাধ্যমে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে উপজেলা, জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে নির্বাচিত ১৮৫ জন নারীকে সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে।  

স্বল্প ব্যয়ে আবাসন সুবিধা প্রদানে কর্মজীবী নারীদের জন্য ঢাকা শহরে চারটি, রাজশাহী, খুলনা, যশোর এবং চট্টগ্রামে একটি করে মোট আটটি ১ হাজার ৬০৬ আসন বিশিষ্ট কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল পরিচালিত হচ্ছে। গার্মেন্টসে কর্মরত নারীদের স্বল্প ব্যয়ে আবাসন সুবিধা প্রদানের জন্য বড় আশুলিয়া, সাভার, ঢাকায় ৭৪৪ আসনের ১২তলা হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে শিশুদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র সুবিধা রয়েছে।

কর্মজীবী মায়ের সন্তানদের জন্য ঢাকা শহরে ২৫টি বিভাগীয় শহরে পাঁচটি এবং জেলা শহরে ১৩টিসহ মোট ৪৩টি ডে-কেয়ার সেন্টার চালু রয়েছে। গার্মেন্টসে কর্মরত নারীদের সন্তানের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের প্রতিটিতে ৩০ আসনের ১৫টি ডে-কেয়ার সেন্টার চালু রয়েছে।

নারীর উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ৩৩ লাখ ৪৩ হাজার নারীকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বর্তমান সরকার।  

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির উপকারভোগী ৪৮ লাখ ৮৬ হাজার ৪৮২ জন নারীকে পুষ্টি, মা ও শিশুর মৃত্যুহার হ্রাস, মাতৃদুগ্ধ পানের হার বৃদ্ধি, ইপিআই, প্রসব ও প্রসবোত্তর সেবার গুরুত্ব ও পরিবার পরিকল্পনা এবং আয়বর্ধক ও সামাজিক সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।  

৮ হাজার দুস্থ ও অসহায় নারীকে ব্যবসা পরিচালনার জন্য এককালীন ১৫ হাজার টাকা অনুদানসহ প্রশিক্ষণ দিয়েছে সরকার। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের জাতীয় মহিলা প্রশিক্ষণ একাডেমি মোট ১ লাখ ৮৪ হাজার নারীকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং আবাসিক ও অনাবাসিক বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণসহ অধিদপ্তরের অধীন নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবী মহিলা সমিতির নেতাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দিয়েছে।  

এছাড়া অনগ্রসর, বেকার নারীদের আত্ম-কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সেলাই ও এমব্রয়ডারি, ব্লক- বাটিক, চামড়াজাত শিল্প এবং খাদ্য প্রস্তুত ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ইত্যাদি বিষয়ে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫২ হাজার ১০৩ জন নারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

প্রান্তিক পর্যায় ছাড়াও সামগ্রিকভাবে নারীর উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।  

প্রশাসনসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরে বেড়েছে নারীর অংশগ্রহণ। গত বছরের মার্চের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে তখন সচিব ও সচিব পদমর্যাদার ৭৭ জন কর্মকর্তার মধ্যে নারী ছিলেন ১০ জন, ৫১১ জন অতিরিক্ত সচিবের মধ্যে নারী ৮৩ জন, ৬৩৬ জন যুগ্ম-সচিবের মধ্যে নারী ৮১ জন, ৬৯৫ উপসচিবের মধ্যে নারী ৩৪৯ জন, এক হাজার ৫৪৯ জন সিনিয়র সহকারী সচিবের মধ্যে নারী ৪৫৪ জন এবং এক হাজার ৫২৮ জন সহকারী সচিবের মধ্যে নারী ছিলেন ৪৭২ জন। দেশের ৬৪ জেলায় জেলা প্রশাসক পদে ছিলেন ১০ নারী।

১৯৭৪ সালে সাত জন নারী উপপরিদর্শক (এসআই) ও সাত জন নারী কনস্টেবল নিয়োগের মাধ্যমে পুলিশ বিভাগে নারীরা অন্তর্ভুক্ত হন। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত নারীর সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপার পদেও নারীরা দায়িত্বপালন করছেন।  

যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে গত বছর ‘উইমেনস ক্লাইমেট লিডারশিপ ইভেন্ট- কপ২৬: উইমেন অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান ভুক্তভোগী হিসেবে নারীরা এই ঝুঁকি মোকাবিলায় বর্ধিত অংশীদারত্বের দাবিদার এবং তাদের ক্ষমতায়নের জন্য বিশেষ করে স্থিতিস্থাপকতা উন্নয়নে আরও সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। ’

বিশ্বে নারীরা সাধারণত সম্পদের সমান অধিকার পায় না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সমাজে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই এবং তারা প্রায়ই স্বল্প বেতনের বা অবৈতনিক চাকরি ও কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকেন। এ সব কারণে নারীর ওপর পুরুষের তুলনায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বেশি পড়ে। ’

ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার তথ্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাস্তবেই বাংলাদেশে সেটি ঘটে চলেছে।  

নারীর চূড়ান্ত স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়নের আমাদের এখনও অনেক পথ যেতে হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সামনে যে রূপকল্প উপহার দিয়েছেন তাতে বাংলাদেশের হারার কোনো সুযোগ নেই। অর্থনৈতিক, সামজিক মুক্তির পাশাপাশি আমরা নারীমুক্তি; সর্বোপরি মানব মুক্তি ঘটানোর লড়াইয়ের জন্য এখন পুরোপুরি তৈরি।  

লেখক: সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি, নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম  

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর