মুখ খুললেন সু চি: 'মিয়ানমার আন্তর্জাতিক তদন্তের ভয় পায় না'

রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রথমবার ভাষণ দিলেন অং সান সু চি

মুখ খুললেন সু চি: 'মিয়ানমার আন্তর্জাতিক তদন্তের ভয় পায় না'

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

অবশেষে রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরবতা ভেঙে নিজের দৃষ্টিভঙ্গির জানান দিলেন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি। রোহিঙ্গা নির্যাতন প্রসঙ্গে আজ মঙ্গলবার টেলিভিশন ভাষণে সু চি কঠোর সুরে বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যবেক্ষণ ও তদন্তকে মিয়ানমার ভয় পায় না। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে নৃশংসতার অভিযোগগুলি তার সরকার এখনো মূল্যায়ন করছে।

মিয়ানমারের কয়েকটি সেনা ছাউনিতে হামলার প্রেক্ষিতে গত আগস্টের ২৫ তারিখ থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে দেশটির সেনাবাহিনী ও মগরা।

জ্বালিতে দেওয়া হয় শত শত বাড়িঘর। গুলি করে, গলা কেটে, জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয় রাখাইনে শত শত বছর ধরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের। ধর্ষণ করা হয় নারীদের। নির্যাতনের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা।
 জাতিসংঘ এ ঘটনাকে 'জাতিগত নিমূল' বলে আখ্যায়িত করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সহিংসতা বন্ধে নোবেল লরিয়েট সু চিকে উদ্দেশ করে নিজেদের উদ্বেগ জানিয়েছেন নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ডেসমন্ড টুটু, মালালা ইউসুফজাই প্রমুখ।  

রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রথমবার দেওয়া বক্তব্যে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর সু চি বলেন, আমি জানি রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন রাখাইনে। তবে মিয়ানমারের একজন সচেতন ও দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে আমি বলতে চাই, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক তদন্ত ভয় পায় না। আমরাও এ ব্যাপারে উদ্বিঘ্ন। আমরা চাই এই ঘটনার পেছনের প্রকৃত কারণ কী তা জানতে। অভিযোগ আছে, পাল্টা অভিযোগও আছে। দুই পক্ষ থেকেই শুনতে হবে। যেসব অভিযোগ আসছে তা শতভাগ তথ্যনির্ভর সে ব্যাপারে আমাদের নিশ্চিত হবে।

সু চি দাবি করেন, সহিংসতার কারণে অধিকাংশ রোহিঙ্গা গ্রাম  ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে তা ঠিক নয়। তিনি কূটনীতিকদের তা পরিদর্শনের আহ্বান জানান। হত্যা ও বাড়ি ঘরে আগুন জ্বালানোর যে অভিযোগ মিয়ানমারের সেনাদের বিরুদ্ধে, সু চি তা এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ইতোমধ্যে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব নেতারা মিয়ানমারে আসুন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করুন, দেখুন কেন রোহিঙ্গারা পালাচ্ছে।

আজ রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের নাইপিদো-তে দেওয়া ভাষণে সু চি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গারা পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে। তবে সরকার শান্তি বজায় রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

এদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, সু চির বক্তব্যে মনে হচ্ছে রাখাইনে নারকীয় এই সহিংসতার সময় তার সরকার ও নেতারা তাদের মাথা বালুর মধ্যে ঢুকিয়ে রেখেছিল, এ কারণে কিছু দেখতে পায়নি, শুনতে পায়নি।  

অ্যামনেস্টির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক জেমস গোমেজ বলেছেন, সু চি বলছেন তারা আন্তর্জাতিক তদন্তকে ভয় পায় না। সত্যিই যদি তাদের কিছু গোপন করার না থাকে তাহলে তাদের উচিত জাতিসংঘের তদন্ত দলকে সেখানে ঢোকার অনুমতি দেওয়া। একইসঙ্গে অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনকেও সেখানে যাওয়ার ও সকল স্থানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া উচিত।

এদিকে ৩০ মিনিটের টেলিভিশন ভাষণে সু চি বলেন, আমি সহিংসতার শিকার সাধারণ মানুষগুলোকে নিয়ে খুবই উদ্বিঘ্ন। আমরা শুনেছি অনেক মুসলমান বর্ডার পার হয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে। কেন তারা যাচ্ছে তা আমরা বের করতে চাই।  

সু চি বলেন, 'তার সরকার যে কোন মুহূর্তে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা 'শরণার্থীদের' ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত। '

তবে এখনি এটা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না যে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যাওয়া কী পরিমান রোহিঙ্গা  সরকারের যাচাই-বাছাই পদ্ধতিতে টিকতে পারবে; যেহেতু তাদের অধিকাংশই মিয়ানমারের নাগরিক বলে স্বীকৃত নয়।


সু চি বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না শান্তি চাই। সীমান্ত সুরক্ষায় বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে চাই। বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক বাড়াতে চাই।  সকল সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিজ্ঞ। অনেক মুসলমানের বাংলাদেশে চলে যাওয়ার ঘটনা উদ্বেগের। কেন তারা যাচ্ছে তা আমরাও জানতে চাই। সহিংসতা ও মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার তদন্ত হবে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

সম্পর্কিত খবর